আড়ালে_তুমি
সামিয়া_সারা
কাজিনরিলেটেডগল্প
পর্ব – ৭
বাড়ির বড় কর্তা আকবর দেওয়ান ড্রয়িং রুমে সদর দরজার সামনে গম্ভীর মুখে বসে রয়েছেন। তাদের তিন ভাই এর মধ্যে স্বভাবতঃই বড় ভাইয়ের কতৃত্ব বেশি চলে। নীলকে ঢুকতে দেখেই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে গালে সজোরে এক চড় মারলেন। ইনায়া,আনায়া আর সামিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কী হলো হঠাৎ কী তাদের কারোরই বোধগম্য হয় না। বাড়ির বড় বউ শিমু জাহান এগিয়ে আসে ছেলের কাছে।
মায়ের আঁচলে আগলে আকবর দেওয়ান কে বলে,
-শান্ত হও তুমি। আমার ছেলে এমনি এমনি কিছু করেনি। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।
নীলের মুখে হাত দিয়ে তাকে প্রশ্ন করে,
-কী হয়েছে বাবা? আমাকে বল তো। ঐ ছেলে কী করেছিল?
ইনায়ার মা, বাড়ির ছোট বউ ,আয়েশা আক্তার দৌঁড়ে আসে ইনায়ার কাছে।
ধমক দিয়ে বলে,
-কী হয়েছিল? নীল কার সাথে কেন ঝামেলা করেছে? তুই বলবি সব নাকি তোকেও মারতে হবে?
নীল পেছন ফিরে ইনায়াকে দেখে। মেয়েটা ভয়ে আতঙ্কে কুঁচকে রয়েছে।
নীল শুকনো ঢোক গিলে বলল,
-ইনু ঘরে যা, এক্ষুনি।
ইনায়া অপেক্ষা করল না। তার সাথে অনায়া আর সামিরাও চলে যায়।
আকবর দেওয়ান আবার বলতে শুরু করলেন,
-খুব বড় হয়ে গিয়েছে,নেতা হয়ে গিয়ে তোমার ছেলে,বুঝলে শিমু?
শিমু জাহান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
-রাস্তা ঘাটে মারামারি করে,আবার নিজেই পুলিশের কাছে ফোন করে। কারন জানতে চাইলে জবাব দেন না তিনি। এসব নেতাগিরি শেখালাম আমি?
ভাইয়ের এতো উত্তেজিত হতে দেখে এগিয়ে এলেন হুমায়ূন দেওয়ান।
কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-এতো উত্তেজিত হবেন না ভাইয়া। শরীর খারাপ করবে। আমি শুনছি বিষয়টা।
-তোর আস্কারা তেই এই অবস্থা। আরো উচ্ছন্নে যাক!
হুমায়ূন দেওয়ান নীলকে শান্ত হয়ে বললেন,
-বাবা বলো তো কী হয়েছিল?
নীল সরাসরি ইনায়ার রুমের দিকে তাকায়। ইনায়া,অনায়া আর সামিরা উঁকি দিয়ে কথা শোনার চেষ্টা করছে।
সেদিকে এক ঝলক দেখে নীল বলে,
-দোকানের ঐ ছেলে ইনুর সাথে বেয়াদবি করেছে।
বাড়ির সকলের চোখ ছানাবড়া। আকবর দেওয়ান ইনায়ার রুমের দিকে তাকায়। ইনায়াকে উঁকি দিতে দেখে হাঁক ছেড়ে ডাক দেয়। মুহুর্তেই ইনায়া নেমে আসে,সাথে সামিরা আর আনায়া। আকবর দেওয়ান ভারী গলায় ইনায়াকে বলল,
-ঐ ছেলে তোমার সাথে বেয়াদবি করেছিল?
ইনায়া ভয়ে ভয়ে হয়ে প্রশ্ন করে,
-কোন ছে…ছেলে বড় বাবা?
আকবর দেওয়ান নীলকে আড় চোখে একবার দেখে নিলেন।
তারপর পুনরায় ইনায়াকে প্রশ্ন করে,
-যে দোকানে তোমরা গিয়েছিলে ওখানের কোনো ছেলে তোমায় বিরক্ত করেছে?
চট করে ইনায়া জবাব দেয়,
-নাহ্!
আকবর দেওয়ান আবার নীলকে দেখে। নীল বিস্মিত হয়ে ইনায়া কে দেখে। জোড় করে হাত ধরার চেষ্টা ওর কাছে বেয়াদবি মনে হয়েছিল না?
বাবার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল,
-ঐ ছেলেটা জোড় করে ইনায়ার হাত ধরার চেষ্টা করেছিল।
আকবর দেওয়ান আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-তাই অনু?
আনায়া ঠোঁট উল্টিয়ে জবাব দেয়,
-আমি তো এসব দেখিনি।
এই জবাবের সাথে সাথে নীল আবার বলে,
-ও দেখেনি।
তবে কথা টা বলা মাত্রই সজোরে নীলের গালে আবার থাপ্পড় দিলেন আকবর দেওয়ান। তর্জনী আঙ্গুল উঁচু করে রেগে বলে,
-চুপ! একদম চুপ! তোমার ঐসব নেতাগিরি আমার সাথে দেখানোর চেষ্টা করবে না! তোমার বোনেরা কিচ্ছু জানে না অথচ তুমি বলছো বেয়াদবি করেছে।
-ও আমার বোন না
-তোমার মিথ্যাকে সত্যি বলছে না তাই?
নীল বাবার কথায় কোন জবাব দেয় না । আকবর দেওয়ান পুনরায় বললেন,
- কেউ দেখলো না অথচ এমন কাণ্ড হয়ে গেল । কেউ আর ছিল না?
সামিরা বেশ কিছুক্ষণ পরে বলল ,
-আঙ্কেল ,ভাইয়া সত্যি বলেছে । ওই ছেলে ইনায়ার হাতে চুড়ি পড়ানোর চেষ্টা করেছিল। ভাইয়া এসে আটকে দিয়েছে।
সামিরার মুখ থেকে কথাটা শোনা মাত্র আকবর দেওয়ান চুপ হয়ে যায়। নীল আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ায় না । লাল চোখ নিয়ে তাকায় ইনায়ার দিকে। সে দৃষ্টি তে তীব্র ক্রোধ আর অভিমান। হনহন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে।
.
.
.
ইনায়া একের পর এক টিস্যু ফেলছে নাক মুছে মুছে। সামিরা সামনে বসে বসে সান্ত্বনা দিয়েই চলেছে,
-আরে বাবা তুই তো ইচ্ছে করে না বলিসনি। তোর তো বিষয় টা খেয়ালেই ছিল না।
ইনায়া নাক টেনে জবাব দেয়,
-উনি বুঝবে না দোস্ত..
-হুঁহ্ তাও স্বাভাবিক। বাইরের একটা ছেলে হাত ধরতে গেল,আর তুই তা মাথায়ই রাখলি না।
-কোন ছেলে তাইতো বুঝতে পারিনি…
ইনায়ার কান্নার আওয়াজ বেড়ে চলেছে।
সামিরা শান্ত করে বলে,
-থাম এখন,আমি চলে যাব!
-যাস না,আমার সাথেই থাক। তুই থাকলে নীল ভাই মারতে পারবে না আমাকে। আমার অনেক ভয় করছে।
-ধুর্! মারবে না। কান্না থামা।
সামিরার কথা যেন ইনায়ার কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। অনেকক্ষণ ভেবে সামিরা চট করে শর্মীকে কল দেয়। লাউডে রিং বাজতে ইনায়া চোখ মুছে সামিরার দিকে তাকায়।
ইশারায় বলে,
-কী?
সামিরা ফিসফিস করে বলে,
-দেখতে থাক।
তিন বার রিং বাজার পর শর্মী কল ধরে। তাড়াহুড়ো করে বলে,
-বল বল!
-কী করছেন মামি?
শর্মী একবার ফোনের দিকে তাকায়। পুনরায় ফোন কানে নিয়ে বলে,
-এই ! কোন মামিকে কল দিতে গিয়ে আমাকে দিলি?
-আরেহ্,আপনাকেই দিয়েছি মামি।
-পড়তেছি আমি বইন। রাখ!
-আরে আরে শোন। কুদ্দুস মামার সাথে কথা হয়েছে আজ।
ইনায়া ফিক করে হেসে দেয়। দোকানের নাম ছিল, “কুদ্দুসের টক ঝাল মিষ্টি ফুচকা”। হাসতে হাসতে বালিশে দু চারটে চড় ঘুষি মেরে সামিরার পিঠে হাত দিয়ে বাহবা দিতে থাকে। নামটাও মেয়ে মনে রেখেছে। বেশ সিরিয়াস দেখছি!
শর্মী কিছুই বুঝতে না পেরে বলে,
-এই কুদ্দুস মামা আবার কে?
-আপনার অর্ধাঙ্গিনী ,মামি।
ইনায়া পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে,
-উহু উঁহু, অর্ধাঙ্গ
শর্মী এবার রেগে গিয়ে বলে,
-কী শুরু করলি? ইনুর কণ্ঠ শুনেছি আমি। কী মতলব পাকাচ্ছিস রে?
ইনায়া সাথে সাথে ফোন নিয়ে নেয় সামিরার থেকে। টেনে টেনে বলে,
-কোনো খারাপ মতলব না দোস্ত, কুদ্দুস মামা অনেক ভালো। তুই রাজি হয়ে যা,সামিরা ওনার ফুচকা খেয়ে ফ্যান হয়ে গিয়েছে। আ্য‘ম শিওর যে তুই ও পছন্দ করবি। আর শোন,ওনার নিজের রিকশাও আছে। তুই ওটাতে করে বিয়ে করবি।
সামিরা ইনায়ার কথায় তাল দিয়ে বলল,
-বয়সও বেশি না,এই ধর ষাট। তুই ভাবিস না ছেলে খারাপ। প্রেম করে না,কোনো প্রেমিকা নেই। তবে দুইটা বউ আছে। আমি বলি কি দোস্ত,নো কম্প্রোমাইজ। তুই আলাদা বাড়িতে থাকবি মামার সাথে।
শর্মী এবার তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। রাগ দেখিয়ে বলে,
-মশকরা করার জায়গা পাশ না? আমার বেবিকে সব বলে দিব!
-অ্যাহ্! দশ বছরের বড় কাউকে বেবি বলতে একটু লজ্জা পা দোস্ত!
ইনায়া আবার আগুনে ঘি ঢেলে সামিরা কে বলে,
-কুদ্দুস দুলাভাই ৪৫ বছরের বড়। আর কুদ্দুস দুলাভাই যে টাকলা,তা বলবি না?
টু টু আওয়াজে কল কেটে যায়। এদিকে দুই বান্ধবী হেসে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
.
.
.
এই ভরদুপুরে কেঁদে কেঁদে আরানকে কল করে শর্মী,
আরান কল ধরতেই ন্যাকা কন্ঠে বলে,
-ফোন ধরছিলা না কেন?
-তোমার ফোন ওয়েটিং ছিল কেন?
-সামিরা আর ইনায়া কল করেছিল। ওরা আমাকে কোন কুদ্দুস মামার বউ বানাতে চায় যেন। ফুচকা বানায়। এখন কী করব বাবু?
আরান বিরক্ত হয়। এদিকে গার্লফ্রেন্ডের ন্যাকামি আর অন্যদিকে বন্ধুর দেবদাস ভঙ্গিমা। বিরক্ত হয়ে কল কেটে দেয়। বন্ধুর কাধে হাত রেখে বলে,
-তুই আর তোর বউ কী শুরু করলি নীল?
পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
Running
episode:7
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