golpoআড়ালে তুমি

আড়ালে তুমি পর্ব -(২২+২৩)

#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -(২২+২৩)

রাতে খেয়ে এসে ইনায়া ফোনের দিকে তাকাতে দেখে স্ক্রিনে সামিন আইয়াজ এর পাঠানো ম্যাসেজ।

“ম্যাম! খেয়েছেন?”

ইনায়া খেয়ে আসা মাত্রই এমন ম্যাসেজ দেখে বেশ চমকে যায়। রিপ্লাই দেয়,

“না”

সাথে সাথে ম্যাসেজ আসে,

“কেন? অনেক রাত হয়েছে তো। নাকি খেয়ে মিথ্যা বললেন ম্যাম?”

ইনায়া কোনো জবাব দেয় না।সামিনের সাথে কথা বললেই ইনায়ার কেমন অদ্ভুত মনমরা লাগে। মনে হয়ে সে কিছু একটা অন্যায় করছে। অনুতপ্ত বোধ করে আবার নীলের জন্যে কষ্ট হয় ইনায়ার। মনে মনে ভাবলো,

-নীল ভাই নিজে ভুল করেছিল আর আমি রাগ করেছিলাম। উনি কি চাইলে পারতো না রাগ ভাঙ্গাতে? না হয় একটু ইগ্নোর করেছিলাম,এই জন্যে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন? একটা বার খোঁজ ও করবেন না?

এসব ভাবতে ভাবতে আবার নীলের আইডি তে ঢোকে। নীল নতুন একটি পোস্ট করেছে। গ্রে কালারের টিশার্ট আর অফ হোয়াইট কালারের প্যান্ট পড়ে,সিডনি অপেরা হাউসের সামনে কফির কাপ হাতে নিয়ে একটি সুন্দর ছবি পোস্ট করে। ইনায়া ছবিটা দেখে সাথে সাথে কেয়ার রিয়্যাক্ট দেয়। কমেন্ট করতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে হাত থেমে যায়। এরপর গ্যালারিতে গিয়ে মুখ ঢাকা একটা পিক নিয়ে নিজের আইডি তে পোস্ট করে। নীলের দেওয়া ক্যাপশন টা কপি করে নিজেও ক্যাপশন দিল,

“lost in wanderlust”

ইনায়ার দেওয়া ক্যাপশনের সাথে তার ছবির কোনোই মিল নেই। বিষয়টি বুঝে নিজেকে গাঁধী বলে একবার সম্বোধন করল সে। এদিকে সামিন ম্যাসেজ দিয়েই চলেছে।

ছবিতে কমেন্ট ও করে গিয়ে,

“আপনার রূপের আগুনে গরম তো বেড়েই চলেছে ম্যাম”

ইনায়ার সামনে কমেন্টটা আসতে ভীষন লজ্জা লাগে তার। সামিনের ইনবক্সে গিয়ে ম্যাসেজ করে,

“আপনি কি সারাদিন ফোন নিয়েই পড়ে থাকেন?”

“নাহ্,যখন আপনি আসেন আমিও তখন আসি।”

“আপনি কীভাবে জানেন যে আমি কখন আসি?”

“উমমমম্ ঐটা সিক্রেট। দেখা করলে বলতে পারি..”

“দেখেন ভাই,আমি বিবাহিত”

“আপত্তি নেই তো তাতে আমার”

ইনায়া বেশ অবাক হয়।

বলে,

-ভারী অদ্ভুত লোক তো! বিবাহিত শুনেও সমস্যা নেই বলে কেন! পরকীয়া করতে চায় নাকি ব্যাটা খারাপ!

ইনায়ার নীরবতার মাঝে ওপাশ থেকে আবার ম্যাসেজ আসে,

“ছবিটা ডিলেট করলেন কেন ম্যাম?”

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকায়।

-ছবি ডিলেট করলাম মানে কী? এই লোক কিছু খেয়ে টেয়ে ম্যাসেজ করে নাকি!

বলতে বলতে সামিরাকে কল দেয় ইনায়া। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-এই! তোর ঐ ভাই পাগ*ল নাকি!

ইনায়ার হঠাৎ এমন প্রশ্নে সামিরা বেশ আতঙ্কিত হয়ে যায়। বলে,

-এসব বলিস না দোস্ত। আমার ভাই খাঁটি সোনা। তোর কী সমস্যা হয়েছে তাই বল….. শুধু ভাইকে নিয়ে কোনো কথা শুনবো না। আমার অকালমৃ*ত্যু ঘটে যেতে পারে না হয়।

-বাদ দে! ভাই ভাই করে এতো গুণগান করতে হবে না। জীবনেও নাম শুনলাম না। হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসলো এখন!

-বিদেশে ছিল। দশ বছর পরে দেশে ফিরেছে তো। তাই এখন থেকে শুনবি। তোদের বিয়ের পাকা কথা করে ফেলবো। নো চিন্তা। দোস্ত জাস্ট ইমাজিন…

-কী?

-তোর ভাই এর বউ আমি আর আমার ভাই এর বউ তুই।

-সে নিয়ে চিন্তা নেই,আমার ভাই এর বউ তোকেই বানাবো। কিন্তু আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলিস না। রাখছি…

-তাহলে কল দিলি কেন?

-আমার ছবিতে একটা কমেন্ট করে দে। আমি যে করতে বলেছি এটা আবার কমেন্টে লিখিস না।

সামিরা ফিক করে হেসে দেয়। বলে,

কমেন্ট করব যে,”তুই এতো করে কমেন্ট করতে বললি বলে করতে বাধ্য হলাম।” একটু অপেক্ষা কর এখনি করছি।

ইনায়া তাড়াহুড়ো করে বলল,

-খবরদার না,সবাই হাসবে…

ইনায়ার কথা থামিয়ে সামিরা বলে,

-কোন পিক? তোর তো কোনো পোস্টই নেই।

ইনায়া যেন আকাশ থেকে পড়ে। কোনো পোস্টই নাই এর মানে কি! দ্রুত সামিরার কল কেটে নিজে গিয়ে চেক করে।

আনমনে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,

-আশ্চর্য ! একটা পোস্টও নেই!

সামিরার আইডি হ্যাক হয়েছিল সেদিন যে,তেমন কিছু হলো নাতো আবার?

বিষয়টা ভাবতেই ঘাবড়ে যায় ইনায়া।

.

.

.

ইনায়ার প্রত্যেক পরীক্ষা চলাকালীন সামিন ম্যাসেজ দিয়েছে । সকালে একটা করে ম্যাসেজ রোজ,

“গুড মর্নিং মিস্”

দুপুরে একটা করে ম্যাসেজ রোজ,

“পরীক্ষা কেমন হলো ম্যাডাম”

আর রাতে একটা করে ম্যাসেজ,

“খেয়েছেন ম্যাম? আচ্ছা গুড নাইট”

আজ ইনায়ার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলো। এতোদিনের মতো আজও সামিন ম্যাসেজ পাঠিয়েছে,

“পরীক্ষা কেমন হলো?”

এতোদিন ম্যাসেজগুলো পড়ে রেখে দিলেও ইনায়া অনেকদিন পরে আজ রিপ্লাই দিল,

“আলহামদুলিল্লাহ”

“এতোদিন পর ম্যাম এর কথা বলতে ইচ্ছে হলো?”

“আপনি কেন আমার সাথে কথা বলেন তার কারণ আমি জানি না। তবে আপনার প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। নিজের সময় নষ্ট করবেন না।”

“আগ্রহ তৈরি করে নিব।”

“সব আগ্রহ আরেকজনে নিয়ে নিয়েছে। বৃথা চেষ্টা করবেন না।”

“ওকে রিলাক্স। তাহলে আমিও আর ইন্টারেস্ট দেখাবো না। এখন থেকে আমি আপনার শুধু বন্ধু।”

ইনায়া ম্যাসেজের জবাব দেয় না। সামিনের থেকে আবার ম্যাসেজ আসে,

“শুধু একটু আকটু কথা বললেই হয়”

“আচ্ছা”

“এখন কী করছেন ম্যাম?”

