পর্ব – ২
বিরক্ত হয়ে ফোন উল্টিয়ে বসে রইল ইনায়া। মাত্র দুই দিনের জন্য বাইরে কাজে গিয়েছে,এখন আবার আদিখ্যেতা করে ভিডিও কল দিচ্ছে। ভালো দুটো কথা বলার জন্যে যে কল দিয়েছে তার কিন্তু নয়। তার বিষবাক্য শোনানোর জন্য কলটা করেছে। দুবার রিং বাজার পরে আর কল আসলো না। তবে মিনিট পাঁচেকের মাথায় অনু হুরমুর করে ইনায়ার ঘরে প্রবেশ করে।
ভিডিও কলের ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে ইনায়াকে দেখাতে দেখাতে বলে,
-ভাইয়া,ইনুপু পড়ছে। না পড়লে আমি জানিয়ে দিব। কথা বলবে?
ফোনের ওপাশ থেকে ভারী মোটা কণ্ঠের ছোট্ট একটা জবাব এলো,
-না।
এইটুকু বলেই কলটা কেটে দেওয়াতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অনু। অসহায় হয়ে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-ভাইয়াকে রাগাও কেন ইনুপু?
ইনায়া কোনো জবাব না দিয়ে ঠাস্ করে বই বন্ধ করে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইনায়ার পাশের রুমই আনানের। তাই নিজের ঘর থেকে বের হয়ে নিচে যেতে গেলে আনানের সাথে দেখা হয় সচারাচর। আজও ব্যতিক্রম নয়। আনানের রুমের সামনে দিয়ে যেতে গেলেই আনান হাঁক ছেড়ে ডেকে বলে,
-ইনু!! এদিকে আয়।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইনায়া বলে,
-বলো ভাইয়া।
-আবার ভাইয়া? তোকে মারার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আর ভেতরে আসতে বলছি না?
-নাহ্,ভেতরে যাব না।
-ভাইয়া বাসায় নেই,আজ পড়তে বসার জন্য তোকে কেউ আমার রুম থেকে বের করে দিবে না।
ইনায়ার রাগটা ঝট করে বাড়ে গেল ভাইয়া কথাটা শুনেই।
হনহন করে রুমের ভেতরে গিয়ে বলল,
-তোমার ঐ খাটাস ভাইকে না এই ইনায়া ভয় পায় না! বলে দিও তাকে।
ইনায়ার রাগ দেখে আনানও ব্যঙ্গ করে বলে,
-কিন্তু ঐ খাটাস ভাইকে দেখলেই কার যেন গলা দিয়ে আর আওয়াজ বের হয় না।
-ফালতু কথা বলো নাতো। আমি নিচে গেলাম।
ইনায়া যেতে গেলেই আনান পুনরায় ডাক দেয় ,
-ইনু শোন!
-বলে ফেল।
-তোর কি কিছু মনে হয়? মানে কিছু অনুভূত হয়?
-কী নিয়ে?
-এইযে ধর,আমি তোকে ভাইয়া বলতে বারণ করি। কেন করি তা নিয়ে কিছু মনে হয় না?
-হ্যাঁ মনে হয় তো।
আনান হা হয়ে প্রশ্ন করে,
-কী মনে হয়?
-মনে হয় তুমিও তোমার অসভ্য বড় ভাইয়ের মতো আমার থেকে দূরত্ব বাড়াতে চাও,তাকে যেমন ভাইয়া ভাইয়া ডেকে আবদার করি না, তুমিও তেমন চাও।
-ধুর্! আমার মাথা মনে হয়েছে তোর। নীল ভাই তো অনেক গম্ভীর,আনায়া ছাড়া কেউই ভাইয়াকে ভাইয়া বলে না। তুই তো ডাকিসই না। সে যাই হোক,আমি অতোটাও গম্ভীর না। আর কী কারণ হতে পারে তাহলে ভাব তো।
ইনায়া গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল,
-উমমমমম্ ভাবলাম।
আনান অতি উৎসুক হয়ে বলল,
-কী কী কী???
-এই যে , তুমি একটা পা*গল।
ইনায়ার কথা শুনে আনান তেড়ে আসতেই ইনায়া এক দৌঁড়। গন্তব্য সোজা বড়মার ঘর। দুতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাম পাশের শেষ প্রান্তের রুমটাই আকবর দেওয়ান ও শিমু জাহান এর। সিঁড়ির ডান পাশের রুম আনানের এবং তার পাশের রুম ইনায়ার। ঘরে শিমু জাহানকে দেখতে পেয়েই ইনায়া গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-আচ্ছা বড় মা আমাকে কেউ মারতে আসলে তুমি তার কী করবে?
প্রশ্নের আগা মাথা বুঝতে না পেরেই তিনি বলেন,
-মেরে একেবারে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব।
আনান দরজা থেকেই বড়মার কথা শুনতে পেয়ে ইনায়াকে চোখ রাঙিয়ে শাসালো। এদিকে ইনায়া পুরো নিশ্চিন্ত হয়ে দাঁত বের করে খিলখিল করে হেসেই চলেছে।
.
.
.
.
হায়ার ম্যাথ এর যোগজীকরণ করতে গিয়ে ইনায়ার মাথায় বিরাট বড় জটলা পেকে গিয়েছে। এদিকে কাল কোচিংয়ের পড়া শেষ না করতে পারলেই বাড়িতে কল আসবে। তাই আর কিছু না ভেবেই ইনায়া তার বই খাতা নিয়ে সোজা চলে যায় আনানের রুমে। দরজা দুবার নক করতেই আনান বলে,
-খোলা আছে।
সাড়া পেয়ে ইনায়াও ভিতরে ঢুকে যায়। আনানের কাছে আবদার করে বলে,
-ভাইয়া প্লিজ এই ম্যাথ ক্যালকুলেশন টা বুঝিয়ে দাওওওও….
নিজের পড়া নিয়ে ব্যস্ত আনান এক ঝলক ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-সরি ইনু,তোকে আমি বুঝিয়ে দিতে পারব না। ভাইয়া কড়া করে নিষেধ করে দিয়েছে যেন তোকে কিছু না বলে দেই।
-কেন! কী সমস্যা তোমার ভইয়ের?
-তুই যাতে নিজে নিজে চেষ্টা করিস এই জন্যই মানা করেছে। এখন নিজের রুমে যা।
-আমাকে ঘর থেকে বের করেও দিতে বলেছে বুঝি?
আনান মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে বলল,
-পড়াশোনা নিয়ে কোনো আপোস নয়।
আনানের কথায় পাত্তা না দিয়ে ইনায়া একই ভাবে দাড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পড়ে অসহায় হয়ে বলল,
-আজ সে বাসায় নেই,এটা বুঝিয়ে দাও না প্লিজ…
ইনায়ার এমন আবদারে মায়া হয় আনানের। রাজি হয়ে যায় বোঝানোর জন্য।
.
.
ঘণ্টা খানেক হয়ে গেল ইনায়া এখনো অংক করছে আনানের কাছে থেকে। এদিকে অনু পাঁচ থেকে ছয়বার ইনায়ার ঘর থেকে ঘুরে এসেছে সে কী করছে তা দেখার জন্যে। একেবারে খুঁটে খুঁটে হিসাব দিচ্ছে সে নীল কে। প্রথম কয়েকবার তাকে জানায়,
-ইনুপু মনে হয় ওয়াশরুমে,মনে হয় নিচে,মনে হয় ছোটমার কাছে,মনে হয় মার কাছে… ইত্যাদি।
অবশেষে ধৈর্য হারা হয়ে নীল তাকে আদেশ করে ভিডিও কলে পুরো বাড়ি তাকে দেখাতে। আদেশ পাওয়া মাত্র কাজে লেগে পড়ে অনু। একে একে সব দেখাতে গিয়ে চোখ গিয়ে থামে আনানের রুমে।
ইনায়াকে দেখতে পেয়েই অনু চিৎকার করে উঠল।
-ইনুপু! তুমি এখানে??? আমি সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম তোমায়।
অনুকে দেখে অবচেতন মনে শুকনো ঢোক গিলে ইনায়া। অনু তার হাতের ফোনটা নিয়ে ইনায়ার সামনে ধরে।
নীল শীতল চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এরপর শান্ত শীতল কণ্ঠে বলে,
-পড়া শেষ?
ইনায়া কাঁপা গলায় বলে,
-একটা ম্যাথ বুঝতে পারছিলাম না,তাই আনান ভাইয়ার কাছে এসেছিলাম।
নীল ছোট করে ঢোক গিলে বলল,
-ভালো করেছিস,এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পর। ম্যাথ কাল করা যাবে।
-কিন্তু কোচিং কালই…
-কাল ছুটি দিয়েছে। কালকের পড়া পরশু পড়াবে।
এটুকু বলেই কল কেটে দেয় নীল। ইনায়া আর আনান দুজনেরই জানে পানি নেয় আর। তাদের দেখা এ পৃথিবীর সবচেয়ে রাগী মানুষ টাকে অমান্য করার ফল যে কী হবে ভেবে পাচ্ছে না তারা।
তখনই আনান আতঙ্কিত হয়ে বলল,
-তোকে বলেছিলাম আমি বোঝাতে পারব না ইনায়া! নিজের পড়া নিজেই বুঝতি। কোচিং প্রাইভেটে কী করতে যাস? ভাইয়া এখন ভাববে তোর পড়া ফাঁকি দেওয়াতে আমিও সাহায্য করি।
ইনায়া কোনো জবাব না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
তার মনে পরে যায় সেদিনের কথা যেদিন আনান ওকে একটা ইংলিশ প্যাসেজ বুজিয়ে দিয়েছিল বলে নীল সবার সামনে কীভাবে ওকে অপমান করেছিল। আনানকে বলে ছিল,
-যদি ইনায়ার ভালো চাস তাহলে আর কখনো ওকে পড়া বুঝিয়ে দিবি না। কারন এতে ও গাঁধীতে পরিণত হচ্ছে। নিজের চেষ্টায় পড়তে দে!
ভাইয়ের কথায় যুক্তি পেয়ে আনানও ইনায়ার পড়ার বিষয়ে নাক গলায়নি কখনো। এতো কিছুর পরেও ইনায়াকে নিয়ে রুমে লক করে রেখেছিল।হাত মুঠো করে কাঁচের গ্লাস ভেঙে ইনায়াকে দিয়ে তার পরিষ্কার করায় নীল। র*ক্ত দেখে দৃষ্টি ঝাপসা হয় তার,ব্লা*ডফোবিয়া আছে জেনেও এমন করা মানুষটার প্রতি ঘৃণা ছাড়া কিছুই নেই ইনায়ার মনে।
Btw,plot twist kemon legeche?
পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
#episode:2
Written by Samia Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন beshi beshi like comment share korben sobai