পর্ব – (১৪+১৫)
ইনায়ার হাতে হ্যাঁচকা টান পড়তে হুস ফেরে তার। সামিরা ইনায়াকে শক্ত করে ধরে বলল,
-প্লিজ ইনু,রাজি হয়ে যা।
নীল এখনো একই ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনু নীলের কাছে দৌঁড়ে যায়। হাসতে হাসতে বলল,
-বড় ভাইয়া,তোমার কি ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে?
নীল ভ্রু কুঁচকে বলে,
-কেন?
-ইনুপুর দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আপুর তো পেট খারাপ হয়ে যাবে।
নীল সন্দেহজনক ভাবে অনুকে দেখে। অনু পুনরায় বলে,
-তোমার খেতে ইচ্ছে করছে ,বড় ভাইয়া?
নীল অকপটে উত্তর দেয়,
-হ্যাঁ।
তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই পাল্টা প্রশ্ন করে বলে,
-কী?
নীলের প্রশ্ন শুনে অনু হেসে কুটি কুটি হয়ে যায়। হাসতে হাসতে বলল,
-ইনুপু কে অবশ্যই খেতে বলিনি আমি। যা বুঝেছো তাই ই বলেছি। খাবে নাকি বলেছিলাম, ফুচকা।
নীল বেশ বিব্রত হয়ে যায়। ছোট বোনের কত সাধারণ কথাকে সে কত জটিল করে ভেবে নিল।
.
ইনায়ার মাথায় সামিরার কোনো কথাই ঢুকছে না। তখন থেকে প্লিজ প্লিজ করেই চলেছে। ইনায়ার এবার বেশ রাগ হয়। চেঁচিয়ে বলে,
-আরেহ্ ! কী অদ্ভুত! কী হয়েছে বলবি তো?
-আগে বল রাজি হবি…
-আমি তো সব কিছু তেই রাজি হই!
-চল তাহলে নাচ করি।
ইনায়ার বুকের মধ্যে কেঁপে উঠল। সাথে সাথে তাকালো নীলের দিকে। নীল আর অনু এদিকেই আসছে। ইনায়ার এমন চাহনি দেখে নীল দূর থেকে ইশারায় বলে,
-কী হয়েছে?
কিন্তু ইনায়ার ভাবভঙ্গি বদলায় না। অনু এসে ইনায়ার থেকে ফুচকা নিয়ে নীলকে দেয়। হেঁসে ইনায়াকে বলে,
-বড় ভাইয়া তোমার থেকে ফুচকা না খেলে নিশ্চিত তোমার পেট খারাপ হবে।
ইনায়া শান্ত চোখে নীলের দিকে তাকায়। নীল এবার সরাসরি প্রশ্ন করে,
-কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?
নীলের প্রশ্নের উত্তরের জবাব আসে,তবে তার ইনায়ার থেকে না। সামিরা বলল,
-বেচারি চিন্তায় আছে আমার আবদার শুনে।
অনু অবাক হয়ে সামিরাকে বলে,
-কী আবদার করেছো আপু??
-ভয় দেখাতে তোমার ইনুপু কে নাচতে বলেছিলাম। কিন্তু সে যে এতো চিন্তায় পরে যাবে তা কে জানতো!
ইনায়া আড় চোখে নীলের দিকে তাকায়। নীল এখনো একই দৃষ্টিতে ইনায়াকে দেখছে।
সামিরা ইনায়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডেকে বলল,
-শোন ইনু,আমাদের অনেক দিনের প্লান ছিল ঐ গান টা একসাথে গাব। আশা করি এটাতে মানা করবি না!
ইনায়া নীলের দিকে তাকায়,তার চোখ যেন অনুমতি চাচ্ছে।এই দৃষ্টি বুঝতে পেরে নীল মুচকি হেসে সম্মতি জানায়।
ইনায়া আর সামিরা সাজানো স্টেজে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। শর্মীকে উদ্দেশ্য করে গাইতে শুরু করে,
আজকে বুবুর মুখের হাসি
কালকে বুবুর বিয়ে
বর আসবে পালকি চড়ে
বকুল তলা দিয়ে।
বর আসতে দেব না
বুবুর কাছে নেব না
ও বুবু তোর বলিস
আনতে আমার খাজনা।।ঐ
আজকে বুবুর গায়ে হলুদ
কালকে বুবুর বিয়ে,
বর আসবে পালকি চড়ে
বকুল তলা দিয়ে।
রিদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে স্টেজের দিকে। আর ইনায়া তাকিয়ে রয়েছে নীলের দিকে। সামিরা দেখছে আনানকে আর আরান শর্মীকে।
গান শেষ হতেই শাড়ির কুঁচি ধরে তাড়াহুড়ো করে ইনায়া নামতে যায়। তবে স্টেজ থেকে নামার সময় সিঁড়িতে ঠিকভাবে পা না পড়ার ফলে ইনায়া তাল সামলাতে ব্যর্থ হয়। পা মচকে নিচে পড়ে যেতে গেলেই ইনায়া চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল। তবে কোনোকিছুর সাথে আঘাত লাগেনি তার।এক বলিষ্ঠ হাত শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরেছে তাকে।মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে ইনায়া চোখ খুলে। কোমরে কারো হাত পেঁচিয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি যায় হাত থেকে সেই মানুষটির উপর।রিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ইনায়ার দিকে। রিদকে দেখতেই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দেয় ইনায়া। সাথে সাথে তাকায় নীলের দিকে। নীল হাত মুঠো করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। চোখ দিয়েই যেন ভ*স্ম করে দিচ্ছে। আরান আর রিসান নীলকে শক্ত করে চেপে শান্ত করছে। আরান কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল,
-ছোট মানুষ ভাই! ভুল হতেই পারে।
রিসান ও বলল,
-আরেহ মামা,ও না ধরলে তোর পরী টা পড়ে যেত। কত ব্যাথা পেতো ভাব একটু।
নীল কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না । আরানকে দেখে হুঙ্কার দিয়ে বলল,
-তোর ভাইকে সাবধান করে দে আরান! আমি যে কি করব নাহলে নিজেই জানি না।
-আচ্ছা আমি বলব,তুই এসব নিয়ে ভাবিস না।
আজ ইনায়া ,সামিরা আর অনু শর্মীদের বাড়িতেই থাকবে। তবে নীল ইনায়াকে একা রেখে যেতে নারাজ। নীলের আজ আরানের সাথে যাওয়ার কথা থাকলেও সে আরানকে মানা করে দেয়। বলল,
-আজ আমি এখানে থাকব,ওকে রেখে যাওয়া সম্ভব না।
আরান কথা বাড়ায় না,একবারে রাজি হয়ে যায়। অনু ,আনান ,ইনায়া আর নীল ছাড়া দেওয়ান বাড়ির সকলে বাড়িতে ফিরে গিয়েছে। নীল আনানকে আরানের সাথে যেতে বললেও আনান জানিয়ে দেয় সে এখানেই থাকবে। নীল উঠে ইনায়ার কাছে যায়। রিদ সেখানে থাকায় নীলের মাথা দ্বিগুণ গরম হয়ে যায়। তাকায় আরানের দিকে! আরান সব সামলে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় নীল কোনো রকমে নিজেকে কনট্রোল করল। তবে ইনায়ার সামনে যেতেই ঘটিয়ে ফেলে এক আকস্মিক ঘটনা। হুট করে ইনায়াকে কোলে তুলে নিল নীল। আরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোর বউকে জিজ্ঞেস কর তো ইনু কোথায় ঘুমাবে।
আরান শর্মীর দিকে তাকায়। ঘটনায় আকস্মিকতায় সকলে এখনো হতভম্ব। শর্মী বলল,
-নিচের একেবারে কর্ণারের রুমটাতে।
নীল অপেক্ষা না করে ইনায়াকে নিয়ে চলে যায়। ইনায়া ভয়ে নীলের গলা শক্ত করে ধরে মুচড়াতে মুচড়াতে বলল,
-নীল ভাই! ছাড়েন! আমি যাব না নিচে। নামিয়ে দেন প্লিজ! আরে ছাড়েন না! নীল ভাই!