“রেডি হচ্ছি”

“কেন? কোথাও যাবেন?”

“বরিশাল,আমার নানুবাড়ি।”

সামিন এর আইডি থেকে আর ম্যাসেজ আসে না। ইনায়া কিছুক্ষণ পরে নেট অফ করে দেয়। পরীক্ষা দিয়ে আসার পর থেকেই বায়না শুরু করেছে বরিশাল যাবে। তাই কামরুল দেওয়ান বাধ্য হয়ে ইনায়াকে দিয়ে আসতে যাচ্ছে। সাথে আনায়াও যাবে। হঠাৎ এর উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বেশ তাড়াতাড়ি কাজ করতে হচ্ছে সবার। ইনায়া বাড়িতে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো,নীল ভাই নেই তার। তার উপর আবার রাগ করে কথাও বলছে না। এসব কিছুর থেকে দূরে থাকতে নানুবাড়ি যাওয়ার বিকল্প নেয়। ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী হয়ে তারা তিনজন বেড়িয়ে পরে। আনান দুই একবার ইনায়াকে মানা করেছিল। তবে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। আনানের কথা শোনার পাত্রী ইনায়া না। তাছাড়াও গত কাল থেকে আনানের মন মেজাজ ভালো নেই। সামিন আইয়াজ নামক আইডি টা পাচ্ছে না,আনঅ্যাভেইনঅ্যাবল লেখা আসছে। ইনায়ার পোস্টগুলো ও নেই যে সেখানে গিয়ে কমেন্ট থেকে আইডি টা পাবে। ইনায়ারা বেরিয়ে যেতেই আনান চিঠি লিখতে শুরু করে,

ইনু,

আমার কথা কবে শুনবি তুই? বউদের উচিত সবসময় তার স্বামীকে মান্য করা। আর তুই কিনা! কী দরকার ছিল বরিশাল যাওয়া? আমার একা ভালো লাগে না। এখন তোর পোস্ট করা ঐ গানটাই শুনবো। তোকে দেখার ইচ্ছে টা এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাকেও নিয়ে যেতে পারতি। এমনিও ভার্সিটি যেতে ভালো লাগে না। বউ এর দায়িত্ব নিতে না হলে পড়াশোনা কবেই ছেড়ে দিতাম। শুধু তোর জনজন্যেই সব আয়োজন।

সাবধানে থাকবি।

বরিশাল যাওয়ার লঞ্চের ভিআইপি কেবিন নেন কামরুল দেওয়ান। ইনায়ার মোশন সিকনেস থাকায় গাড়িতে সাধারণত জার্নি করেন না খুব দরকার ছাড়া।এই সময়ে প্লেনও সিডিউল অনুযায়ী নেই । কেবিনে বসে নেট অন করতেই দেখে সামিন ম্যাসেজ দিয়েছে,

“এইচএসসি পরীক্ষা তোমার। এর মধ্যে যাচ্ছো! যাই হোক না যাওয়া টা ভালো ছিল।”

ইনায়া ঝটপট করে লেখে,

“আপনার কথা ঠিক কিন্তু আমার কারো কথা শুনতে ভালো লাগে না। যা ইচ্ছে হবে তাই করতেই ভালোবাসি।

সামিনের থেকে আর কোনো জবাব পায়না ইনায়া।

.

.

.

.

বরিশাল জেলার সদরে আলেকান্দা গ্রামে ইনায়ার নানুবাড়ি। ইনায়া,আনায়া আর কামরুল দেওয়ান উপস্থিত হন মিষ্টি,ফল আর সাথে নদীর ফ্রেশ কয়েক পদের মাছ। ইনায়ার নানু আমেনা আক্তার এতোদিন পর নাতনিকে দেখে জড়িয়ে ধরেন। সেই সাথে মামাতো বোন সানজিদাও।

দুপুরে সকলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে কামরুল দেওয়ান বিদায় নেন। আগামীকাল তার ভার্সিটিতে যেতে হবে। কামরুল দেওয়ান যেতে ইনায়া,আনায়া আর সানজিদা বেড়িয়ে পরে ঘুরতে। গ্রামে এসে না ঘুরলে আর মজা নেই। গাছ থেকে নানা কলা কৌশলে আম পাড়ার সময় সানজিদা ইনায়াকে জিজ্ঞেস করে,

-নীল ভাইয়া কোথায়?

ইনায়া একটা আম খেতে খেতে বলে,

-তাকে দিয়ে কী দরকার?

-এমনিই।

-তার সাথে আমার কথা হয় না। কোনো খোঁজ জানি না আমি।

এরই মাঝে আনায়া এসে ইনায়াকে টেনে নিয়ে যায়। বরশির ছিপ ফেলে এখন মাছ ধরবে সে। পুকুর পাড়ের এক বৃদ্ধ দাদুর থেকে ইনায়া বরশি চাইলে তিনি ইনায়াকে বলেন,

-তুমি আয়েশার মাইয়্যা না?

ইনায়া অবাক হয়ে জবাব দিল,

-জ্বী।

-অনেক দিন পর তোমারে দেকলাম। ও মোর খোদা এএ মাইয়া কত বড় হইয়া গেচে। ওরে দেকচি হেই ছোড হালে। হরে পর আর দেহি নাই।

ইনায়ার শুনে সৌজন্যতার হাসি দেয়। এরপর আবদার করে বলল,

-আমার ছোট বোন মাছ ধরতে চায়,ওকে দেওয়া যাবে এই বড়শি টা?

বৃদ্ধ লোকটি সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে দেয় আনায়ার কাছে। অনু একটা ছোট কৈ মাছ পেয়ে অনেক খুশি হয়। ইনায়াকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে রাখে। সেখান থেকে চলে আসতে গেলে সে বৃদ্ধ লোকটি পুনরায় ইনায়াকে বললেন,

-ছেমড়ি বড় অইয়া গেচে,,, একহালে ওর মা’র নাহান হইচে।

ইনায়া হালকা পাতলা কথাটা বুঝে আবার হাসি দিলে তিনি বললেন,

-মোগ বাড়ি লও বেড়াইতে।

ইনায়া আর আনায়া বিদায় জানিয়ে চলে আসে। বাড়িতে এসে ইনায়া আনানের কাছে তাদের ছবিগুলো পাঠায়। সাথে ভয়েস ম্যাসেজ দেয়,

-ভাইয়া তুমি আসলে মজা হতো।

কিছুক্ষণ পরে আনানের থেকে ম্যাসেজ আসে,

-অপেক্ষা কর। তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।

(চলবে……)

#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -২৩

ইনায়া সারপ্রাইজের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠে।

আনানকে অনুরোধ করে বলে,

-প্লিজ ভাইয়া! বলো এক্ষুনি।

আনান একটা ভাব নিয়ে ইমোজি পাঠায়। সাথে একটা ভয়েস ম্যাসেজ,

-সময় হলে পেয়ে যাবি।

ইনায়ার এখন মেজাজ খারাপ লাগছে।আনানকে জ্বালানোর জন্য আনায়া পিকগুলো পাঠাতে বলেছিল। এখন উল্টো আনানই ওকে অর্ধেক কথা বলে রেখে দিল। আনানকে আর কোনো ম্যাসেজ দেয় না ইনায়া। তবে সামিনের আইডি টা একবার চেক করে। এখনো অফলাইন দেখাচ্ছে। ইনায়া নেট অফ করে ফোন রেখে দেয়। ছোট মামার মেয়ে সানজিদা আর ইনায়া প্রায় সম বয়সী। বড় মামার বড় মেয়ে শীলা। ছোট মেয়ে সম্পূর্ণা। আর ছোট মামার বড় ছেলের নাম রিফাত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি তে স্নাতক করছে। বয়সের দিক দিয়ে আনান আর রিফাত প্রায় কাছাকাছি।

ঘরের মধ্যে মুখ ভার করে বসে থাকা ইনায়াকে সানজিদা আর সম্পূর্ণা টেনে নিয়ে যায় উঠোনে । সেই সাথে আনায়াকেও নিয়ে যায়।

ইনায়া হকচকিয়ে প্রশ্ন করে,

-কী হয়েছে? টেনে নিয়ে এলি কেন?

সানজিদা ভ্রু ভাজ করে জবাব দেয়,

-এভাবে ঘরের ভেতর বসে থাকার জন্য এখানে এসেছিস?

ইনায়া মুখ ভেংচি কাটলো। সম্পূর্ণা আনায়ার কাছে গিয়ে বলে,

-আপু,চল কানামাছি খেলবো।

আনায়া সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। বলে ,

-ঠিক আছে,আমার চোখ বেঁধে দাও।

ইনায়া একবার আটকে বলে,

-পারবি তুই অনু? পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলে?

-আমি এতো ছোট না ইনুপু।

-ছোট বড় বলে কিছু নেই, অভ্যাস আর অভ্যস্ত থাকা বিষয়।

-উফফ্ চোখ বেঁধে দাও।

সানজিদা একটা কাপড় এনে আনায়ার চোখ বেঁধে দেয়। তারপর গোল করে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিয়ে সকলে একসাথে বলে,

-এই যে,এখানে।

-অনু,এই যে আমি।

-অনু আপু, ধরো আমায়।

আনায়া আশে পাশে হাতরে হাতরে খুঁজতে থাকে ওদের তিনজনকে। বেশ কিছুক্ষণ দৌঁড়া দৌড়ি করে অবশেষে একজনকে ধরেই বেশ খুশি হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো আনায়া। বললো,

-ধরেছি ধরেছি।

সম্পূর্ণা অনেক জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকলে সানজিদা তাকে থামিয়ে বলে,

-চোখ খোল অনু্।

অনু এক টানে পেঁচানো কাপড় খুলতেই দেখে রিফাত বিরক্তি প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আনায়া দ্রুত গতিতে কয়েক হাত পেছনে চলে আসে।

ইনায়ার পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে বলতে থাকে,

-আমায় আগে বললে না কেন ইনুপু? তোমার এই ভাই টাকে আমার অনেক ভয় লাগে।

-আমারও লাগে অনু,তাইতো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না।

আনায়া আর কিছু বলে না। ছোট থেকেই এই গম্ভীর রিফাতকে দেখে ওরা দুই বোনই ভয় পায়। এখন আবার ভার্সিটিতে গিয়ে রাজনীতিও করে। রিফাত বেশ বিরক্ত হয়ে স্থান ত্যাগ করে।

.

.

.

.

সন্ধ্যাবেলায় ইনায়া,আনায়া, সানজিদা, সম্পূর্ণা গোল হয়ে বসে আমেনা আক্তার কে ঘিরে। তাদের সকলের আবদার ভূতের গল্প শুনবে। সকল নাতনিদের সাথে বহুদিন পরে এক হলেন আমেনা আক্তার,বড় নাতনি শীলা একমাত্র শশুর বাড়ি তে। তিনি আনন্দিত কন্ঠে বলল,

-কোন কাহিনী শুনবে?

ইনায়া জবাব দেয়,

-সত্য ঘটনা বল কিছু।ভূতের অবশ্যই।

আমেনা আক্তার শুরু করেন বলা,

-আমাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকে যে জঙ্গলটা আছে সেখানে আগে শুধু বাঁশের ঝাড় ছিল। একদিন ভোর বেলা তোমার নানা ফজরের আযানের সময় নিজেকে সেখানে দেখতে পায়। তার সামনে পচে যাওয়া শরীরের একজনকে দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন সেখানে। এদিকে আমি ফজরের নামাজ পড়তে উঠেছি। পাশে দেখি তোমার নানা নেই। ভাবলাম ওযু করতে গিয়েছেন। তখন আবার শীতের সকাল ছিল। আমি ওযুখানার দিকে চাদর পেঁচিয়ে গেলাম। তবে সেখানে তোমার নানাভাইকে দেখিনি। একটু সামনে এগুতে আমার কাধে কেউ একজন আচমকা হাত রাখে।

আমেনা আক্তারের কথাটা বলা মাত্রই ইনায়া অনেক জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলো। দমকা হাওয়ায় দরজা বাড়ি খাচ্ছে বারেবারে। টিনের চালে আম পড়ার শব্দ। সেই সাথে ঝুম বৃষ্টি আর ঘুটঘুটে অন্ধকার। ইনায়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

-নানু,আমার কাঁধেও যেন কার হাত।

কথাটা বলেই ইনায়ার হাত পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আনায়া দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,

-আপু আমি…ভয় লাগছিল, অন্ধকার তো। তাই তোমার কাছাকাছি ধরে বসতে চেয়েছিলাম।

ইনায়া রেগে আনায়ার কন্ঠস্বর অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। তবে সে দৃষ্টি আনায়া দেখতে পারে না। আমেনা আক্তার সবাইকে শান্ত করে বলে,

-বাকিটা শুনতে হবে না।

ইনায়া তার নানুকে আটকে বলল,

-না না,এটা শেষ করো… কাল না হয় আরেকটা শুনব।

আমেনা আক্তার আবার জোড়া দিয়ে বসলেন। বললেন,

-আমার কাঁধে কারো হাত পড়তেই চমকে পেছনে তাকাই। প্রথমে ভেবেছিলাম তোমার নানাভাই। কিন্তু সে অন্য কেউ ছিল। সাদা চাদরে মুখ ঢাকা। আমি বেশ চমকে পেছনে সরে যাই। বিশাল লম্বা শরীর তার। বড় বড় দাড়ি। সে মুখ ঢেকে আমাকে ঐ জঙ্গলের দিকে ইশারা করে। তারপর আমি ভয় পেয়ে তোমার বড় মামাকে ডেকে নিয়ে সেদিকে যাই। তবে তাকে আর দেখি না। হঠাৎ ই উধাও। এরপর জঙ্গলের দিকে আগাতেই দেখি তোমার নানা অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।তাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসার পর জ্ঞান ফিরলে তোমার নানাভাই বলেন তার কিছুই মনে নেই। যখন তার হুঁশ ফিরেছিল তখন ফজরের আযান হচ্ছে। আর ভয়ানক কিছু দেখে জ্ঞান হারিয়েছিল।

-তারপর?

-তোমার নানা নিয়মিত নামাজ পড়তেন। তাই বড় কিছুই হয়নি। আর এই কাহিনী তো এখানেই শেষ।

ইনায়া আর আনায়া ভয়ে কাঁপছে। তবে সানজিদা আর সম্পূর্ণার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। ছোট থেকে বেশ অনেকবার এই গল্প শোনা হয়েছে তাদের। তাই ইনায়াকে ডেকে বলে,

-চল আম কুড়িয়ে আনি।

-এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে?

-এটাই তো মজা।

নেটের অবস্থা খুবই দূর্বল। ইনায়ার ফোনে একটি নোটিফিকেশন আসতে দেখে সামিন আইয়াজ নামক আইডি থেকে ম্যাসেজ এসেছে। প্রায় ঘন্টা চারেক পরে ম্যাসেজ পেয়ে ইনায়া আগ্রহের সাথে তার দেখে। ম্যাসেজ পাঠিয়েছে,

“আপনার নানুবাড়ির ওদিকের আবহাওয়া কেমন ম্যাম?”

ইনায়া কিছুক্ষণ ভেবে রিপ্লাই দেয়,

“ঝড় বৃষ্টি”

“ভিজবেন নাকি? “

“বুঝলেন কী করে? আম কুড়াতে যাব সবাই”

সামিন ম্যাসেজ সিন করে না। ইনায়া,আনায়া প্রস্তুত হয় আম কুড়াতে যাওয়ার জন্য। তখনি ইনায়ার ফোনে কল আসে। আনান কল দিয়েছে। ফোন ধরে ইনায়া কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করে। তবে নেটের সমস্যার কারণে কথা বেঁধে বেঁধে যায়। ইনায়া জানালার কাছে গিয়ে আবার বলে,

-হ্যালো … ভাইয়া …

-ইনু.. শুনতে পাচ্ছিস?

-ভাইয়া বলো।

-বৃষ্টিতে ভিজিস না।

-তোমায় কে বলল?

-ভিজতে মানা করলাম সাবধান করতে। ঘরের মধ্যেই থাক।

-কী হয়েছে বলবে তো? কে বলল?

-কাজ আছে অনেক,রাখলাম। আর আম খেতে হবে না,সকালে খাবি যা খাওয়ার।

আনান কল কেটে দেয়। ইনায়া বেশ অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আনান হঠাৎ এই কথা বলে সাবধান করল কেন!

.

.

.

.

সকাল সকাল গত রাতে ঝড় বৃষ্টি তে পড়ে থাকা আম তোলে সকলে মিলে। সে সময়ে সানজিদা প্রস্তাব দেয়,

-চল আজকে আমরা পিকনিক করি।

বাকিরা একজোটে বলে,

-কখন?

-এই বিকালে। আমরা সব বোনেরা থাকবো। শিলা আপু আসবে।

-ওয়াও! এবার পরিপূর্ণ হবে।

-অবশ্যই আর আমরা সবাই শাড়ি পড়ব।

আনায়া ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-আমরা শাড়ি কোথায় পাব ইনুপু?

-নানু মামির আছে,নো টেনসন অনু!

পিকনিক প্লান করতে করতে ইনায়ার কাছে সামনের থেকে আবার ম্যাসেজ আসে।

“কী করছেন ম্যাম?”

“এইতো কাজিনদের সাথে একটা প্লান করছিলাম”

“কী প্লান বলা যায়,ম্যাম?”

“পিকনিক প্লান”

“কখন?”

“তা দিয়ে আপনার কী?”

“আপনার হাসব্যান্ড ভালো আছে?”

“আলহামদুলিল্লাহ”

“সে কি জানে পিকনিকের কথা?”

“সেটাও আপনাকে বলব না। আর তাছাড়া আমি কাউকে বলে কিছু করি না।”

“আচ্ছা, কিন্তু সাবধান। যে যা পছন্দ করে না তাই না করাই ভালো”

সামিন এর থেকে আর কোনো ম্যাসেজ আসে না। তবে ইনায়ার মনে আতঙ্ক ভর করে।

-আসলেই তো! নীল ভাই যদি শাড়ি পড়ার কথা জানে?

পরক্ষণেই ভাবে,

-ধুর্! উনি কীভাবে জানবে। আর জানলেই বা কী! ওনার তো বউ আছে। যদি রাগে করে তাও দেশে আসতে কম করে পনেরো ঘণ্টা লেগে যাবে। আজ শুনলে আসতে আসতে আগামীকাল।

ইনায়া শান্তির হাঁসি হাঁসে।

পেইজ: সবার আগে গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন

(চলবে……)

#Running

#episode:23

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

আমাদের সিরাজগঞ্জ এর সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

আরও পড়ুন

Back to top button

Please Disable "ADBLOCKER"

আপনাদের জন্য কত কষ্ট করছি আর আপনারা "ADBLOCKER" ব্যবহার করছেন ? আমাদের ইনকাম নেই বললেই চলে, দয়া করে "ADBLOCKER" টা বন্ধ করে সাহায্য করবেন । Please Disable "ADBLOCKER", Its Help us to Add More Content Like This, Thanks.