পর্ব -২১
ইনায়ার ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে আরেকটি নোটিফিকেশন পেয়ে। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে “সামিন আইয়াজ ” নামের একটা ছেলের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। কালো শার্টে ফরমাল লুকে প্রোফাইলে ছবি দেওয়া। আর মিউচুয়াল ফ্রেন্ডে রয়েছে সামিরা। সামিরার সাথে অ্যাড আছে বিধায় ইনায়া আইডির ভেতরে ঢুকে।ছবিতে ক্লিক করতেই ইনায়ার কাছে এক টানা নোটিফিকেশন আসতে থাকে। এক পর্যায়ে ফোন হ্যাং করলে ইনায়া বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দেয় নেট অফ করে। কিছুক্ষণ পর আবার নেট অন করে আইডি তে ঢুকতেই দেখে ইনায়ার শেয়ার করা প্রায় অর্ধ শতাধিক পোস্টে রিয়্যাক্ট। ইনায়া চোখ বড় করে সেদিকে তাকায়।
বিড়বিড় করে বলে,
-অপিরিচিত একটা ছেলে এভাবে এসে আমার আজাইরা পোস্টে রিয়্যাক্ট কেন দিচ্ছে!
ইনায়ার লাস্ট পোস্টে একটা কমেন্ট ও করে ছেলেটা। “তোমারে দেখিবার মনে চায় ” নিয়ে করা পোস্টে কমেন্ট করে,
“বহু রুপ মহিমা তোমার তুমি রুপের মুরোতি
দেখতে শোভা মনো লোভা, তাই তো করি আরোতি”
ইনায়ার অবাক হওয়ার সীমানা ছাড়িয়ে যায় এবার। সাথে সাথে কল দেয় সামিরাকে।
তাড়াহুড়ো করে বলল,
-হ্যা…হ্যালো
-হু হুঁ বল
-সামিন আইয়াজ কে?
-ওহ্ ঐটা আমার ভাইয়া। সুন্দর না?
-আরে রাখ তো তোর সুন্দর! আমার পোস্টে কমেন্ট করছে এসে।
-দোস্ত এইতো পারফেক্ট সময়। তোর নীল ভাইকে ভুলে যা।
ইনায়া কোনো জবাব দেয় না। সামিরা আবার বলে,
-নীল ভাই তো তোকে পাত্তা দেয় না। এখন দেখ তুই কী করবি।
বলেই কল কেটে দেয়।
ইনায়া ঘর জুড়ে হাঁটাহাঁটি করে কিছুক্ষণ। নানা পরিকল্পনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় এই ছেলেকে ফ্রেন্ডলিস্টে যুক্ত করবে। উদ্দেশ্য নীল ভাইকে জ্বালানো। ওমনি চট করে একসেপ্ট লেখাতে ক্লিক করে দেয়। অ্যাড হতেই ইনায়ার ইনবক্সে অনেক গুলো মেসেজ চলে আসে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার আগে থেকেই সামিন ম্যাসেজ পাঠিয়ে রেখেছিল।
ম্যাসেজ গুলো ছিল,
“ম্যাম!”
“এই যে ম্যাম! শুনছেন?”
“আপনার একটা ম্যাসেজের আশার আমি সামিন চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছি ম্যাডাম।”
“একটু কথা বলে আমার জীবনটা সার্থক করে দিন ম্যাম”
একটানা এতোগুলো ম্যাসেজ আসায় ইনায়া বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
মনে মনে ভাবল,
-সুন্দর ছেলেরাও ছ্যাচড়া হয়? কিন্তু নীল ভাই এমন করে না কেন?
নীলের কথা আবার মনে আসতেই নিজেকে শান্ত করল ইনায়া। নিজের পোস্টে গিয়ে সামিন আইয়াজ এর করা কমেন্টটা কয়েকবার দেখলো। তারপর কিছু একটা ভেবে উপুড় হয়ে শুয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে সে কমেন্টের রিপ্লাই লিখলো,
“সব রূপ তো আপনার কাছে,আমার কাছে সামান্য এসেছে”
কমেন্ট টা করে ইনায়া নীলের আইডিতে গিয়ে নীলের একটা ছবি বের করে। সে ছবিতে বারবার জুম করে করে দেখে আর সেদিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
-আপনার হবু বউ কে নিয়ে অনেক দেমাগ তাই না? আমারও কেউ একজন থাকবে এবার থেকে।
.
.
.
.
নীলের মেজোবাবা হুমায়ূন দেওয়ান ঢাকায় অফিসে বসে কম্পানির কাজ সামলাচ্ছেন। তার বয়স বাড়ায় এবার নীলকে দেশের বাইরে পাঠান। তাতে নীলও দ্বিমত পোষণ করেনি। সবার সাথে ডিল ফাইনাল করে, মিটিং অ্যারেন্জ করে ,অ্যাটেন্ড করে দেশে আসতে আরো দশ পনেরো দিন লেগে যাবে। বাংলাদেশ সময়ে এখন দুপুর তিনটা,আর অস্ট্রেলিয়ার সময় অনুযায়ী এখন সাতটা বাজে। নীল আজকের মিটিং শেষ করে কল দেয় শিমু জাহানকে। ভর দুপুরে তিনি ইনায়া আর আনায়াকে নিয়ে গল্প করছিলেন। নীলের কল আসতেই তার দৃষ্টি চকচক করে।
দ্রুত ফোন ধরেই বলে,
-বাবা কেমন আছো? সব ঠিক আছে?
নীলের ঠান্ডা জবাব,
-হ্যাঁ মা। একদম ঠিকঠাক। কী করছিলে?
-তোর বোনদের নিয়ে বসেছিলাম।
-বোন মানে অনু?
-অনু ইনু দুটোই।
নীল কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে। ইনায়া বিষয়টা বুঝতে পেরে শিমু জাহান কে বলল,
-তোমরা কথা বলো বড়মা,আমি আসছি।
শিমু জাহান ইনায়ার হাত টেনে বলেন,
-চুপ করে বোস।
তারপর ফোনটা নিয়ে আনায়ার কাছে দেন। বলেন,
-তুই কথা বলে ইনু কে দিবি।
আনায়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। এরপর নীলকে বলে,
-বড় ভাইয়া,তোমায় মিস করছি!
-আমিও করছি ছোট্ট বোন আমার। দুষ্টুমি কেমন হয় এখন?
আনায়া মাথা চুলকে নীলের দিকে তাকায়। নীল পুনরায় বলে,
-সাবধানে থাকবি। পঁচা ফুলের মধ্যে ভালো ফুল থাকলেও কিন্তু তার নষ্ট হয়ে যায়।
আনায়া বোকার মতো নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ইনায়া তাকায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে।আনায়া কিছুক্ষণ থেমে প্রশ্ন করে,
-কী?
-কিছু না।
নীল আনায়ার সাথে কথা বলছে।ভিডিও কলের মাধ্যমে আসে পাশের সব কিছু দেখায়। অনুও আগ্রহ নিয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ পরে আনায়া নীলকে ডেকে বলেল,
-ইনুপুর সাথে কথা বলো বড়ভাইয়া।
সাথে সাথে নীল ক্যামেরা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
-বোনু আবার পরে কথা বলব,তোর বড়মাকে বলিস। এখন একটু কাজ করতে হবে।বাই।
নীল ফোন কেটে দেয় শিমু জাহান কিছু বলার আগেই। এদিকে ইনায়ার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে। চোখে পানি ছলছল করছে। কোনো রকমে চোখ নামিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে চলে যায়।
.
.
.
.
আনান ডায়েরি খুলে বসেছে ইনায়াকে চিঠি লেখার জন্যে। খুব সুন্দর করে দ্বিতীয় পাতায় লিখল,
“তুই যে গানটা পোস্ট করেছিলি না ইনু? ঐ গান টা আমি তোকে গেয়ে শোনাবো। কবে শুনবি বলতো? তোকে তো আবার সব সময়ই দেখতে মন চায় আমার।সব সময় দেখা দিবি আমায়। কমেন্ট করব? কিন্তু সবাই বুঝে যাবে। সে বুঝুক। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ভালোবাসলে ভয় নাই। দাঁড়া,কমেন্ট করে আসি।”
আনান ডায়েরি বন্ধ করে ইনায়ার আইডি তে যায়। কমেন্ট বক্সে যেতেই দেখে চকচকা প্রোফাইল পিকচার বিশিষ্ট এক ছেলের আইডি থেকে কমেন্ট এসেছে। সেখানে ইনায়া খুব সুন্দর করে রিপ্লাই ও করেছে। আনানের হার্টবিট যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে যায়। সাথে সাথে ঐ ছেলের আইডি তে যায়। রাগে গা ছমছম করছে।
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে ম্যাসেজ দেয়,
“কে আপনি ভাই?”
.
.
শিমু জাহান এর ঘর থেকে ইনায়া তার ঘরে এসে দ্রুত দরজা আটকিয়ে লক করে দেয়। বেলকনিতে গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।নীল বারে বারে তাকে অপমান করে।
কান্না করতে করতে বলল,
-আর কত নীল ভাই?কয়েকদিন ধরেই এমন করছেন,ছোটবেলায় যেমন করতেন!
যেমন বৃষ্টি হচ্ছে আকাশ থেকে ঠিক তেমনি যেন ইনায়ার চোখ থেকে পানি পড়ছে। বৃষ্টির বেগ বেড়েই চলছে,সাথে ইনাায়ার কান্না করার গতিও। বেশ কিছুক্ষণ পরে ইনায়া চোখ মুছে,দু গাল মুছে বিছানায় বসে। ফোন হাতে নিয়ে সামিন আইয়াজ নামক আইডি থেকে আসা ম্যাসেজে রিপ্লাই করে,
“কিছু বলবেন?”
ইনায়ার পাঠানো ম্যাসেজের সাথে সাথে জবাব আসে,
“ছিলো তো কত কথাই বলার। কোনটা আগে শুনতে চান ম্যাম?”
কত বছরের চেনা মনে করে ম্যাসেজ দিল? ম্যাসেজ পড়ে ইনায়ার মনে হতে লাগে,
-লোকটার কথাবার্তা এমন কেন? এতো মাখো মাখো কেন? সব মেয়ের সাথেই এভাবে কথা বলে?
সেই সাথে টাইপও করে ফেলে,
“আপনি কি সব মেয়ের সাথেই এভাবে কথা বলেন?”
“আমি মেয়েদের সাথে কথা বলি না ম্যাডাম। আপনিই ফার্স্ট,আপনিই লাস্ট। “
“ও”
“তো পরীক্ষা কেমন হলো আপনার?”
“ভালো,আপনি জানলেন কী করে?”
“সামিরা বলেছিল”
“আচ্ছা”
“আপনি কি জানেন কান্না করলে রূপবতী মেয়েকে বেশি মায়াবতী লাগে?”
ইনায়া আশে পাশে তাকায় হঠাৎ করে। দ্রুত পায়ে বেলকনিতে গিয়ে রাস্তার দিকে তাকায়। পুরো রাস্তা জনমানবশূন্য। বৃষ্টির জন্যে কেউ বের হচ্ছে না। ইনায়ার ফোনে আবার ম্যাসেজ আসে।
“যদি সত্যিই বলি আমি আপনার বেলকনির নিচে দাঁড়িয়ে, বিশ্বাস করবেন?”
ইনায়া জবাব দেয় না। ফোন বন্ধ করে রাখে। মাথায় অনেক চিন্তা আসে তার। সিলিং বরাবর তাকিয়ে ভাবে,
-এই লোকটা তো ভারী অদ্ভুত। কী সুন্দর কথা বলে,মনে কৌতুহল তৈরী করলো কীভাবে!
আশে পাশে তাকিয়ে গায়ে ভালো মতো ওরনা জড়িয়ে নেয়। চুল কানের পাশে গুজে রুমের সব দেয়াল,জিনিস চেক করতে থাকে,যদি কোথাও হিডেন ক্যামেরা থাকে। কিছুক্ষণ রেস্ট করে একা একাই কথা বলতে থাকে জোড়ে জোড়ে,
-আপনি কি আমায় দেখছেন এখনো?
একটু হাত নাড়িয়ে হাই দিল এলোমেলো ভাবে। তারপর বলল,
-আমার কথা শুনলে এক্ষুনি কল দিবেন আমায়।
(চলবে……)
পর্ব -২২
রাতে খেয়ে এসে ইনায়া ফোনের দিকে তাকাতে দেখে স্ক্রিনে সামিন আইয়াজ এর পাঠানো ম্যাসেজ।
“ম্যাম! খেয়েছেন?”
ইনায়া খেয়ে আসা মাত্রই এমন ম্যাসেজ দেখে বেশ চমকে যায়। রিপ্লাই দেয়,
“না”
সাথে সাথে ম্যাসেজ আসে,
“কেন? অনেক রাত হয়েছে তো। নাকি খেয়ে মিথ্যা বললেন ম্যাম?”
ইনায়া কোনো জবাব দেয় না।সামিনের সাথে কথা বললেই ইনায়ার কেমন অদ্ভুত মনমরা লাগে। মনে হয়ে সে কিছু একটা অন্যায় করছে। অনুতপ্ত বোধ করে আবার নীলের জন্যে কষ্ট হয় ইনায়ার। মনে মনে ভাবলো,
-নীল ভাই নিজে ভুল করেছিল আর আমি রাগ করেছিলাম। উনি কি চাইলে পারতো না রাগ ভাঙ্গাতে? না হয় একটু ইগ্নোর করেছিলাম,এই জন্যে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন? একটা বার খোঁজ ও করবেন না?
এসব ভাবতে ভাবতে আবার নীলের আইডি তে ঢোকে। নীল নতুন একটি পোস্ট করেছে। গ্রে কালারের টিশার্ট আর অফ হোয়াইট কালারের প্যান্ট পড়ে,সিডনি অপেরা হাউসের সামনে কফির কাপ হাতে নিয়ে একটি সুন্দর ছবি পোস্ট করে। ইনায়া ছবিটা দেখে সাথে সাথে কেয়ার রিয়্যাক্ট দেয়। কমেন্ট করতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে হাত থেমে যায়। এরপর গ্যালারিতে গিয়ে মুখ ঢাকা একটা পিক নিয়ে নিজের আইডি তে পোস্ট করে। নীলের দেওয়া ক্যাপশন টা কপি করে নিজেও ক্যাপশন দিল,
“lost in wanderlust”
ইনায়ার দেওয়া ক্যাপশনের সাথে তার ছবির কোনোই মিল নেই। বিষয়টি বুঝে নিজেকে গাঁধী বলে একবার সম্বোধন করল সে। এদিকে সামিন ম্যাসেজ দিয়েই চলেছে।
ছবিতে কমেন্ট ও করে গিয়ে,
“আপনার রূপের আগুনে গরম তো বেড়েই চলেছে ম্যাম”
ইনায়ার সামনে কমেন্টটা আসতে ভীষন লজ্জা লাগে তার। সামিনের ইনবক্সে গিয়ে ম্যাসেজ করে,
“আপনি কি সারাদিন ফোন নিয়েই পড়ে থাকেন?”
“নাহ্,যখন আপনি আসেন আমিও তখন আসি।”
“আপনি কীভাবে জানেন যে আমি কখন আসি?”
“উমমমম্ ঐটা সিক্রেট। দেখা করলে বলতে পারি..”
“দেখেন ভাই,আমি বিবাহিত”
“আপত্তি নেই তো তাতে আমার”
ইনায়া বেশ অবাক হয়।
বলে,
-ভারী অদ্ভুত লোক তো! বিবাহিত শুনেও সমস্যা নেই বলে কেন! পরকীয়া করতে চায় নাকি ব্যাটা খারাপ!
ইনায়ার নীরবতার মাঝে ওপাশ থেকে আবার ম্যাসেজ আসে,
“ছবিটা ডিলেট করলেন কেন ম্যাম?”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকায়।
-ছবি ডিলেট করলাম মানে কী? এই লোক কিছু খেয়ে টেয়ে ম্যাসেজ করে নাকি!
বলতে বলতে সামিরাকে কল দেয় ইনায়া। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-এই! তোর ঐ ভাই পাগ*ল নাকি!
ইনায়ার হঠাৎ এমন প্রশ্নে সামিরা বেশ আতঙ্কিত হয়ে যায়। বলে,
-এসব বলিস না দোস্ত। আমার ভাই খাঁটি সোনা। তোর কী সমস্যা হয়েছে তাই বল….. শুধু ভাইকে নিয়ে কোনো কথা শুনবো না। আমার অকালমৃ*ত্যু ঘটে যেতে পারে না হয়।
-বাদ দে! ভাই ভাই করে এতো গুণগান করতে হবে না। জীবনেও নাম শুনলাম না। হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসলো এখন!
-বিদেশে ছিল। দশ বছর পরে দেশে ফিরেছে তো। তাই এখন থেকে শুনবি। তোদের বিয়ের পাকা কথা করে ফেলবো। নো চিন্তা। দোস্ত জাস্ট ইমাজিন…
-কী?
-তোর ভাই এর বউ আমি আর আমার ভাই এর বউ তুই।
-সে নিয়ে চিন্তা নেই,আমার ভাই এর বউ তোকেই বানাবো। কিন্তু আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলিস না। রাখছি…
-তাহলে কল দিলি কেন?
-আমার ছবিতে একটা কমেন্ট করে দে। আমি যে করতে বলেছি এটা আবার কমেন্টে লিখিস না।
সামিরা ফিক করে হেসে দেয়। বলে,
কমেন্ট করব যে,”তুই এতো করে কমেন্ট করতে বললি বলে করতে বাধ্য হলাম।” একটু অপেক্ষা কর এখনি করছি।
ইনায়া তাড়াহুড়ো করে বলল,
-খবরদার না,সবাই হাসবে…
ইনায়ার কথা থামিয়ে সামিরা বলে,
-কোন পিক? তোর তো কোনো পোস্টই নেই।
ইনায়া যেন আকাশ থেকে পড়ে। কোনো পোস্টই নাই এর মানে কি! দ্রুত সামিরার কল কেটে নিজে গিয়ে চেক করে।
আনমনে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,
-আশ্চর্য ! একটা পোস্টও নেই!
সামিরার আইডি হ্যাক হয়েছিল সেদিন যে,তেমন কিছু হলো নাতো আবার?
বিষয়টা ভাবতেই ঘাবড়ে যায় ইনায়া।
.
.
.
ইনায়ার প্রত্যেক পরীক্ষা চলাকালীন সামিন ম্যাসেজ দিয়েছে । সকালে একটা করে ম্যাসেজ রোজ,
“গুড মর্নিং মিস্”
দুপুরে একটা করে ম্যাসেজ রোজ,
“পরীক্ষা কেমন হলো ম্যাডাম”
আর রাতে একটা করে ম্যাসেজ,
“খেয়েছেন ম্যাম? আচ্ছা গুড নাইট”
আজ ইনায়ার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলো। এতোদিনের মতো আজও সামিন ম্যাসেজ পাঠিয়েছে,
“পরীক্ষা কেমন হলো?”
এতোদিন ম্যাসেজগুলো পড়ে রেখে দিলেও ইনায়া অনেকদিন পরে আজ রিপ্লাই দিল,
“আলহামদুলিল্লাহ”
“এতোদিন পর ম্যাম এর কথা বলতে ইচ্ছে হলো?”
“আপনি কেন আমার সাথে কথা বলেন তার কারণ আমি জানি না। তবে আপনার প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। নিজের সময় নষ্ট করবেন না।”
“আগ্রহ তৈরি করে নিব।”
“সব আগ্রহ আরেকজনে নিয়ে নিয়েছে। বৃথা চেষ্টা করবেন না।”
“ওকে রিলাক্স। তাহলে আমিও আর ইন্টারেস্ট দেখাবো না। এখন থেকে আমি আপনার শুধু বন্ধু।”
ইনায়া ম্যাসেজের জবাব দেয় না। সামিনের থেকে আবার ম্যাসেজ আসে,
“শুধু একটু আকটু কথা বললেই হয়”
“আচ্ছা”
“এখন কী করছেন ম্যাম?”
“রেডি হচ্ছি”
“কেন? কোথাও যাবেন?”
“বরিশাল,আমার নানুবাড়ি।”
সামিন এর আইডি থেকে আর ম্যাসেজ আসে না। ইনায়া কিছুক্ষণ পরে নেট অফ করে দেয়। পরীক্ষা দিয়ে আসার পর থেকেই বায়না শুরু করেছে বরিশাল যাবে। তাই কামরুল দেওয়ান বাধ্য হয়ে ইনায়াকে দিয়ে আসতে যাচ্ছে। সাথে আনায়াও যাবে। হঠাৎ এর উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বেশ তাড়াতাড়ি কাজ করতে হচ্ছে সবার। ইনায়া বাড়িতে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো,নীল ভাই নেই তার। তার উপর আবার রাগ করে কথাও বলছে না। এসব কিছুর থেকে দূরে থাকতে নানুবাড়ি যাওয়ার বিকল্প নেয়। ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী হয়ে তারা তিনজন বেড়িয়ে পরে। আনান দুই একবার ইনায়াকে মানা করেছিল। তবে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। আনানের কথা শোনার পাত্রী ইনায়া না। তাছাড়াও গত কাল থেকে আনানের মন মেজাজ ভালো নেই। সামিন আইয়াজ নামক আইডি টা পাচ্ছে না,আনঅ্যাভেইনঅ্যাবল লেখা আসছে। ইনায়ার পোস্টগুলো ও নেই যে সেখানে গিয়ে কমেন্ট থেকে আইডি টা পাবে। ইনায়ারা বেরিয়ে যেতেই আনান চিঠি লিখতে শুরু করে,
ইনু,
আমার কথা কবে শুনবি তুই? বউদের উচিত সবসময় তার স্বামীকে মান্য করা। আর তুই কিনা! কী দরকার ছিল বরিশাল যাওয়া? আমার একা ভালো লাগে না। এখন তোর পোস্ট করা ঐ গানটাই শুনবো। তোকে দেখার ইচ্ছে টা এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাকেও নিয়ে যেতে পারতি। এমনিও ভার্সিটি যেতে ভালো লাগে না। বউ এর দায়িত্ব নিতে না হলে পড়াশোনা কবেই ছেড়ে দিতাম। শুধু তোর জনজন্যেই সব আয়োজন।
সাবধানে থাকবি।
বরিশাল যাওয়ার লঞ্চের ভিআইপি কেবিন নেন কামরুল দেওয়ান। ইনায়ার মোশন সিকনেস থাকায় গাড়িতে সাধারণত জার্নি করেন না খুব দরকার ছাড়া।এই সময়ে প্লেনও সিডিউল অনুযায়ী নেই । কেবিনে বসে নেট অন করতেই দেখে সামিন ম্যাসেজ দিয়েছে,
“এইচএসসি পরীক্ষা তোমার। এর মধ্যে যাচ্ছো! যাই হোক না যাওয়া টা ভালো ছিল।”
ইনায়া ঝটপট করে লেখে,
“আপনার কথা ঠিক কিন্তু আমার কারো কথা শুনতে ভালো লাগে না। যা ইচ্ছে হবে তাই করতেই ভালোবাসি।
সামিনের থেকে আর কোনো জবাব পায়না ইনায়া।
.
.
.
.
বরিশাল জেলার সদরে আলেকান্দা গ্রামে ইনায়ার নানুবাড়ি। ইনায়া,আনায়া আর কামরুল দেওয়ান উপস্থিত হন মিষ্টি,ফল আর সাথে নদীর ফ্রেশ কয়েক পদের মাছ। ইনায়ার নানু আমেনা আক্তার এতোদিন পর নাতনিকে দেখে জড়িয়ে ধরেন। সেই সাথে মামাতো বোন সানজিদাও।
দুপুরে সকলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে কামরুল দেওয়ান বিদায় নেন। আগামীকাল তার ভার্সিটিতে যেতে হবে। কামরুল দেওয়ান যেতে ইনায়া,আনায়া আর সানজিদা বেড়িয়ে পরে ঘুরতে। গ্রামে এসে না ঘুরলে আর মজা নেই। গাছ থেকে নানা কলা কৌশলে আম পাড়ার সময় সানজিদা ইনায়াকে জিজ্ঞেস করে,
-নীল ভাইয়া কোথায়?
ইনায়া একটা আম খেতে খেতে বলে,
-তাকে দিয়ে কী দরকার?
-এমনিই।
-তার সাথে আমার কথা হয় না। কোনো খোঁজ জানি না আমি।
এরই মাঝে আনায়া এসে ইনায়াকে টেনে নিয়ে যায়। বরশির ছিপ ফেলে এখন মাছ ধরবে সে। পুকুর পাড়ের এক বৃদ্ধ দাদুর থেকে ইনায়া বরশি চাইলে তিনি ইনায়াকে বলেন,
-তুমি আয়েশার মাইয়্যা না?
ইনায়া অবাক হয়ে জবাব দিল,
-জ্বী।
-অনেক দিন পর তোমারে দেকলাম। ও মোর খোদা এএ মাইয়া কত বড় হইয়া গেচে। ওরে দেকচি হেই ছোড হালে। হরে পর আর দেহি নাই।
ইনায়ার শুনে সৌজন্যতার হাসি দেয়। এরপর আবদার করে বলল,
-আমার ছোট বোন মাছ ধরতে চায়,ওকে দেওয়া যাবে এই বড়শি টা?
বৃদ্ধ লোকটি সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে দেয় আনায়ার কাছে। অনু একটা ছোট কৈ মাছ পেয়ে অনেক খুশি হয়। ইনায়াকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে রাখে। সেখান থেকে চলে আসতে গেলে সে বৃদ্ধ লোকটি পুনরায় ইনায়াকে বললেন,
-ছেমড়ি বড় অইয়া গেচে,,, একহালে ওর মা’র নাহান হইচে।
ইনায়া হালকা পাতলা কথাটা বুঝে আবার হাসি দিলে তিনি বললেন,
-মোগ বাড়ি লও বেড়াইতে।
ইনায়া আর আনায়া বিদায় জানিয়ে চলে আসে। বাড়িতে এসে ইনায়া আনানের কাছে তাদের ছবিগুলো পাঠায়। সাথে ভয়েস ম্যাসেজ দেয়,
-ভাইয়া তুমি আসলে মজা হতো।
কিছুক্ষণ পরে আনানের থেকে ম্যাসেজ আসে,
-অপেক্ষা কর। তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।
পেইজ: সবার আগে গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)