পর্ব – ১৬+১৭
নীল ড্রাইভিং সিটে,পাশে ইনায়া। কান্না করে ফুলিয়ে ফেলা চোখটায় একটু পরপর টিস্যু দিয়ে ছোঁয়া লাগাচ্ছে। পেছনে বসেছে আনান,আনায়া আর রুবিনা ইয়াসমিন।
একটু পরপর ইনায়ার নাক টানার আওয়াজ পেয়ে রুবিনা ইয়াসমিন স্বান্তনা দিয়ে বললেন,
-কান্না করে না মা। বিয়ে হয়েছে তাতে মন খারাপ করতে নেই। দেখা তো হবেই কাল আবার।
ইনায়া মেজো মার কথা শুনে নাক মুছে নীলের দিকে তাকালো। নীলের চোখে সানগ্লাস ,ইনায়াকে দেখলো নাকি তার ইনায়ার কাছে বোধগম্য হয় না।
রুবিনা ইয়াসমিন পুনরায় বললেন,
-মেয়ে হয়ে জন্মালে বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়িই নিজের বাড়ি হয়ে যায়।সব মেয়েকেই মেনে নিতে হবে। দেখিস না আমি তোর মেজো বাবার সাথেই থাকি,তার বাড়ি ই এখন আমার বাড়ি। শক্ত হতে হবে তো,তোকে বিয়ে দেব কীভাবে নাহলে?
ইনায়া নাক টানতে টানতে নীলের দিকে তাকায়।
বলে,
-আমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না।
আনান ও ইনায়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
-হ্যাঁ মা,ইনু বাড়িতেই থাকবে। কোথাও যেতে হবে না ওর।
ইনায়ার কথা শুনে হাসলেও রুবিনা ইয়াসমিন আনানের কথা শুনে চকিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়।
নীল কষে ব্রেক করলে ইনায়া টিস্যু ফেলে বলে,
-কী হলো?
-এসব নাটক সিনেমা দেখানোর জন্যে কান্না করছিস? বিয়ের কথা ডিরেক্ট বলতে পারছিস না বলে কষ্ট পাওয়ার নাটক করে সবাইকে কী বুঝাচ্ছিস?
-যোগ্যতা নিয়ে কথা শুনলে কান্না পায়না নীল ভাই? কিচ্ছু বোঝেন না আপনি!
-বুঝতে চাইনা,যোগ্যতা অর্জন করলে কেউ কিছু বলবে না। আর পড়াশোনা বাদ দিয়ে উনুনে খড়ি ঠেলে কোলে বাচ্চা নিয়ে রান্না করার শখ হলে তাও জানিয়ে দে।
ইনায়া চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকায়। নাক টেনে বলে,
-বিয়ের পরে আপনার বউকে এভাবে রাখবেন?
নীল গাড়ি স্টার্ট দেয়। গিয়ারে হাত রেখে বলে,
-আমি কী করব না করব তা শুনতে চাবি না,আগেও না করেছি! তোর বিয়ে করার শখ হলে বল! করবি?
-না …না…
নীল রিয়ার ভিউ মিররে রুবিনা ইয়াসমিন এর দিকে তাকিয়ে বলল,
-বাড়িতে কখনো ইনাযার বিয়ে নিয়ে কথা তুলে না মেজোআম্মু। এ কথা এখানেই শেষ।
.
.
.
গাড়ি থেকে নেমেই ইনায়া রুমে গিয়ে বিছানায় ঠাস্ করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। মাথা ঝিমঝিম করছে তার। যদিও নীল খুব হালকা ব্রেক করে গাড়ি চালিয়েছিল। জামা কাপড় কিছুই পরিবর্তন না করে ঐ অবস্থাতেই ঘুমিয়ে যায় ইনায়া। সন্ধ্যার পরপর তার ঘুম ভাঙ্গলো নীলের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে।
ইনায়াকে বেশ কয়েকটা ডাক দিয়ে বলল,
-দরজা হা করে খুলে রেখে এভাবেই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস! কেউ যদি রুমে আসতো?
ইনায়া হালকা হায় তুলে বলল,
-কিছু নেইতো চুরি করার মতো।
-এই রুমে আমার অনেক মূল্যবান একটা জিনিস রেখেছিলাম,তাই খুব সাবধান।
-কোথায়?
-তা আমার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া আর কাউকে বলা যাবে না।
ইনায়ার মুখটা আবার ফ্যাকাশে হয়ে যায়। নীল ইনায়ার কাছে এসে বলল,
-পরীক্ষা কবে?
-আগামী সপ্তাহে…
-প্রস্তুতি কেমন?
-ভালো।
-ঠিক আছে,মন দিয়ে পড়।
ইনায়া উঠে ফ্রেশ হয়। মুখে একের পর এক পানির ঝাপটা দিয়ে নিচে চলে আসে। চা না হলে মাথা ব্যাথা কমছে না।
শিমু জাহানের গলা জড়িয়ে বলল,
-বড় মা…. চা খাবে?
-তুই খাবি?
-হু, বানাচ্ছি। তোমার জন্য বানাই?
-এই মেয়ের সাহস কত!!! কাজ করতে এসেছে আমার সোনা পাখি।
-করতে দাও আজকে,শিখতে হবে। সরো তো !
-খবরদার না। নীল এসব দেখলে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিবে।
বলবে তোর পড়াশোনা বাদ দিয়ে তোকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।
-ওনার কি!
-ও ছোট থেকেই তোকে কাজ করতে দেয় না,আদরের বোন।
-বোন না ছাই!
-তুমি কি জানো,যখন এটা ওটা এনে দিতে রান্নার সময়,নীল তখন আমাকে বলতো যে , মা,নীলা কে বিয়ে দিতে চাচ্ছো?
-নীল ভাই এটা বলতো সত্যি?
-হ্যাঁ,ওর বয়স ধর চৌদ্দ কি পনেরো ছিল তখন। আর ও তোকে নীলা ছাড়া ডাকতো না কখনো।
ইনায়া আগ্রহ দেখায় গল্প শুনতে আর শিমু জাহান চা বানাতে বলতে থাকে,
-তুই তখন সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছিস, টিপ টিপ করে হেঁটে হেঁটে এটা ওটা আমাকে এনে দিতি। আর নীল সে কী কান্না। তোকে না কি আমরা বিয়ে দিতে চাই। হা হা হা!
শিমু জাহান হাসতে থাকে। ইনায়া অতি আগ্রহ নিয়ে বলে,
-তারপর তুমি কী বলতে?
-বলতাম,ওমা! বিয়ে কেন দিবো? তোমার নীলা বোনু তো একটা বাবু…
-এখন আর নীলা বলে না কেন?
-আমি কী করে বলবো! তোদের ভাই বোনের ব্যাপার। নীলও কিন্তু ওর ইনান নাম কাউকেই বলে না।
-হু বড়মা! একদম ঠিক। নীল ভাই সবাইকে বলে ওনার নাম দেওয়ান নীল। ইনান দেওয়ান নীল তো বলে না। কেন বড়মা? আমার নামের সাথে মিলে যায় তাই?
-ধুর্ পা*গলি! তোর নাম মিলিয়েই রেখেছে ও। ইনায়া দেওয়ান নীলা। এ নাম রাখতেই হবে,নাহলে ও ভাত খাবে না,পড়বে না,খেলবে না। পরে সবাই রাজি হয়ে যায়।
শিমু জাহান চা কাপে ঢেলে ইনায়ার হাতে দেয়।ইনায়া কাপ হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে বলে,
-তারপর তারপর?
-তারপর আর কী! যা এখন পড়তে ,তোর ভাই যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে যেন তোর উপর নজর রাখি।
আয়েশা আক্তার বড় ভাবির সাথে তাল দিয়ে বলল,
-আমাকেও গিয়ে বলে এসেছে নীল। পরীক্ষা সামনের সপ্তাহেই।
ইনায়া মায়ের কথায় ভেংচি কাটলো,বললো,
-একজেনর কথা ই সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। আর আমি তো ঢেউ টিন।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের রুমে ফেরত যায়। কাপ টেবিলে রেখে বই হাতে নিয়ে বড় করে শ্বাস নিয়ে বলল,
-মিশন পড়াশোনা…
.
.
.
.
শর্মী বিছানার মাঝে ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে। আরান আসতেই ইতস্তত করে বলল,
-সরি…
শর্মীর হাত পা মোচড়াতে দেখে আরান বলে উঠলো,
-কতো তারিখ যেন আজ?
-আ..আট..
-একটা থাপ্পড় মারবো ! কত বড় হয়ে গেলা বিয়ে করেই। আমাকে জানাতেও সমস্যা ছিল?
-এতো স্পেশাল একটা দিন। তুমি তো রাগ করতে…
-এই চিনলে? আমার তো নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এখন।
শর্মী কিছুক্ষণ পর আরানকে আবার ডেকে বলল,
-এই! রেগে আছে?
-হ্যাঁ
-আমি জানতাম না এমন হবে…
-মাফ করতে পারি,তবে একটা শর্ত আছে।
-বলো…
-থা*প্পর মেরে একটা দাঁত ফেলতে দিতে হবে।
শর্মী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় আরানের দিকে।
-পরীক্ষা কবে?
-সামনের সপ্তাহে…
-ওরে! না পড়াশোনার ধান্দা নিয়ে বিয়ে করলে! পরশু দিন থেকেই পড়তে বসবে । মন দিয়ে পরীক্ষা দাও আগে,তারপর সব হবে।
শর্মী ছলছল চোখে আরানের দিকে তাকায়। এমন সব পরিস্থিতি তে পাশে থাকার মতোন একটা মানুষ জীবনে থাকলে আর কী দরকার!
.
.
.
বৌ ভাতে শর্মী মিল্ড কালারের জামদানি শাড়ি পড়েছে। ইনায়া আর সামিরা গিয়েই জড়িয়ে ধরে এক সঙ্গে প্রশ্ন করল,
-কী কী হলো দোস্ত?
শর্মী অতি কষ্টে একটা হাঁসি দিয়ে বলল,
-অনেক কিছু।
ইনায়া আগ্রহ নিয়ে বলল,
-জলদি বল,শুনে খেয়ে দেয়ে বাড়ি গিয়ে পড়তে হবে…
সামিরা ইনায়ার কথা শুনে শর্মীকে বলল,
-হ্যাঁ ইনুর তো অনেক পড়া। থাক দোস্ত,আমরা আর পড়াশোনা করি না
-আরে পড়তে হবে নীল ভাই এর জন্য । ওনার ভালোবাসার মানুষের থেকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে,তা নাহলে আমায় কেউ বই ধরতে দেখতো না। যাই হোক শর্মী বল এখন।
শর্মী ঢোক গিলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-কাল ও রুমে আসলো…
ইনায়া আর সামিরা একসাথে বলে উঠল,
-ওওওও,ও রুমে আসলো..
-ধুর ছাতা! আমাকে বলতে দে। কথা আটকালে বলবো না।
সামিরার জবাব,
-আচ্ছা বল।
-রুমে আসার পর অনেক রাগারাগি করলো। তারপর বলল পরীক্ষা কবে। তারপর বললো কাল থেকেই যেন পড়তে বসি। তারপর বলল,এখন ঘুমাও।
সামিরা আর ইনায়া সন্দেহের চোখে শর্মীকে দেখলো। শর্মী মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-বিশ্বাস কর দোস্ত। আর কিছুই হয়নি। আমি অসুস্থ…
ইনায়া কপালে হাত ঠেকালো। সামিরা আফসোস কর বললো,
-আর সময় পেলো না! বাসর রাতেই তাই বলে!
ইনায়া সামিরার কাঁধে হাত রেখে বলল,
-চল খেতে যাই,কাল দুটো রোস্ট খেয়েছিলি,আজ তিনটে খাবি।
-হ্যাঁ চল,ওকে দিয়ে এখন কাজ নেই। পরীক্ষার পরে আবার শুনবো। কিন্তু তিনটে রোস্ট কীভাবে।
-আমার টা আর আমার ভাই এর টা তোমায় দেবো ভাবি।চলো এখন..
সামিরা লজ্জায় মুখে হাত দেয়।
তখনই আনান পেছন থেকে ইনায়া কে ডাকতে দুজনেই পেছন ফিরে তাকায়। ইনায়ার কাছে এসে বলে,
-কোথায় ছিলি?
-শর্মীর কাছে,কেন ভাইয়া?
আনান ইনায়া চুল ধরে টেনে বলে,
-তোকে একদিন বেশি করে মারতে হবে। রিসান ভাইয়া খেতে যেতে বলেছে। তুই যা,আমি বড় ভাইয়াকে ডেকে আনি।
ইনায়া আর সামিরা টেবিলের কাছে গেলে রিসান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-সালাম নিবেন ভাবি।
সামিরা আর ইনায়া একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। অতপর একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করে,
-কীরে,তোকে ভাবি বলল কেন?
ইনায়া সামিরা কে থামিয়ে বলে,
-তোকে বলেছে। আর আনান ভাইয়া এতোক্ষণ রিসান ভাইয়ার সাথেই ছিল। তোকে নিয়ে কথা বলেছে,এই জন্যই ভাবি বলল।তারমানে আনান ভাইয়ার মনে সামথিং সামথিং!
(চলবে……)
পর্ব – ১৭
ইনায়া জোড়ে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো,
-উমমম্ সামথিং সামথিং…
সামিরা কোনো রকমে ইনায়ার মুখ চেপে ধরে জিভ কেঁটে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
-নাথিং নাথিং!
তবে ইনায়া মানতে নারাজ। চেপে ধরা মুখ দিয়েই আওয়াজ করছে সে। অস্পস্ট স্বরে বলল,
-আনান ভাইয়ার সাথে সামথিং সামথিং…
সামিরা ইনায়ার কথা থামাতে আরেকটু শক্ত করে মুখ চেপে ধরে পাশে তাকাতেই দেখে আনান আর নীল দাঁড়িয়ে। সামিরা দ্রুত ছেড়ে দেয় ইনায়াকে। আনানকে আড় চোখে আরেকবার দেখে চোখ নামিয়ে ফেলে। অবুঝের মতো আনান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এখানে কী হচ্ছিল বিষয়টা বোঝার চেষ্টায় সে। এদিকে নীল ভ্রু কুঁচকে হাত ভাঁজ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে ইনায়ার দিকে। তবে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চুল ঝাড়া দিয়ে ইনায়া গিয়ে খেতে বসে পড়ে। আনান আর নীল সেদিকে এগিয়ে যায়। সামিরাও যায় তাদের পেছন পেছন। গিয়ে বসে ইনায়ার পাশে।
.
.
.
.
শর্মীর সাথে বেশ অনেক্ষণ সময় কাটিয়ে ফেরার সময় ইনায়া সামিরা কে টেনে বলল,
-তুই আজকে আমাদের সাথে যাবি। নামিয়ে দিয়ে যাব।
-বাবা-মা একা যাবে নাকি!
-আমি দেখছি কী করা যায়, প্লিজ ভাবি…
সামিরা আড় চোখে ইনায়াকে দেখে।
ইনায়া এবার হাত ধরে বলল,
-আজকে তোকে আমার ভাবি বানানোর পাঁকা কথা বলেই রাখব দেখিস!
সামিরা বেশ লজ্জা পেলেও তা ইনায়ার সামনে প্রকাশ করে না। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ বুঝে ইনায়া নীলের কাছে যায় সরাসরি।
হাত কচলাতে কচলাতে বলে,
-নীল ভাই…
সানগ্লাস চোখে ফোন দেখছে নীল। ইনায়ার ডাক শুনে সে চমকায় না,যেন আগে থেকেই জানতো ইনায়া এখন আসছে।
ফোনের দিকে তাকিয়েই সে জবাব দেয়,
-বল
-আজ গাড়ি আনান ভাইয়া চালাক…
নীল এক হাতে চশমা খুলে ইনায়াকে দেখে। কপালে আপনাআপনি ভাঁজ পড়ে তার।
জিজ্ঞেস করল,
-সমস্যা কী?
-মানে,সামিরাও যাবে আমাদের সাথে…
-তো?
-তো আপনি বুঝবেন না। আনান ভাইয়াই গাড়ি চালাবে আজ।
একনাগাড়ে কথা বলেই ইনায়া পেছনে ঘুরে হাঁটা দেয়। তবে পিছন থেকে হ্যাঁচকা টানে তাকে থামিয়ে দেয় নীল।
একেবারে নিজের কাছে এনে বলে,
-এতো বেশি বুঝতে হবে না। পেছনে আনান আর তোর বন্ধু বসবে।
-অনু?
-ও মেজোমাদের সাথে আসবে।
নীলের এতোটা কাছাকাছি ইনায়া। হঠাৎ এই কম দূরত্বটা বুঝতে পেরে হার্টবিট বেড়ে যায় ইনায়ার। বুকে আঙ্গুল ছুঁয়ে শুকনো ঢোক গিললো সে। মনে হচ্ছে আওয়াজ নীলের কানেও যাচ্ছে।
ইতস্তত বোধ করে দূরত্ব বাড়িয়ে নিতে চাইলে নীল আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
-ড্রেসের দিকে একটু খেয়াল রাখবি,যা-ই পড়িস না কেন।
বলেই নীল ইনায়ার চুলগুলো বাম কাঁধে এনে দিয়ে হাত ছেড়ে চলে যায়। ইনায়া চুলে হাত দিয়ে নীলের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষনের জন্য হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ নীলের বলা কথাগুলো ভেবে চুল সরিয়ে কাঁধে হাত দিতেই চোখ বড় করে ফেলে। জিভ কেঁটে বলে,
-ইশশশ্! এখন নীল ভাইয়ের সামনে যাব কী করে!
.
.
.
.
ইনায়া মাথা নিচু করে নীলের পাশে বসে রয়েছে। পেছনে আনান আর সামিরা।
ইনায়ার এমন অসস্তি বোধ করা দেখে নীল হালকা কেশে বলল,
-কোথাও ঘুরতে যাবি?
ইনায়া মাথা নাড়িয়ে না বলে। তবে নীলের দিকে তাকায় না।
নীল পুনরায় বলে,
-রং ঢং এর মানে নেই কোনো। লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু হয়নি। আরো অনেক কিছু বাকি আছে।
ইনায়া আড় চোখে তাকিয়ে বলে,
-কী অনেক কিছু?
-এই ধর বিয়ে,বাচ্চা ,ইত্যাদি ইত্যাদি।
আনান এবার পেছন থেকে বলে ওঠে,
-বড় ভাইয়া,তুমি হঠাৎ ইনুর বিয়ে,বাচ্চাতে চলে গেলে কেন?
নীল ডান হাত স্টিয়ারিং এ আর বাম হাত গিয়ারে রেখে আনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-তোর বোন যেমন অল্পতে লজ্জা পায়। তাকে বোঝাতে হবে যে আরো বড় বড় বিষয় পড়ে রয়েছে এখনো।
ইনায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছে। গাড়িতে উঠলে তার অসস্তি হয়,তার উপর এ সকল কথা বার্তা। সামিরা এদিকে আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে বান্ধবীর অসস্তি হচ্ছে তা বুঝতে দেরি হলো না তার।
ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-ইনুউউউ
ইনায়া কপালে হাত রেখে আস্তে করে বলে,
-হু..
-চিঠি কেমন লাগে তোর?
-দারুণণণ
-আমারও,তুই কখনো পেয়েছিস?
-সে ভাগ্য হয়নি দোস্ত। এখনকার মানুষ চিঠির মর্ম বুঝে নারে। কেউ যদি আমাকে একশো এক টা চিঠি দিয়ে প্রোপোজ করতো! কিছুতেই না করতাম না!
সামিরা উত্তেজিত হয়ে বলে,
-ঠিক ঠিক। আমিও আমিও। আচ্ছা এখানের আর কেউ পছন্দ করে না?
আনানের চোখ চকচক করে ওঠে। সাথে সাথে জবাব দেয়,
-চিঠি লিখতে তো আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু কেউ বুঝেই না ব্যাপারটা কত সুন্দর।
ইনায়া সাথে সাথে পেছনে তাকায়। আনানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,
-উমমম্ তারপর ?
-তারপর আর পর নেই।
-উফফ্,এই যে আমরা জলজ্যান্ত দুইটা মানুষ বললাম চিঠি আমাদের ভালো লাগে,তাতে তোমার হলো না? আমার বান্ধবী চিঠি পছন্দ করে। বুঝতে পারলে? তাও বললে যে এখন কেউ এই ব্যাপারটা বুঝে না।
-হ্যাঁ জানলাম ইনু,আর মাথায়ও রাখলাম।
সামিরা লজ্জা পায়। আনান তার বিষয়টা মাথায় রাখলো? তারমানে ইনু ঠিকই বলেছিল? আনান মাথা ঝুঁকিয়ে মুচকি হাসে।
মনে মনে বলে,
-তুই আগে বলবি না তোর চিঠি পছন্দ? রোজ একটা করে চিঠি লিখতাম তাহলে।
নীল ইনায়ার গালে হাত দিয়ে মুখ সামনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। শক্ত কণ্ঠে বলল,
-পেছনে তাকাবি না,মাথা ঘুরবে।
ইনায়া চুপচাপ সামনে তাকায়। নীলকে দেখলেই লজ্জা লাগছে তার।
সামিরার বাড়ির সামনে আসতেই ব্রেক করে নীল। গাড়ি থেকে নেমে ইনায়ার কাছে এসে বিদায় নেয় সে। আজ চোখে মুখে তার অন্যরকম উজ্জ্বলতা ফুটে উঠেছে। নতুন প্রেমে পড়লে যেমন হয়।
.
.
.
দেওয়ান বাড়ির পরিবেশ একেবারে রমরমা। সকলেই উপস্থিত।ইনায়া,আনান আর নীল আসতেই বাড়িটা একেবারে পরিপূর্ণ।বাড়িতে আসতেই অনু ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-ইনুপু এতো দেরি করলে কেন?
-তোর প্রিয় বড়ভাইয়া কে জিজ্ঞেস কর।
অনু এবার নীলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-তোমরা ঘুরতে গিয়েছিলে?
-তোকে রেখে যাওয়া সম্ভব?
অনু খুশি হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। নীল সুন্দর করে হাসি দিয়ে ইনায়াকে বলে,
-ফ্রেশ হয়ে পড়তে বস। আমি রাতে এসে পড়া ধরব।
কথা শেষ হতেই ইনায়া উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কোথায় যাবেন এখন?
নীল কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। পেছন ঘুরে ইনায়াকে দেখে । তারপর কিছু একটা ভেবে নরম করে হাসি দিয়ে বলল,
-অফিসের কাজে,একটু পরেই আসব। পড়া শেষ করে রাখ।
নীল আর দাঁড়ায় না। সদর দরজা পেরিয়ে হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায়।
সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনায়া । তার বিশ্বাস নীল এখন তার হবু বউ এর সাথেই দেখা করতে গেল। সারাদিন না দেখেই এমন অস্থির হয়ে গেছেন নীল ভাই? নাহলে কেউ বাড়িতে এসেই বেড়িয়ে যায় না। এসব ভেবে আজ জেদ হচ্ছে না তার। পড়তেও আগ্রহ পাচ্ছে না। অজানা অভিমান ভর করে ইনায়ার মনে।
পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করলেন আমার জন্যে। কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সবার দোয়া আর ভালোবাসা আমি পর্যন্ত এসেছে। জানিনা কেমন লিখেছি। তবে একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বগুলোতে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন