golpoআড়ালে তুমি

আড়ালে তুমি পর্ব – ৯,

আড়ালে_তুমি

সামিয়া_সারা

কাজিনরিলেটেডগল্প

পর্ব – ৯

শরীরের উপর কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে নীলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ইনায়া ছোট্ট শরীর নিয়ে নীলের চওড়া বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে রয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় এতো মায়াবী লাগছে তাকে। তবে সে মায়া নীলের মন গলাতে পারে না। ওমনি শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে সে। হুট করেই নীলের এমন কর্মকান্ডে ইনায়া আতঙ্কিত হয়ে জেগে উঠেছে।

তাড়াহুড়ো করে উঠে আমতা আমতা করে বলল,

-সারা রাত ঘুমাইনিতো,আ..আমি আসলে মাত্রই এসেছিলাম।স.. সরি.. হুট করে ঘুমিয়ে পড়েছি.. বুঝিনি এমন হবে….

নীল উঠে ইনায়ার হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল, দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-বুঝিসনি কী করে? এসব নাটক আমার সাথে করবি না!

ইনায়া চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।

নীল পুনরায় বলে,

-আমার কাছে আসবি না আর। না হয় এভাবেই ব্যাথা পেতে হবে!

বলেই ইনায়াকে ছেড়ে দেয় নীল । কটাক্ষ করে বলে,

-হাত চেপে ধরেছি বলে অস্বস্তি বোধ হবার কথা তো না তোর। তুই এসবে অভ্যস্ত।

কথাটা ইনায়ার কানের মধ্যে বাজতে থাকে। এর আগে নীল ভাই এতো বকাবকি করেছে, কষ্ট দিয়েছে! কিন্তু চরিত্র নিয়ে কথা বলল আজ প্রথম। ইনায়ার গলার মধ্যে মনে হচ্ছে কিছু আটকে আছে। কান্না পাচ্ছে ভীষন করে।নীল সামান্য সময়ের জন্য হাত চেপে ধরলেও ইনায়ার হাত পুরো র*ক্ত লাল হয়ে গিয়েছে। সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায় ইনায়া । নীল এত অপমান করছে যে মনে হচ্ছে না কখনো আর তার মুখোমুখি দাঁড়াতে। নীলের জ্বর এখন নেই বললেই চলে, বৃষ্টির পানি লেগে যে জ্বর আসে তা নীলের শরীরে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় সে,আরানের কল এসেছিল একটু আগে। ছেলেটা ঝামেলা পাকিয়ে রেখেছে, পোক্ত হাতে সামলাতে হবে এখন।

নীল সকলের সাথে খাবার টেবিলে বসেছে।

তাকে দেখেই রুবিনা ইয়াসমিন বললেন,

-ইনুকে সেই কখন পাঠিয়েছিলাম তোকে তুলতে। এখন পাঠালো সে মেয়ে! কিন্তু ও কোথায়?

-কে কোথায় তা দেখার সময় নেই এখন মেজোমা। আমায় খেতে দাও,কাজ আছে একটু জরুরি।

আকবর দেওয়ান ও নীল মুখোমুখি বসেছে। তবে দুজনের মধ্যে কোনো কথা নেই,এমনকি চোখাচোখি ও হয়না। যে যার জেদ নিয়ে পড়ে রয়েছে। বাবা ছেলের রাগ অভিমানের যাঁতাকলে পড়েছেন শিমু জাহান। তাদের দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাজে মন দেন তিনি। সকলের খাওয়ার মাঝে অনু ইনায়াকে এক কথায় জোড়পূর্বক টেনে আনে।

চেয়ারে বসিয়ে আয়েশা আক্তার কে বলল,

-ছোটমা,ইনুপু খেতেই চাইছে না! তুমি মেরে খাওয়াও তো। আমি এনে দিয়েছি ,বাকিটা করে দাও।

ইনায়ার মুখ ভার। লজ্জায় নীলের দিকে তাকাতে পারছে না। তবে চোখ বারবার সে মুখশ্রী দেখতে চায়। নির্লজ্জ হয়ে তাকিয়েই ফেলে নীলের দিকে।

সে চোখ বলছে,

-সরি নীল ভাই! সরি।

চোখের ভাষা নীলের বোধগম্য হয় কিনা বোঝা যায় না। তবে ইনায়ার দিকে দৃষ্টি পড়তেই আধ খাওয়া খাবারের মধ্যে পানি ঢেলে উঠে যায় সে। সকলের বাধা কে নেয় কানে! হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। ইনায়ার গলা দিয়ে আর খাবার নামে না। গলার মধ্যে কেমন যেন দলা পাকিয়ে আসছে। কোনো রকমে পানি দিয়ে গিলে উঠে পরে ।

.

.

.

শর্মী আর সামিরা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এসে দাঁড়িয়ে আছে
এক ঘন্টা বিশ মিনিট ধরে। তবে আরানের কোনো খোঁজ নেই। সামিরা বেশ বিরক্ত হয়ে শর্মীর দিকে তাকায়। এই গরমের মধ্যে এমন পরিবেশে আর বেশিক্ষণ থাকা তার জন্য সম্ভব না। এদিকে ইনায়ার সাথেও যোগাযোগ করতে পারছে না। ফোনটা ইনায়ার কাছে নেই। তবে এতো কাহিনী ওকে আজই জানাতে হবে।

সামিরা সব চিন্তা করে আর চুপ থাকতে না পেরে বলেই ফেলে,

-তোকে তো কালই বলেছিলাম উনি আসবে না। আমাকে নিজে বলেছেন যে তুই যেন বিয়ে করে নিস। তাও তুই সে ছেলের জন্য অপেক্ষা করবি?

-কাল ও বলেছিল,ও আমায় বিয়ে করবে! তুই এমন বলিস না।

সামিরা ভ্রু কুঁচকে আড়চোখে তাকায় শর্মীর দিকে।

বলে,

-আদোও বলেছিল? মনে কর তো ঠিক করে।

বেশ কিছুক্ষণ শর্মী চিন্তা করে।

সামিরা পুনরায় তাকিয়ে বলে,

-তুই যখন এখানে আসতে বলেছিলি,তখন উনি রাজি হয়েছিল?

শর্মী অকপটে না বলে। সামিরা শর্মীর কাধে হাত রেখে বলে,

-আশা করি বুঝেছিস। চল এখন।

শর্মী সামিরার হাত আটকে ধরে। ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,

-আরেকবার কল দেই…

ষাট বারের অধিক কল দিয়ে ফেলেছে এই অব্দি। প্রত্যেকবার এক উত্তর,

“কাঙ্খিত নাম্বার টি তেএই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না ,অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন ।ধন্যবাদ ।
সরি দ্য নাম্বার ইউ হ্যাভ ডায়ালড ইজ কারেন্টলি আনরিচেবল ,প্লিজ ট্রাই আফটার সাম টাইমস। থ্যাঙ্ক ইউ।”

শর্মি হতাশ হয়ে তাকায় সামিরার দিকে । যেন মুহূর্তে সে কান্নায় ভেঙে পড়বে । বিষয়টি সামিরা উপলব্ধি করতে পারে ।

শর্মীকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলে ,

-খবরদার চোখের পানি ফেলবি না ! যে ছেলে তোকে ধোকা দিয়েছে, তার জন্য কাঁদবি তুই ? বল বল ,তার জন্য কাঁদবি?

শর্মী কোন জবাব দেয় না ।কোনরকমে কান্না আটকায় ।সামিরা পুনরায় বলে ,

-শোন মেয়েদের একটা গেলে আরেকটা আসে । একদম মন খারাপ করিস না ।ঐ ছেলে ধোকাবাজ ।তুই চিন্তা করিস না । তোর কি এতো খারাপ অবস্থা নাকি! দেখতো আমাদের কুদ্দুস দুলাভাই তোর জন্য কেমন পাগল হয়ে আছে। তোর তো অভাব হবে না দোস্ত। এরপরও কষ্ট পাবি?

শর্মী চুল ঝাড়া দিয়ে সামিরার দিকে তাকায়। বলে,

-শর্মী আর এত সহজে কান্নার করার মেয়ে থাকবে না। ওকে আমি দেখিয়ে দিব যে ওকে ছাড়াও আমার আমি বিয়ে করতে পারি।

-এই না হলে আমার বান্ধবী।

-কালই তাহলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত পাত্র দেখতে আসছে তোকে। আমাদের সকলের কাঙ্খিত দুলাভাই। এখন বাড়িতে যাই ,রূপচর্চা শুরু করতে হবে তো ।

-শোন সামিরা ,মেয়েরা তাদের সর্বোচ্চ জেদ দেখায় তার শখের পুরষের সাথে কীভাবে জানিস?

-কীভাবে?

-বিয়ে করে। সেটা কুদ্দুসই হোক বা পাংখু আবুলই হোক না কেন!

অতঃপর দুই বন্ধু গলা জড়িয়ে ফিরে যায়।

.

.

.

জীবনে প্রথম কারো জন্য কষ্ট পাওয়ার পরিমাণএতো তীব্রতর হচ্ছে ইনায়ার কাছে। বাড়িতে কারো সাথে কথা বলতেও খারাপ লাগছে। তার একটা কথা বলার জন্য সকলের ভেতর কী উথাল পাথাল অবস্থা। ইনায়ার দৃষ্টি ঝাপসা,সে চোখ সকলের থেকে আড়াল করতে দ্রুত উঠে যায় ছাদে। বিকালে সে মাঝে মধ্যেই ছাদে আসে। ছাদবাগানের যত্ন নিতে। কাল ঝড় বৃষ্টির কারনে অনেক ডালপালা ভেঙে পড়েছে । ইনায়া সেগুলো পরিষ্কার করতে করতে চোখ যায় একটা বাক্সের দিকে।

মনে মনে আওড়াতে থাকে সে,

-গতকাল এই বাক্সটা নীল ভাই মার্কেট থেকে এনেছিল না? এটা তো ওনার অফিসের কাজের।

বাক্সটা নীলের হাতে তুলে দিলে তার অভিমান যদি কমে সে আশায় সেদিকে পা বাড়ায় ইনায়া। তবে কাছাকাছি যেতেই ব্যাথায় আহ্ সূচক আওয়াজ আপনা আপনি বেরিয়ে আসে ইনায়ার মুখ থেকে। পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে অসংখ্য কাঁচের টুকরো। কৌতুহলী হয়ে বাক্সটা হাতে নিতেই কয়েক কদম পিছিয়ে যায় ইনায়া। গতকাল যে সকল চুড়ি সে হাতে পড়েছিল এখানে তার প্রত্যেকটি সেট সহ রয়েছে। ইনায়া ছোট্ট মাথায় অনেকগুলো বড়বড় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

পায়ের যন্ত্রণা ভুলে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে,

-নীল ভাই এগুলো কিনলো কেন? আমাকে দেবে বলে? তাহলে ভেঙে ফেলেছে কেন? নাকি আমি পড়েছিলাম বলে রেগে ভেঙেছে এগুলো? কিন্তু…

ইনায়ার ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে আনানের ডাকে। আনান দৌঁড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ইনায়ার কাছে এসে বলে,

-ওহ্ এখানে তুই! পুরো বাড়ি তোকে খুঁজেছি।

ইনায়া জবাব দেয় না। আনান আবার বলতে থাকে,

-কাল তোকে কোচিং থেকে আমিই আনতে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভাইয়া অনেক গুলো কাজ দিয়ে দেয়। তুই কি রেগে আছিস ইনু?

ইনায়া ছোট করে জবাব দেয়,

-না।

আনান ছাদে আসাতে পুরো ছাদে ভ্যানিলা এর ঘ্রাণে ম-ম করছে। এই পারফিউম ইনায়ার পছন্দ বলে আনান সেই থেকে এটিই ব্যবহার করছে। আনান ডান হাতের উপরিভাগ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ইনায়াকে বলে,

-মনে খারাপ?

ইনায়া জবাব দেয় না। আনানের চোখ ইনায়ার পায়ের দিকে গেলেই ছাদে র*ক্ত দেখতে পায়। দ্রুত বসে ইনায়ার পায়ে হাত দিয়ে বলে,

-কী হয়েছে?

ইনায়া অপ্রস্তুত হয়ে পা সরিয়ে নেয়। তবে সে বাধা আনান মানে না। দ্রুত রুমে নিয়ে পায়ের কাটা জায়গা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়।

.

.

.

দেওয়ান বাড়ির সকলে সন্ধ্যায় একসাথে নাস্তা করে। সে আয়োজন বেশ বড়সড় করেই হয়। একেক জনের পছন্দ অনুযায়ী একেক দিনের রান্নার আইটেম থাকে। তবে চা এর মধ্যে রোজই থাকতে হবে। ইনায়ার পায়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে আনান ইনায়াকে ধরে নিয়ে আসে। এসময়ে সকলে একসাথে গল্প করে বলে কেউ আর এখানে থাকাটা মিস দিতে চায় না। তবে আজ হয় ব্যতিক্রম। ইনায়া কিছুতেই আসতে চাইছিল না। আনান জোড় করেই তাকে নিয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সকলের চোখ ইনায়ার পায়ের দিকে আটকে যায়। সাদা ব্যান্ডেজ সেদিকে আকর্ষণ করছে।

মা আয়েশা আক্তার উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-পায়ে কী হয়েছে?

আনান জবাব দেয়,

-ছাদ থেকে পায়ে কাঁচ বিধেছিল। আমি বের করে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছি। চিন্তা করো না।

রুবিনা ইয়াসমিন চায়ের ট্রে নিয়ে আসতে আসতে বলে,

-ছাদে কাঁচ এলো কীভাবে?

ইনায়া নীলের দিকে তাকায়। তবে নীল সেদিকে পাত্তা দেয় না কোনো। চায়ের কাপ ট্রে থেকে তুলে নিয়ে খেতে থাকে। ইনায়া আর আনানও কাপ নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।

ইনায়া নীলের পাশে বসতে গেলেই নীলের হাত থেকে কাপ পড়ে যায়। গরম চা ছিটকে গিয়ে লাগে ইনায়ার পায়ে। তবে ইনায়া প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তাকিয়ে থাকলো নীলের দিকে। নীল সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে উঠে দাঁড়ায়। শিমু জাহান এর দিকে ভাঙ্গা কাপের টুকরো গুলো তুলে দিয়ে তার ছোটমাকে বলে,

-ছোটমা, ব্যান্ডেজ টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তুমি একটু ঠিক করে দিও,আমি আসছি।

বলেই আনানকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যায় নীল।

পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন

(চলবে……)

Running

episode:9

Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি

Ager golper upor ba ei golpo niye apnader motamot share korben,parle ekta review diyen 🥺🫶🏻thank you 📌

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

আমাদের সিরাজগঞ্জ এর সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
Back to top button

Please Disable "ADBLOCKER"

আপনাদের জন্য কত কষ্ট করছি আর আপনারা "ADBLOCKER" ব্যবহার করছেন ? আমাদের ইনকাম নেই বললেই চলে, দয়া করে "ADBLOCKER" টা বন্ধ করে সাহায্য করবেন । Please Disable "ADBLOCKER", Its Help us to Add More Content Like This, Thanks.