তবে কে শোনে কার কথা। নীল সোজা কর্ণারের রুমে গিয়ে ইনায়াকে নামিয়ে দেয়।পাঞ্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে বলল,
-অন্য ছেলে ধরলে এমন মোচড়াতে পারিস না? না কি সবার ছোঁয়া ভালো লাগে?
-কে ধরেছে?
-ওহ্! ঐ অনুভূতি ও নেই?
-না নেই।
-আমি তোকে ধরলে কি তোর অ্যালার্জি হয়?
-হ্যাঁ…
নীল ইনায়ার গাল চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-তাই ই মনে হয় মাঝে মধ্যে। আবার মনে হয় তুই মৃগী রোগী।
-আপনার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া যে অন্য মেয়েকে
ধরেন তাতে আপনার সমস্যা না থাকলেও আমার আছে।
-বাহ্! ঐ ছেলে কোমড়ে হাত দিয়ে কানে কানে এসব কথা শিখিয়ে দিয়েছে?
-কোনো ছেলেকে কেন বলতে হবে? আমি ছোট নেই। আমাকে তো বোন হিসেবেও মানেন না! তাহলে ধরবেন কেন?
-আঠারো বছর হয়েছে?
-না…
-নিজেকে বড় বলে দাবি করিস না আর।
বলেই নীল ইনায়ার হাতে স্যানিটাইজার এর বোতল ধরিয়ে দেয়। আদেশের স্বরে বলল,
-শাড়ি খুলে আমার হাতে দিবি এক্ষুনি,তারপর এই স্যানিটাইজার দিয়ে যেখানে ধরেছে সেখানে লাগিয়ে নিবি।
-শাড়ির উপরে লেগেছে হাত,তাহলে শাড়ি খুলে এটা লাগাবো কেন?
-আমি বলেছি তাই । শাড়িটা দে এখন।
ইনায়া চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকায়। নীল আসলে চায় টা কি!
-কী হলো কথা কানে যায়নি?
-বাইরে যান,খুলে দিয়ে দিচ্ছি।
নীল বাইরে চলে আসে। অনু আর সামিরাও নিচে চলে এসেছে। নীলের ইনায়ার ঘরের বাইরে দেখতেই আনায়া বলে,
-কী করছো এখানে দাঁড়িয়ে বড় ভাইয়া?
-তোর ইনুপু শাড়ি বদলাচ্ছে।
এই বলে নীল ইনায়ার ফোন বের করে আনায়ার হাতে দেয়। বলল,
-তোর ইনুপু কে ফোনটা দিয়ে দিবি,কোনো সমস্যা হলে যেন আমায় কল দেয়। এখানেই থাকব।
আনায়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
.
.
.
ইনায়া আর সামিরা সাদা রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে আর অনু পড়েছে নীল রঙের লেহেঙ্গা।নীল পড়েছে ক্রিম কালারের পাঞ্জাবি।
শর্মীকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক আসে। সে আজ পড়েছে লালা বেনারসি। সামিরাও সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে নেয়। তবে বিপত্তি ঘটে ইনায়াকে নিয়ে। সে কিছুতেই সাজতে চায় না। ইনায়া সাজতে না চাওয়ায় সামিরা ইনায়াকে বলল,
-আজকে অন্তত সুন্দর করে সাজ।
-না না না!
– আমি তোকে সাজিয়ে দিচ্ছি। কোনো না না শুনবো না।
-প্লিজ জোড় করিস না সামিরা।
-আর কোনো কথা শুনবো না। এখানে এসে বস তো।আমি তোকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছি।
সামিরা খুব হালকা করে ইনায়াকে সাজায়। তবে লিপস্টিক দিতে গেলেই ইনায়া সামিরা হাত আটকে বলে,
-লিপস্টিক দেওয়া যাবে না।
-ওমা! কেন?
-নীল ভাই বলেছে লিপস্টিক নিলে আমাকে পেত্নীর মতো লাগে। তাই নিতে মানা করেছে।
সামিরা সন্দেহের চোখে ইনায়াকে দেখে। কৌতুহলী হয়ে বলে,
-এই সত্যি করে বল তো,তোর নীল ভাই কি তোকে পছন্দ করে?
-তা কোনোদিনই সম্ভব না সামিরা। এমনকি আমি ওনায় ভালোবেসে ম*রে গেলেও উনি আমায় পছন্দ করবেন না।
সামিরা ইনায়ার কাধে হাত রাখে। অবাক হয়ে বলে,
-ইনায়া! তারমানে তুই?
ইনায়ার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। কাদতে কাদতে বলে,
-আমি কিচ্ছু জানি না। আমার কী হয়েছে জানি না। কেমন অস্থির অস্থির লাগে ওনাকে দেখলে। হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায়।
সামিরা ইনায়ারে শান্ত করে বলল,
-কবে থেকে?
-গত তিন চারদিন হবে…
-আচ্ছা শান্ত হ!
-কীভাবে হব.. বল তুই.. । ওনার ভালোবাসার মানুষ আছে। সে সাধারণ মানুষ না,একদম অপ্সরা। অনেক মেধাবী। ওরা একসাথে আমাদের ভার্সিটিতে জয়েন করবে। দিন রাত সে মেয়েকে নিয়ে আমায় কথা শোনায় নীল ভাই।
সামিরা বাকরুদ্ধ। ইনায়াকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিয়ে সে চলে যায়।
.
.
.
ইনায়া,আনায়া ,সামিরা সবাই-ই আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে। গেট ধরার জন্যেও সবাই খুব এক্সাইটেড । ইনায়া আর সামিরা মিলে দুষ্টুমি করে বিভিন্ন রকমের জুস বানিয়েছে।ইটের গুড়া আর লাল মরিচ মিশিয়ে বানিয়েছে তরমুজের জুস।হলুদ আর লবণ দিয়ে বানিয়েছে ম্যাংগো জুস।করোলা আর কাঁচামরিচ মিশিয়ে বানিয়েছে কাঁচা আমের জুস।আর নরমাল পানির জায়গায় দিয়েছে অনেক লবণ দেওয়া পানি। সন্দেশের ভেতরে দিয়েছে গোল মরিচের গুড়া,কালো জাম এর মধ্যে দিয়ে কাঁচা মরিচ। এগুলো সহ আরো অনেক উল্টাপাল্টা রেসিপি তৈরি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে গেট ধরে। বরের গাড়ি এখনি চলে আসবে। ইনায়াকে দেখে নীল গিয়ে ইনায়ার সাথে মিশে পেছনে দাঁড়ায়। দুই হাত ইনায়ার দুদিকে দিয়ে। যেন কারো ছোঁয়া না লাগে ইনায়াক গায়ে। নীল সব আইটেম এর নাম ভালো করে শুনে নেয়। এরই মাঝে বরের গাড়ি ঢুকে পরে। আরান নেমেই সামনে নীলকে দেখে মুখ ফ্যাকাশে করে দাঁড়িয়ে পড়ে। খাল রিদ কে কিছু বলার কথা তো মনেই ছিল না তার। এই চিন্তায় চিন্তায় সামনে এগিয়ে যায়। সামিরা করোলার জুস নিয়ে আরানকে দিতেই আরবান ঢক ঢক করে খেতে থাকে। নীলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আরানের উপর। এরপর হাত বাড়িয়ে ইটের গুঁড়ো আর শুকনো মরিচ মিশ্রিত ধুস নিয়ে রইদএর হাতে দেয় নীল।
হেঁসে বলে,
-সম্পূর্ণ না খেলে এক লাখ টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে।
সামিরা আর ইনায়া অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকায় ।সামিরা ইনায়ার কানে ফিসফিস করে বলল,
-আরেহ্ ভাইয়া তো পুরনো খেলোয়াড়!
আরানের জুস খাওয়া দেখে রিদ স্বস্তি বোধ করে । তার ভাই যখন খেতে পেরেছে,সেও খেতে পারবে। গ্লাস টা হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই বমি করে দেওয়ার মতো অবস্থা হয় রিদের। অসহায় চোখে তাকায় নীলের দিকে। নীল ঠোঁট নাড়িয়ে ইশারা করে,
-এক লাখ মাত্র।
(চলবে…….)
পর্ব – ১৫
রিদ মুখ ভর্তি জুস নিয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে রয়েছে নীলের দিকে।না পারছে গিলতে,না পারছে ফেলতে।পকেট থেকে ১ লাখ টাকা খসে যাবে এখন,এই চিন্তায় আড়চোখে একবার আরানকে দেখল।এদিকে আরান বেচারা পড়েছে এক মাইনকার চিপায়।একবার তাকায় বন্ধুর দিকে,আরেকবার তাকায় ছোট ভাইয়ের দিকে।
নীল ইশারায় রিদকে বলে,
-খেয়ে ফেলো,খেয়ে ফেলো।
রিদ উপায় না পেয়ে চোখ বুজে ঢক করে গিলে ফেলে।
ইনায়া আর সামিরা মুখে হাত দিয়ে চেপে হাসছে।
রিদ অসহায় ভঙ্গিতে নীল কে বলে,
-ক্ষমা হয়েছে আমার,ভুল করে দিন।
জিভ কেটে থুতু ফেলে আবার বলে,
-ভাই,ভুল হয়েছে আমার,ক্ষমা করে দিন ,ভাই।
রিদের এমন ভ্যাবাচেকা খাওয়া অবস্থা দেখে সামিরা গ্লাসটা হাত থেকে নিয়ে নেয়।বড়দের মতো করে আদেশ করে বলে,
-থাক,আর খেতে হবে না।
নীল একহাতে সানগ্লাস পরে,অন্যহাতে ইনায়াকে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।
ঘটনার আগামাথা বুঝতে না পেরে ইনায়া নীলকে প্রশ্ন করল,
-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
-ছেলেদের মাঝে দাঁড়িয়ে কি করবি?
-আপনি তো কিছু বুঝেনই না।গেট ধরার মজাটাই তো এখন।
-না,এসব করতে হবে না।সবাই তাকিয়ে ছিল তোর দিকে।
-আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথেও এমন করেন?
-এর চেয়েও বেশি..
ইনায়া ঠোঁট ভেটকিয়ে নীলের সাথে সাথে চলে যায়।
.
খাবার খাওয়ার সময় নীল একেবারে ইনায়াকে সাথে করে নিয়ে আসে। এদিকে সামিরা খুজতে খুজতে আধা পা*গল হয়ে গেছে। ইনায়াকে দেখতেই টেনে নিয়ে বলল,
-কতো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে খেতে! পরে কিন্তু আমি দুটো রোস্ট পাবো না ইনু!
-আরে রিলাক্স ভাবি।দরকার হলে আমার ভাইয়ের রোস্ট তোমায় দিব।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আনানকে ইশারায় বলে,
-ঠিক আছে?
আনান মুচকি হাসে। ইনায়া সাথে সাথে বলে,
-লারকা হাঁসা তো ফাঁসা..
.
সামিরাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-আনান ভাইয়া তার বিখ্যাত হাসি দিয়ে সম্মতি জানিয়েছে। চল বিসমিল্লাহ্ বলে খেতে যাই এখন।
.
.
বিয়ে পড়ানো হচ্ছে এখন। সকলেই উপস্থিত। নীল এসে ইনায়ার পাশে দাঁড়ায়। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানোর পরে সকলে একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে। ইনায়ার চোখে খুশির ঝলক। জোড়ে করে চেঁচিয়ে উঠল ইনায়া আর সামিরা,
-দুলাভাই জিতছে,জিতছে জিতছে!
আরান ইশারা করে নীল আর রিসান এর দিকে।
বলে,
-ইজ্জত বাঁচা মামা!
নীল ইশারায় গালি দেয়। তবে আরান এর অনুরোধে রিসান বলল,
-ভাবি জিতেছেন!
রিসান নীলকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-তুইও বল শা*লা। পাল্লা হালকা হয়ে যাচ্ছে। একা চিল্লাতে পারবো না।
নীল পাত্তা না দিয়ে বলল,
-বউ এর বান্ধবি জিতছে।
রিসান নীল এর মুখ শক্ত করে চেপে ধরে ইনায়াকে দেখে। আরান দাঁত দিয়ে জিভ কেটে শর্মীর দিকে তাকায় । শর্মীর এসব কথা তে মনোযোগ ই নেই । সে ব্যস্ত এখন কান্না করতে। আরান হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সাথে সাথে তাকায় আবার ইনায়ার দিকে। ইনায়ার ও কোনো মনোযোগ নেই এদিকে। সে আনায়ার ছবি তুলে দিচ্ছে। নীলও সেদিকে তাকায়।
রিসানকে ধরে বলে,
-ও ছোট্ট পরী,শুনলেও বুঝবে নারে পা*গলা।
বলেই ডানে তাকাতেই দেখে সামিরা দাঁড়িয়ে। নীল গা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সানগ্লাস চোখে নেয়।
রিসান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
-এসব বাচ্চামো করার বয়স নেই আমাদের। পোলাপান দের দেখাদেখি কিছু করবি না।
সামিরা আড় চোখে নীলকে দেখে ইনায়ার কাছে গিয়ে
বলে,
-কীরে তোর সো কল্ড ভাই আমাদের পোলাপান ভাবে দেখি!
-ওনার কথা বলিস না,নিজে বুড়ো হয়ে গেছে তো।
-আমাকে দেখেই ভাবভঙ্গি বদলে কেমন শক্ত হয়ে গেল যেন।
-ওসব ভাব দেখিয়ে করে,বাড়িতেও ওমন বাংলার পাঁচ করে রাখে মুখ। আমি তো ওনাকে হাসতেই দেখি না দোস্ত। এতো গম্ভীর।
-আর তোর আনান ভাইয়া?
-আমার ভাইয়া তো সেরাহ্ ভাবি! বিয়ের পরে তোমাকে হাসাতে হাসাতে পা*গল করে দিবে।
-উফফ্ ধুররর্
ইনায়া ঝুকে সামিরার মুখের দিকে তাকায়।
মুচকি হেসে বলে,
-উমমম্, লজ্জা পাচ্ছে দেখি….
.
.
.
রজনীগন্ধা আর গোলাপ ফুলের মালা আনতে ইনায়াকে পাঠানো হয়। ইনায়া মালা আনতে যেতেই দেখে রুমের দরজার সামনে রিদ দাঁড়িয়ে। রিদ কে দেখে বেশ ঘাবড়িয়ে যায় ইনায়া। তখন ওসব খাওয়ানোর জন্য এখন যদি প্রতিশোধ নেয়?
টিপ টিপ করে ঘরের দিকে পা বাড়াতেই রিদ ডাক দেয়,
-excuse me!
ইনায়া দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে মালা নিয়ে বেড়িয়ে আসে।
রিদ পেছন থেকে ডেকে বলে,
-নাম্বার এর জন্য ডেকেছিলাম। আমি তো ভূত না যে খেয়ে ফেলবো!
তবে কে শোনে কার কথা।তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে গিয়ে নীলের গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে পড়তে গেলেই নীল ইনায়াকে শক্ত করে ধরে নেয়।
চিন্তিত হয়ে বলল,
-কী হয়েছে?
-কি..কিছু না।
-সাবধানে চলাফেরা করবি। একা আসলি বলেই আমি আসলাম।
ইনায়ার মনটা হালকা হয়। মনে মনে বলল,
-তারমানে ঐ ছেলের কথা শুনেনি নীল ভাই। নাহলে তো এ বিয়েতে ঝামেলা বেঁধে যেত।
-কী হলো? কী ভাবছিস?
-কিছু নাতো।
-এভাবে যেতে থাকলে আবার পড়ে যাবি,আর মালা গুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। আমার হাতে দে ।
ইনায়া ঝটপট করে নীলের হাতে দিয়ে দেয়। তবে নীল হাতে নিয়েই ইনায়ার গলায় পড়িয়ে বলে,
-যা,এভাবে নিয়ে যা।
ইনায়া হকচকিয়ে যায়। তবে মনে মনে বেশ খুশি হয় সে। উপর উপর রাগ দেখিয়ে বলল,
-এটা কী করলেন নীল ভাই? বিয়ের মালা পড়তে হয় না।
নীল চট করে মালা খুলে নেয়। বলে,
-জানলাম। আমি দিয়ে আসছি এগুলো,তুই যা।
ইনায়া চলে যায়। তার খুশিতে এখন নাচতে ইচ্ছে করছে। তার নীল ভাই তাকে মালা পরিয়ে দিয়েছে!
সোজা গিয়ে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-আজ আমি অনেক খুশি…
-কেন কেন?
-আজকের মতো ভুলের যেদিন সঠিক হয়ে পুনরাবৃত্তি ঘটবে সেদিন বলব।
-কী ছাইছাতা বলছিস! চল ,আয়না ধরবো এখন।
-হু,চল। দেখি আমাদের জিজু কতো রোমান্টিক!
মালা পড়ানোর পরে ইনায়া শর্মী আর আরানের সামনে আয়না ধরতেই সামিরা আরানকে প্রশ্ন করল,
-ভাইয়া,আয়নায় কি দেখতে পাচ্ছেন?
আরান একটু ভাব নিয়ে শর্মীর দিকে তাকায়। বুক ফুলিয়ে বলল,
-আমার ভবিষ্যত বাচ্চাদের মাকে…
শর্মী ডান হাতের কনুই দিয়ে আরানকে ধাক্কা দেয়। এদিকে চারপাশ অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ছে। ইনায়া শর্মীর কানে কানে এসে বলে,
-বাচ্চাদের! বাচ্চাদের মানে এক ডজন শ্যিওর!
শর্মী লজ্জায় আর তাকাতে পারছে না। আরান পরিস্থিতি সামলে আবার বলল,
-আমার সারা জীবনের সকল ভালো কাজের ফসল।
-আর আর?
-আর আমার বউকে।
সবাই তখন হাততালি দেয়।
অনু হঠাৎ করে শর্মীকে বলে ওঠে,
-শর্মী আপু,তুমি আয়নায় কি দেখতে পাচ্ছো?
-ফুচকার মিষ্টি টকের মতন মিষ্টি একটা পাংখু জামাই।
আরান দাঁত চেপে হেসে বলল,
-এখনো ভুলোনি নামটা?
-এ জনমে সম্ভব না পাংখু।
.
ইনায়া উঠে সামিরার কাছে যায়। পাশে বসে চোখ বুঝে বলতে শুরু করে,
-দোস্ত
-হুম
-কেমন আছিস?
সামিরা উঠে দাঁড়ায়। ভেংচি কেটে বলল,
-এটা কোনো প্রশ্ন?
ইনায়া চোখ বুজে। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে,
-কী করিস?
সামিরা কোনো জবাব দেয় না। ইনায়া আবার বলল,
-শোন…
…..
-আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়া কতো রোমান্টিক। নীল ভাই এমন না কেন?
…..
-ইশশশ্ দোস্ত! আমি কল্পনায় কী কী ভেবেছি জানিস? কিন্তু নীল ভাই অনেক গম্ভীর…
……
-কথা বল…
সামিরার কোনো জবাব আসে না। ইনায়া মুখ থেকে হাত সরায়। সামনে সামিরাকে না দেখে পাশে তাকায় ইনায়া। নীল পায়ের উপর পা তুলে ফোন চালাচ্ছে। ভয়ে কেঁপে কেঁপে বলল,
-নী… নীললল ভা..ভাই…
নীল ফোন নামিয়ে জবাব দেয়,
-পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখা মেয়ের মুখে আমার নাম মানায় না,আবার আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কোনো কথাও মানায় না।
ইনায়ার এখন নিজের গালে নিজে নিজে থাপ্পড় খেতে ইচ্ছে করছে। আর কত অপমানিত হবে এভাবে সেচ্ছায়। কপালে হাত দিয়ে বসে রইল সে। নীল পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইমায়াকে বলল,
-যোগ্যতা হলে আমাদের কথা বলবি,তার আগে নয়।
পেইজ:সবার আগে গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন