পর্ব -১৯
নীল র*ক্তাক্ত হাতে ফোন বের করে পুনরায়। ইনায়ার আইডি থেকে সামিরার কনভারসেশন সম্পূর্ণ ডিলেট করে দেয়। রাগে তার হাত কাঁপছে। কাঁপা হাতে রিসানকে কল দেয়।
শক্ত গলায় বলে,
-ইনুর বেস্ট ফ্রেন্ড সামিরা নাম এর ঐ মেয়েটার উপর নজর রাখতে হবে কয়েকদিন।
-আচ্ছা, কিন্তু কিছু হয়েছে? এতো রাতে নজরদারির কথা বললি যে?
-হ্যা অনেক বড় ইস্যু। তুই শুধু দেখবি ও কার কার সাথে কথা বলে। আর যত দ্রুত সম্ভব ওর আইডি হ্যাক করার ব্যবস্থা কর। আজ রাতের মধ্যেই।
-কেমনে মামাহ! এতো অল্প টাইমে হ্যাক! আর কোনো ইনফরমেশন ও তো নেই।
-অন্য মেয়েকে নিয়ে আমি আমার সময় দিতে চাই না। তাই তোকে সব দায়িত্ব দিচ্ছি। রাখলাম।
-কিন্তু….
রিসানকে আর কথা বলার সুযোগ দেয় না নীল। কল কেটে হাত ধুয়ে অ্যান্টিসেপটিক লাগায়। ব্যান্ডেজ খুলে হাতে পেচাতে পেচাতে শিষ বাজায় নীল।
বিড়বিড় করে বলে,
-তুই ভালো তো আমি ভালো! অন্য ছেলে কে চাওয়ার খুব শখ তোর তাই না ইনু? আমিও তো দেখি কোন ছেলে আসে তোর জীবনে!
.
.
.
রিসান ঘরের এখন প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত হেঁটে চলেছে। মনের মধ্যে অস্থির অস্থির ঠেকছে। তার ওকালতি পড়া থেকে শুরু করে প্রাকটিসে যাওয়া পর্যন্ততে একবারো এমন বিপদের সম্মুখীন হতে হয়নি। চুল টেনে ধরে কিছুক্ষন বসে থাকে সে। অতপর কল দেয় আরানকে।
শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
-মামা,একটা হেল্প কর।
আরান অকপটে জবাব দেয়,
-বল বল
-ভাবীর বান্ধবীর নাম্বার টা ম্যানেজ করে দে..
-কীহ! তোর ভাবীর বান্ধবী তো তোর আরেক ভাবী। দাঁড়া নীলকে এক্ষুনি বলছি!
-ধুর্ শা*লা! কথা শোন!
-আমার বড় বোন নাই। শা*লা শা*লা করবি না।
-সময় নাই হাতে মামা,শোন একটু। খুব ঝামেলায় মধ্যে আছি। নীল অনেক রেগে আছে। Help us.
-কী সমস্যা বল তো..
-পরে বলবো। তুই সামিরার নাম্বার টা দে আগে।
-আমার কাছে নেই তো,সেভ করে রাখিনি।
-ম্যানেজ কর দোস্ত! নীল ইস্যু!
-Ok,hold on.
আরান শর্মীর দিকে তাকায়। একবার ভাবে জানাবে কি না। পরক্ষণেই নীলের কথা ভেবে থেমে যায়। শর্মীকে আস্তে আস্তে বলে,
-একটু চা বানিয়ে আনতে পারবে?
শর্মী বই থেকে চোখ সরিয়ে অবাক হয়ে বলে,
-এতো রাতে?
-হ-হ্যাঁ,পারবে?
-এতো ঘাবড়াবার কী হলো সোনা??? এনে দিচ্ছি।
আরান কোনো রকমে জোড় করে একটা হাসি দেয়। শর্মী উঠে যেতেই ফোন হাতে নিয়ে রিসানকে বলে,
-নাম্বার লেখ,01378196385
রিসান ডায়াল প্যাডে গিয়ে নাম্বার লিখে নেয়। আরানের কল কেটেই কল দেয় সামিরাকে।
কন্ঠস্বর একটু ভারী করে বলে,
-হ্যালো! সামিরা বলছো?
-জ্বী,কে বলছেন?
-আমি রমনা থানার ওসি হারুন উর রশীদ বলছি।
-হ্যা?
রিসানের বুক কাপছে,কীভাবে কী বলবে। এ নাটক তো সবাই ধরে ফেলবে। এ মেয়েও বুঝে যাবে এখন সব। কিন্তু এসবের কিছুই হয় না।
বরং সামিরা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
-স্যার স্যার! কী হয়েছে?
-তোমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। বিভিন্ন মানুষের কাছে তোমার আইডি থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ গিয়েছে। তারা আমাদের থানায় অভিযোগ করেছে। তাই আমাদের তোমার সাহায্য টা একান্তই প্রয়োজন।
সামিরার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। আইডি খুললোই কলেজে উঠে। তেমন কোনো ধারনা নেই। বাড়ির কেউ জানলে কী হবে এই ভেবে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
কাঁপা গলায় বলল,
-ঠিক করে দিন প্লিজ…আমি কাউকে কোনো মেসেজই দেইনি। আমার বাবা জানলে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে।
সামিরা এক পর্যায়ে কান্না করে ফেলে।
রিসান অবাক হয়ে বলে,
-আরে আরে,কাঁদবে না। ঠিক করে দিব। তোমার আইডি যে নাম্বার বা জিমেইল দিয়ে খোলা তা আমাদের দিবে। তারপর সেখানে একটি ওটিপি যাবে। ঐ নাম্বার টা জানাবে।
সামিরা চোখ মুছে সম্মতি জানায়।
যা যা দরকার সব দিয়ে বলে,
-এখন কি আইডি তে যেতে পারবো?
-না,তোমার আইডি এর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা রিকভার করে তোমাকে কল দিব। ততদিন আইডি তে ঢোকার চেষ্টা করবে না।
সামিরা সম্মতি দিতেই রিসান কল কেটে দেয়।
ঢক ঢক করে প্রায় এক লিটার পানি খেয়ে ফেলে রিসান। এতো বড় একটা কাজ এতো সহজে হয়ে গেল ভাবতেই শান্তির শ্বাস ছাড়ল । পুনরায় ফোন হাতে নিয়ে বলে,
-নীলকে এখন অ্যাক্সেস দিতে হবে।
.
.
.
ইনায়া পড়া শেষ করে ফোন হাতে নিয়েছে। ম্যাসেন্জারে ঢুকে সামিরাকে ম্যাসেজ দিতে গিয়ে দেখে আগের কোনো ম্যাসেজই নেই। তখনই সামিরাকে কল দিলে কল কেটে যায় সাথে সাথে।
ম্যাসেজ আসে,
“কল দিস না,ম্যাসেজে বল”
ইনায়া টাইপ করে,
“আমাদের আগের কোনো ম্যাসেজই পাচ্ছি না”
“ফেসবুকে আপডেট এসেছে তাই। তোর জন্য ছেলে পেয়েছি । তুই যেমন বলেছিলি”
“কেমন বলেছিলাম?”
“তুই বিয়ে করবি ,তুই জানিস। বল..”
“এসব পাগলামি বাদ দে। সব ছেলেরাই দেখবি নীল ভাই এর মতো আগে থেকেই বউ তৈরী করে রাখে”
সামিরার থেকে আর কোনো জবাব আসে না। ইনায়া বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পরে।
নীল ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকে একভাবে। রিসান এর থেকে সামিরার আইডি নিয়ে এতোক্ষণ কথা বলছিলো নীল। ইনায়া কোন ছেলেকে নিয়ে কী বলেছে বিষয়টি বুঝতে। নীল কপালে হাত দেয়। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।
হাত দিয়ে মুছে ভাবতে থাকে ,
-সামহাউ ইনু ভেবেছে আমি অন্য কাউকে বউ হিসেবে চাচ্ছি?
