পর্ব -১৮
নীল অফিসে এসে থেকে ইনায়ার কথাই ভেবে চলেছে। ফাইলগুলো নাড়াচাড়া করলেও মন এখন বাড়িতে পড়ে আছে।
মনে মনে চিন্তা করতে থাকে,
-” মেয়েটা আজ হঠাৎ এতো আগ্রহ নিয়ে বললো কেন আমি কোথায় যাচ্ছি?”
নীল আনমনে হাঁসে ইনায়ার মাঝে এমন বউ বউ ভাব দেখে। দুটো ফাইল রেডি করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরে বাসার উদ্দেশ্যে। রাস্তার পাশের ফুলের দোকানে দাঁড়িয়ে পাঁচটা লাল গোলাপ নেয়।
ফুলগুলো হাতে নিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে আওড়ায়,
-ইনু ফুল অনেক পছন্দ করে!
তারপর কিছু একটা মনে পরতেই ভাবে,
-নাহ্ এখনো কিছুরই সময় হয়নি। এতো সহজেই তোকে দূর্বল করা যাবে না। আমার ভালোবাসার গভীরতা তোকে গভীরে গিয়েই উপলব্ধি করতে হবে।
.
.
.
ইনায়ার মনের মধ্যে চাপা রাগ। অভিমানের বেড়াজালে মনটা একেবারে ছেয়ে গেছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে রয়েছে তাই। বাড়ির সকলে একে একে ডেকে গেলেও কাউকে সাড়া দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে ডাকাডাকি বন্ধ করে দেয় সকলে। ইনায়া বেলকনিতে গিয়ে সামিরা কে কল দেয়। কল ধরেই সামিরা আতঙ্কিত হয়ে বলল,
-এই কিরে? এতো রাতে কল দিলি যে? সব ঠিক আছে?
-আনান ভাইয়া?
-আনান ভাইয়া কী?
-মানে সব ঠিক আছে বলতে আনান ভাইয়া ঠিক আছে নাকি বোঝালি?
সামিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই পা*গল মেয়ের সাথে তর্কে না যাওয়াই ভালো। শান্ত হয়ে বলল,
-কী হয়েছে ইনু? মন খারাপ?
-হু..
-কেন?
-রাগ হচ্ছে একজনের উপর।
সামিরা জবাব দেয় না কোনো। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে,
-কী করেছে সে?
-কে?
-আপনার নীল ভাই।
ইনায়া হুহু করে কেঁদে দেয়। নাক টেনে বলে,
-বাড়িতে এসে একটুও অপেক্ষা করেনি। সাথে সাথে ওনার হবু বউকে দেখতে চলে গিয়েছে। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
-থাক এইসব নিয়ে মন খারাপ করিস না।
ইনায়া নাক মুছে বলল,
-হু… তুই কী করে বুঝলি আমি নীল ভাই এর কথা বলছি?
-আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তুই,আর কারো প্রতি তোর সফট কর্নার তৈরী হলে আমি বুঝবো না? বেশ কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছিলাম।
-আমার মনে হয় আমি ওনাকে..
-তাহলে চল ঐ মেয়েকে মে*রে ফেলি
-ছিহ্,এমন পাপ হবে না
ইনায়া আর সামিরার কথার মাঝে দরজায় জোড়ে টোকা পড়ল। ইনায়া কানে ফোন নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সামিরাকে বলে,
-কে যেন এসেছে,ওয়েট!
ইনায়া ফোন কানে নিয়ে দরজা খুলে দেয়। নীল হুরমুর করে ভেতরে ঢুকেই প্রশ্ন করে,
-কী হয়েছে তোর?
ইনায়া জবাব দেয় না। ভ্রু ভাজ করে বিরক্তি প্রকাশ করে।
নীল তেড়ে এসে ইনায়া বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,
-চুপ কেন? উত্তর দে,দরজা দিয়ে এভাবে বসে ছিলি কেনো?
ইনায়া কাটকাট জবাব দেয়,
-আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমি কোনো প্রশ্ন করি?
নীল অবাক হয়ে ইনায়াকে দেখে। শান্ত পর্বত থেকে এমন ভায়ানক আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে কেন?
নীল নিজেকে শান্ত করে বলে,
-কেউ কিছু বলেছে?
ইনায়া জবাব না দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। পুনরায় ফোন কানে নিয়ে বলল,
-হ্যালো
সামিরার জবাব আসে সাথে সাথে,
-হু বল।
-দেখলি এতোক্ষণ পরে খোঁজ করতে এসেছে। আমি ওনাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেন সামিরা?
-চিল দোস্ত,তুই মাশাল্লাহ যে সুন্দরী এমন নীল ভাই দশটা পাবি। গায়ে মাখিস নাতো কিছু। অনেক সুন্দর ছেলে খুঁজে বের করে আনবে তোর জন্য।
মুখ ভার করে ইনায়া বলে,
-নীল ভাই এর থেকে সুন্দর? নতুন ভাবে ডাউনলোড করতে হবে…
-তোর জন্য সব মান্জুর মেরে দোস্ত!
কল কেটে ইনায়া খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পরে।
দেওয়ান বাড়ির কেউ এখনো খেতে আসেনি। ইনায়া এই ফাঁকে খেয়ে চলে গেলেই বাঁচে। বর্তমানে সবাইকেই বিরক্ত লাগছে তার। হাঁক ছেড়ে ডাক দেয় সে,
-বড়মা… খেতে দাও,পড়তে হবে।
এদিকে নীল এখনো থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে ইনায়ার রুমে।মেয়েটার হঠাৎ এমন পরিবর্তন তার মাথায় ঢুকছে না। পড়ার চাপ পড়ল বেশি?
.
.
.
আনান একোবারে তৈরী হয়ে বসেছে ইনায়াকে চিঠি লেখার জন্য। ডায়েরির ১০০টা পাতার প্রত্যেক পাতায় একটা করে চিঠি লিখবে সে। তারপর ডায়েরি ভরে গেলে ইনায়ার হাতে তুলে দিবে। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পেঁচানো হাতের লেখায় লিখতে শুরু করল,
প্রিয় ইনু,
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা নে আগে,তারপর বাকি কথা বলছি। তোকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি, প্রমাণ চাইলে দিতে পারি।তাই ভালোবাসা দিয়েই চিঠি লেখাটা শুরু করতে চাই। বিশ্বাস কর,যদি জানতাম তুই চিঠি পছন্দ করিস তাহলে আরো দুই বছর আগে থেকেই শুরু করে দিতাম। দুই বছর কেন বলছি বলতো? কারন তখন থেকেই আমি বুঝেছিলাম তোকে আমি কতোটা ভালোবাসি। কিন্তু তুই তো কিছুই বুঝতে চাস না। ভাইয়া ভাইয়া করিস,জানিস কতো রাগ হয় আমার? আমার কাছে তুই আর অনু এক না । আর ভাইয়া বলবি না ইনু। চিঠি প্রথম বার লিখছি,তুই তো জানিস বাংলাতে কত কম নাম্বার পেতাম আমি ।
যাই হোক,তোকে যে আমি কত ভালোবাসি তার প্রমাণ দিতে কী করতে হবে? একশো টা চিঠি যথেষ্ট হবে তো?
আনানের লেখার মাঝেই দরজায় টোকা পড়ল। কোনো রকমে ডায়েরি বন্ধ করে উঠে যায় আনান।
দরজা খুলতেই শিমু জাহান বললেন,
-খেতে আয়। অনেকক্ষণ ধরে ডাকছিলাম তোকে কিন্তু তোর তো কোন নাম গন্ধই পাইনা।
-পড়াশোনা করছিলাম একটু । অনেকদিন বই ধরা হয় না তো । তুমি যাও ,আমি আসছি।
শিমু জাহান কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। তবে আনান ও বেশিক্ষণ দেরি করে না। ডায়েরিটা ড্রয়ারে রেখে চলে যায় নিচে।
.
.
.
নীল আর আনান একসাথেই নামে নিচে। সাদা রঙের ভি গলার টি শার্ট পরেছে নীল,সাথে কালো ট্রাউজার। ইনায়া সিড়ির দিকে তাকাতেই শুকনো ঢোক গিললো। কোনো রকমে চোখটা নামিয়ে প্লেটের দিকে দেয়। তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। আবার তাকায় নীলের দিকে। কপালের উপরে পড়ে থাকা চুল দিয়ে পানি পড়ছে। কণ্ঠমণির উপর বিন্দু বিন্দু পানি। ইনায়ার দূর্বল লাগছে,চোখ বুজে মনে মনে বললো,
-it’s just affection not love.
তবে ভাত আর খেলো না সে। টেবিলে ছেড়ে উঠে হাত ধুতে চলে যায়।
যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
-অ্যাফেকশন টা অ্যাডিকশন না হলেই হলো। বিয়েত্তা মানুষের দিকে নো তাকাতাকি ইনু।
ইনায়া সিড়ি দিয়ে উঠে যেতে গেলেই নীল পেছন থেকে ডাক দেয়। তবে ইনায়া এখন সেকেন্ডের জনজন্যেও থামে না। হন হন করে চলে যায় নিজের রুমে। দূর্বল হওয়া যাবে না। ইনু ডিজার্ভস বেটার।
ইনায়ার ব্যবহারের এমন পরিবর্তনের আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না নীল। নিজের উপরই রাগ হচ্ছে তার। চট করে ফোন বের করে ইনায়ার ফেসবুক আইডি তে ঢোকে।
শুরুতেই সামিরার মেসেজ,
” খেয়ে নে, হট হ্যান্ডসাম সুপুরুষ এনে দিব কাল পরশুর মধ্যেই,ঠিক যেমন তুই চাস।”
নীল মেসেজ সিন করে রেখে দেয়। “ঠিক যেমন তুই চাস”,লেখাটা চোখে ভাসছে নীলের।মাথায় যেন তিরতির করে র*ক্ত উঠে গেছে। প্লেটের ভেতরেই এক গ্লাস পানি ঢেলে হাত ধুয়ে উঠে পরে সে। কেউকে কোনো জবাব না দিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে সজোরে দরজা বন্ধ করে। সে শব্দ ইনায়া চমকে উঠলেও পড়াতে মন দেয় তে। উদ্দেশ্য নীলের হবু বউ এর থেকে সব দিক দিয়েই এগিয়ে থাকতে হবে তাকে। এদিকে নীল পাঁচটা গোলাপই হাতের মুঠোয় নিয়ে পিষে ফেলে। ফুলের কাঁটা গুলো মাংসপিন্ডের ভেতরে ঢুকে বি*দ্ধস্ত করে হাত। তবে সেদিকে খেয়াল নেই। হৃদয় তার অধিকতর ক্ষ*তবিক্ষত।
পেইজ: সবার আগে গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
#episode:18
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন ঈদ কেমন কাটলো আপনাদের?