পর্ব-১
-অবেলায় ঘুম থেকে ওঠার কোনো নিয়ম নেই এ বাড়িতে।
গম্ভীর স্বরে পুরুষালি এক কণ্ঠস্বর ভেসে আসে ইনায়ার কানে। ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক গম্ভীর পুরুষ। পুনরায় চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে বলল ,
-প্লিজ ভাইয়া আরেকটু ঘুমাই..
-কতবার বলেছি আমাকে ভাইয়া ডাকবিনা ইনু!
– তো কি বলবো আনান ভাইয়া?
-আবার ভাইয়া!
আনান তেড়ে আসতে গেলেই ইনায়া উঠে এক দৌঁড় দেয়। দ্রুত সিড়িতে এলোমেলো পা ফেলে নিচে চলে আসে সে। এদিকে আনানও পেছন পেছন দৌঁড়াতে থাকে।
খাবার টেবিলের সামনে সকালের নাস্তা পরিবেশনে ব্যস্ত দেওয়ান বাড়ির মেজো বউ রুবিনা ইয়াসমিন। ইনায়া দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-মেজো মা.. দেখো…
রুবিনা ইনায়াকে এক হাতে ইনায়াকে আগলে ধরে বলল,
– হাঁপাচ্ছিস কেন এভাবে ইনু,কত বলেছি শান্ত হয়ে থাকতে।
– ভাইয়া… ভাইয়া মারবে..
রুবিনা ইয়াসমিন এবার আনানের দিকে তাকায়। চোখ গরম করে বলে,
-ওর পিছনে পড়লি কেন? খেতে বস!
আনান শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে,
-বেলা বাজে আটটা মা! মহারানী এখনো ঘুমাচ্ছিলেন! তাই এভাবে নিয়ে এলাম।
রুবিনা ইয়াসমিন ধমক দিয়ে আনান কে বলে,
-তাতে তোর কী? একদম ওর সাথে লাগাতে আসবি না আনান!
মেজোমার থেকে এমন কথা শুনে ইনায়ার সাহস যেন দশ গুণ বেড়ে গেছে। মুখ ভেঙচি কেঁটে চেয়ার টেনে বসে পড়ে সকলের সাথেই। আনান এবার ব্যঙ্গ করে বলে,
-তোমার আদরের মেয়ে মুখ না ধুয়ে,ব্রাশ না করেই খেতে বসে গেল! বেচারা এক যুগ পরে খাবার পাচ্ছে।
আনানকে কোনো জবাব না দিয়েই ফ্রেশ হতে চলে যায় ইনায়া।
ইনায়ার পাশের চেয়ার টেনে আনান বসতে গেলেই বাঁধা পড়ে বাড়ির বড় বউ শিমু জাহান এর থেকে।
আতঙ্কিত হয়ে বলে,
-ঐ চেয়ারে বসিস না বাবা। যে যার চেয়ারে গিয়ে বস। সকাল সকাল ঝামেলা আর ভালো লাগে না।
আনান বুঝতে পেরে এক ফালি হেসে বলে,
-উফফ্ রিল্যাক্স বড় মা। আমার চেয়ারেই বসছি আমি। কিন্তু তোমার এতো ভয় পাওয়া মটেও কাম্য নয়।
আয়তাকার টেবিলের এক প্রান্তে বসেছে, বাড়ির বড় কর্তা আকবর দেওয়ান। তার পাশেই এ বাড়ির বড় মেয়ে ইনায়া দেওয়ান। ইনায়ার ঠিক অপর প্রান্তে মুখোমুখি বসা এ বাড়ির মেজো ছেলে আনান দেওয়ান অন্তু। ইনায়ার অপর পাশের চেয়ার ফাকা থাকলেও আনানের অপর পাশের চেয়ারে বসেছে তার একমাত্র ছোট বোন আনায়া দেওয়ান অনু।
ব্রেডে জ্যাম লাগাতে লাগাতে ব্যস্ত হয়ে আনান ইনায়ার উদ্দেশ্য বলল,
-তোর প্রাইভেট আজ দশ টায় না ইনু?
ইনায়া কৌতুহলী হয়ে জবাব দেয়,
-হু,কেন?
-কেন আবার কী? আমি নিয়ে যাব।
-তুমি আর নিয়ে যাওয়ার কথা বলো না ভাইয়া। তুমি নেওয়ার কথা যেদিনই বলো মিস সেদিনই পড়ানো বন্ধ রাখে। তুমি আমার প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য একটা ব্যাড লাক।
-তোর মিস পড়ানো অফ করলে আমার কী করার? এতো কথা বলিস না। চুপচাপ খেয়ে রেডি হয়ে নে।
ইনায়াও চুপচাপ খেতে থাকে। এ বাড়ির ছেলেদের মেজাজ তুঙ্গে থাকে সবসময়। কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কার যে কখন কী হয়। ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ভাইব্রেট করে বেজে ওঠে ইনায়ার ফোন। গ্রুপে মিস মেসেজ পাঠিয়েছে আজ তিনি পড়াতে পারবেন না। ইনায়া কটমট করে তাকায় আনানের দিকে।
রেগে বলে,
-ব্যাড লাক একটা! কে বলেছিল নিয়ে যেতে চাইতে???
আকবর সাহেব বিষয় টা থামানোর জন্য উচ্চস্বরে বলে,
-আহ্ ,খাওয়ার সময় কথা বলতে নিষেধ করেছি।
ইনায়া এবার মুখ বুজে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে আনানের দিকে।
আনান ও বেশ অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলে,
-তোর ম্যামের দোষ আমার উপরে চাপিয়ে দিচ্ছিস ইনু?
ইনায়ার এখন আর কথা বলার মুড নেই। পড়া থাকেই একদিন পরপর। আজ বন্ধ মানে আবার পরশু যেতে পারবে । এই পড়া ছাড়া বাইরে যাওয়ার সুযোগ ই হয় না তার। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে উপরে নিজের রুমে চলে যায় সে।
.
.
.
.
.
পড়াশোনার কথা শুনে নাক সিটকানো মেয়েটা খাতা কলম নিয়ে পড়তে বসেছে। বিরল এ দৃশ্য দেওয়ান বাড়িতে বছরে কয়েকবারই ঘটতে দেখা যায়। তা হলো ইনায়ার পরীক্ষার কয়েকদিন আগে থেকে। কলেজ থেকে কড়া নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে টেস্ট পরীক্ষায় পাশ না করলে উচ্চ মাধ্যমিক দিতে পারবে না। তাছাড়াও বাড়িতে ভিলেন চরিত্রে রয়েছে একজন। তার অত্যাচারের জন্য আরো পড়তে হচ্ছে ইনায়াকে। কোনো রকমে উচ্চ মাধ্যমিকে একটা মোটামুটি রেজাল্ট করলেই হবে। ভার্সিটি নিয়ে আর চিন্তা নেই। ইনায়ার দাদা তাদের ভার্সিটির ফাউন্ডার,আবার ভিসি হিসেবে রয়েছেন ওর বড়বাবা প্রফেসর আকবর দেওয়ান। তাছাড়াও ইনায়ার বাবাও প্রফেসর হিসেবে রয়েছেন , প্রফেসর কামরুল দেওয়ান, ডিপার্টমেন্ট অব বোটানি। পড়াশোনার প্রেসার কমে যাওয়ার মতো দিবাস্বপ্ন দেখতে দেখতেই দরজায় কড়া অনু।
ইনায়া আওয়াজ দিতেই অনু উকি দিয়ে বলে,
-বড় ভাইয়া পাঠিয়েছে,তুমি ঠিকমতো পড়ছো নাকি তার দেখতে।
এতো সুন্দর পরিকল্পনা তে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য অনুর উপর বেশ রাগ হয় ইনায়ার। ঝাড়ি দিয়ে বলে,
-তোর বড় ভাই যে কাজে গিয়েছে তার মন দিয়ে করতে বল। আমার জীবন অতিষ্ট করার দায়িত্ব তাকে দেয়নি।
অনু মাথা নেড়ে চুপ চাপ চলে যেতে গেলে ইনায়া আবার ডেকে বলে,
-আর শোন! এসব তোষামোদ করা বন্ধ কর! ওনাকে খুশি করে লাভ নেই।
-কিন্তু রাগালে বিরাট ক্ষতি ইনুপু। তুমি বুঝবে না। ভাইয়ার রাগলে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ফেলবে। আর কাল এসে তোমাকে পড়া ধরবে,আমাকে জানিয়ে দিতে বলল। পড় তুমি মন দিয়ে। আর না পড়লে ভাইয়াকে জানানোর দায়িত্বটা আমাকেই দিয়েছে। আসছি আমি এখন।
পড় পড় বলতে বলতে অনু দ্রুত চলে যায়।
ইনায়ার মাথার ভেতরে মনে হচ্ছে আগুন জ্বলছে। ঐ লোক দূরে গিয়েও শান্তি তে থাকতে দিল না। বড় বাবা শাসন ঠিকই করেছিল, কিন্তু মেজো বাবা সাথে রেখে আস্কারা দিতে দিতে বাঁদর বানিয়েছে! মেজো বাবার প্রতি একরাশ অভিযোগ নিয়ে চুল চেপে ধরে বসে আছে ইনায়া। দেওয়ান ব্রাদার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইনায়ার মেজো বাবা হুমায়ূন দেওয়ান এবং ঐ কোম্পানির সিইও বানিয়েছেন তার আদরের ভাতিজা দেওয়ান নীল কে । বর্তমানে এই অসভ্য, বদমেজাজি মানুষটার উপর রাগ আওরাচ্ছে ইনায়া। সে সময়ই তার কাছে কল আসে, ভিডিও কল। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে “অসভ্য” দিয়ে সেভ করা
নাম।
পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
Written by Samia Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা,আপনাদের জন্য একটু অন্যরকম ভাবে নতুন আরেকটি গল্প শুরু করলাম।