.
.
.
গতরাতের মতো আজ সকালেও ইনায়া সম্পূর্ণ ভাবে নীলকে এড়িয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘুম থেকে আগে উঠে একা একা টেবিলে বসে পড়ে। তবে ইনায়া বসার কিছুক্ষণের মধ্যে নীল এসে ইনায়ার পাশের চেয়ারে বসে।
রুবিনা ইয়াসমিন টেবিলে খাবার নিয়ে আসলে নীলকেও বসে থাকতে দেখে বলল,
-তুইও কি এখন নাস্তা করে নিবি নীল?
-হ্যা, দাও মেজো মা।
নীলের কথা শুনে ইনায়া রাগে ফুঁসছে। চেয়ার ঠেলে উঠে যেতে চাইলে নীল শক্ত করে হাত চেপে ধরে টেবিলের নিচ থেকে। শক্ত হাত ছাড়াবার বৃথা চেষ্টা করে হাঁসফাঁস করতে থাকে ইনায়া।
রুবিনা ইয়াসমিন যেতেই নীল ইনায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-নীলকে কেউ কখনো ইগ্নোর করেনি। আর তুই আমার সামনে ভাব দেখাচ্ছিস?
ইনায়া রাগী চোখে তাকায়। তবে কোনো জবাব দেয় না।
এক হাতে ইনায়াকে ধরে আরেক হাতে খেতে খেতে পুনরায় বলে,
-এতো কষ্ট করে আমাকে এড়িয়ে যেতে হবে না। আমার সামনে তোকে আর পড়তে হবে না। পড়াশোনা টা করিস শুধু মন দিয়ে। আমার নিজেরই তোর সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই ।
ইনায়ার বুকের মধ্যে ধুক করে উঠলো নীলের কথা শুনে।
নীলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
-তাহলে আমি যা ভাবি তা-ই ঠিক নীল ভাই? অন্য কোনো মেয়ের জন্য এখন আমার সাথেও কথা বলবেন না?
ইনায়ার চাহনিতে দূর্বলতা দেখতে পায় নীল। মনে মনে বলে,
-তোর এটুকু কষ্ট পাওয়া আমার পাওয়া কষ্টের তুলনায় কিছুই না!
ইনায়ার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে বলে,
-পরীক্ষা ভালোমতো দিস,খেয়ে পড়তে বয় গিয়ে।
নীল উঠে চলে যায়। তবে ইনায়ার মুখ পর্যন্ত খাবার পৌঁছায় না। নীলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
নীল ইনায়াকে এক ঝলক দেখে মনে মনে আওড়ালো,
-তোর ভালোবাসা তৈরী হয়েছে না কি তার প্রমাণ পাবো এখন ইনু্। আমার অনুপস্থিতিতে তোর হৃদয়ের দহন ঘটে কতটা তা দেখবো !
ইনায়ার নিজের উপর অসম্ভব রাগ হচ্ছে। আর কতো ছোট হবে সে। যে মানুষ টা তাকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে বোঝায় যে সে তাকে পছন্দ করেনা,তবুও তার কথা মনে গেঁথে রেখেছে?
ইনায়া অপেক্ষা না করে ফোন বের করেই সামিরাকে টাইপ করে,
“দোস্ত,কোন ছেলের কথা বলছিলি যেন? সব দিক দিয়ে যেন ওমন দশটা নীল ভাই এর থেকে এগিয়ে থাকে। হট হ্যান্ডসাম সুপুরুষ খোঁজ তুই”
ম্যাসেজ টাইপ করে একটু দ্বিধায় পড়ে ইনায়া। নীল ভাইকে ভালোবাসলে অন্য কারো কথা কীভাবে মাথায় আনবে? পরক্ষণেই নিজেই নিজেকে দু চারটে গালি দিয়ে ম্যাসেজটা সেন্ড করে দেয়।
পেইজ: সবার আগে গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
#episode:19
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন