আড়ালে_তুমি
সামিয়া_সারা
কাজিনরিলেটেডগল্প
পর্ব – ৬
অনু , সামিরা আর ইনায়ার সামনে তিন প্লেট ফুচকা রাখা ।অনু বেশ খুশি খুশি একটার পর একটা ফুচকা খেয়ে চলেছে । এদিকে সামিরা ইতস্তত বোধ করে ,কারন ইনায়া এখনো মাথা টেবিলে রেখে বসে আছে। বেশ কয়েক বার ইনায়াকে খাওয়ার কথা বলে সামিরা । তবে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে নিজেই খেতে শুরু করে। ইনায়া চুপচাপ বসে রয়েছে এখনো। তার মাথার মধ্যে ভীষণ ঝিমঝিম করছে। যেন খেলে বমি করে দিবে। নীলকে অনু অনেকবার অনুরোধ করার পরে নীল ফুচকা খেতে রাজি হয়। ইনায়ার সামনে থেকে প্লেট টা নিয়ে একটা ফুচকায় সামান্য টক ঢেলে ইনায়ার সামনে ধরে।
গম্ভীর হয়ে বলে,
-হা কর!
ইনায়া মাথা উঁচু করে চোখ বড় করে তাকায়। অনু আর সামিরা মুখের মধ্যে ফুচকা নিয়ে হা করে তাকিয়ে রয়েছে।
ইনায়া অবাক হয়ে বলে,
-খাব না,খারাপ লাগছে।
-সকালে পড়তে যাওয়ার সময় খারাপ লাগেনি?
ইনায়া জবাব দেয় না। নীল পুনরায় বলে,
-যা করলে খারাপ হয় তা যেন আর না করা হয়। হা কর এখন।
ইনায়া এবার হা করে। নীল ফুচকা টা মুখে পুরে দিয়ে নিজেও একটা খেয়ে অনুর দিকে তাকায়। হাসি দিয়ে বলে,
-এবার শান্তি বোন?
অনুও পাল্টা হাঁসি দিয়ে সম্মতি জানায়।
ইনায়া মুখ ভেঙচি কেঁটে সামিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
-বুঝলি সামিরা, এভাবে বোন বলার মতো আমার কেউ নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ঐ বাড়ির মেয়েই না।
সামিরাও ইনায়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
-থাক ইনু,মন খারাপ করিস না। তোর আরেকটা ভাই তো আছে। আমি দেখছি কী করা যা..
সামিরার কথার মাঝে ইনায়া জোরে সামিরার পায়ে ধাক্কা দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে সামিরার কানে কানে বলে,
-কন্ট্রোল ভাবি.. কন্ট্রোল!
নীল সন্দেহজনক ভাবে দুজনের দিকে তাকাতে ইনায়া স্বাভাবিক ভাবে বলে,
-আনান ভাইয়া আসলে কত ভালো হতো!
সামিরা ইনায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-থাক দোস্ত! এরপরে আবার আসব,তখন তোর ভাইকেও নিয়ে আসবি।
অনু আড় চোখে সামিরার দিকে তাকায়। নীল ও কিছুক্ষণ ধরে কিছু একটা ভেবে বিল দিতে চলে যায়।
নীলের যাওয়া দেখে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ইনায়া বলে,
-এরপরে আবার আসব কীভাবে? আজকে তো আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে এতোদূর ইচ্ছে করে নিয়ে আসা হয়েছে।
-কীহ্! কে তোকে কষ্ট দিতে চেয়েছে ? কার এতো সাহস?
ইনায়া নীলের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে সামিরাকে বলে,
-বাদ দে!
সামিরা ইনায়ার হাত ধরে দাঁত বের করে এক ফালি হেসে বলল,
-দোস্ত, এই মামার ফুচকা আমার ভালো লেগেছে,চল একটু সামনে।
ইনায়া হাত আটকে বলে,
-তো?
সামিরা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
-ওনাকে পার্মানেন্ট দুলাভাই করব।
সামিরা ইনায়ার হাত ধরে টেনে এনে ফুচকা ওয়ালা মামার সামনে দাঁড়ায়। কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-মামা,আপনি কি বিবাহিত?
ইনায়া বিস্ফোরিত চোখে তাকায় সামিরার দিকে। ফিসফিস করে বলে,
-কার বিয়ের জন্য ঘটকালি করছিস তুই?
সামিরা ইনায়াকে খিলখিল করে হেসে জবাব দেয়,
-শর্মীর।
ইনায়া আর হাসি থামাতে পারে না। দুজনের হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। হাসতে হাসতে ইনায়ার চোখ যায় নীলের দিকে। নীলরাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ইনায়ার দিকে। নীলকে দেখে ইনায়া সামিরার হাত টেনে নিয়ে আসে। এদিকে ফুচকা ওয়ালা মামা নিজের একের পর এক গুনগান করেই চলেছে।
-তার কতটি রিকশা রয়েছে,একটি বাড়ি রয়েছে,বয়সও বেশি না,এই ষাট এর কাছাকাছি। এমনকি আগে মাত্র দুটি বিয়ে হয়েছে,বেশি না। দরকারে তিনি আলাদা বাড়ি তে রাখবে নতুন বউকে। ইনায়া এতোকিছুর পরেও কোনো রকমে হাসি আটকে রেখে কোনো রকমে সামিরাকে টেনে নিয়ে যায়। এদিকে সামিরা মনের মধ্যে সব টুকে নিয়েছে কাল কলেজে গিয়ে শর্মীকে বলার জন্য।
নীল অনেকক্ষণ ধরে এই তামাশা দেখছে। ইনায়া আসতেই তার খুব অল্প দূরত্বে গিয়ে বলল,
-বাইরে এসে তাহলে এসব করিস? বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলছি তাদের মেয়ে কেমন ঘটকালি করে বেরাচ্ছে।
-আমি কিছুই জানতাম না, সত্যি বলছি।
-গাড়িতে গিয়ে বস! গো ফাস্ট!
সামিরা ইনায়ার দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে ইশারায় বলে,
-সরিইইই…
ইনায়া তার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে গাড়িতে গিয়ে বসে।
.
.
.
এতো দূরের রাস্তার অর্ধেক যেতে ইনায়া আবার মাথা ধরে বসে রইল।
নীল কে উদ্দেশ্য করে আস্তে আস্তে বলল,
- আর একটু জোরে চালানো যায় না ? ভীষণ মাথা ঘুরছে।
নীল হালকা করে ব্রেক করে সাইডে গাড়ি থামায়। নিজে গাড়ি থেকে নেমে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-নেমে আসো তোমরা।
অনু এক লাফে নেমে পরে। ইনায়া আর সামিরা ধীরে ধীরে নেমে এগিয়ে যায় নীল আর অনুর কাছে। নীল একটা পানির বোতল কিনে ইনায়ার হাতে দেয়।
শান্ত স্বরে বলে,
-একবারে এতোটা পথ গেলে বেশি খারাপ লাগবে। কিছু খাবি আর?
ইনায়া মাথা নাড়িয়ে না বলে।
সামিরা ভ্রু কুঁচকে ইনায়াকে দেখে।
অনু নীলের কাছে এসে বলে,
-ভাইয়া , শপিং মলে নিয়ে চলওওওওও….
নীল ইনায়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-যাবি?
ইতস্তত বোধ করে ইনায়া মাথা ঝুঁকিয়ে হ্যাঁ বলে। মলের ভেতরে ঢুকতেই হাতে হ্যাঁচকা টান পেয়ে ইনায়া দাঁড়িয়ে যায়। তার ডান হাত সামিরা ধরে রেখেছে। সন্দেহের চোখে ইনায়াকে দেখে বলে,
-কীরে তোর এই সো কল্ড ভাই এতো দরদ দেখাচ্ছে কেন? কাহিনী কী?
-ধুর্! কীসের কাহিনী!
-এই যে পানি এনে দিল,আবার তোর ইচ্ছে অনুযায়ী এখানে নিয়ে এলো..
ইনায়া কিছু বলার আগেই নীল পেছন ফিরে ডাক দেয়। তাই আর কিছু না বলেই ইনায়া দৌঁড়ে চলে যায়।
.
একটা সুন্দর চুড়ির দোকানে এসে অনু নীলের হাত টেনে দাঁড়িয়ে যায়। আহ্লাদী সুরে বলল,
-ভাইয়া, চুড়ি কিনে দাওও। প্লিজ প্লিজ প্লিজ..
চুড়ি গুলো বাইরে থেকে দেখে ইনায়াও ঢুকে পরে সামিরা কে নিয়ে। নীল সেদিকে দেখে অনুর আবদারে রাজি হয়ে যায়।
একের পর এক চুড়ি হাতে পড়ে দেখছে ইনায়া। নীল রঙের এক ডজন চুড়ি সেলস ম্যান কে দিতে বললে ছেলেটি ইনায়ার হাত ধরে পড়াতেই যাবে । তৎক্ষণাৎ ছেলেটির হাত থেকে চুড়ি গুলো এখন থাবায় নিয়ে নেয় নীল। ইনায়ার হাতে দিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,
-নিজে পড়তে না পারলে দেখতে আসবি না।
ইনায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অনুর কাছে এসে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-কোনটা নিবি বোন?
অনু এক ডজন লাল রেশমি চুড়ি দেখিয়ে বলল,
-এটা ভাইয়া।
-ডান।
ইনায়ার চোখ ছলছল করছে।
সামিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আসল রূপ এটা। আমার কোনো ভাই নেই দোস্ত।
-আরেহ্ মন খারাপ করিস না। আরেকজন তো আছেই।
এদিকে ইনায়া হাতে চুড়ি পরছে দেখে অনু ইনায়ার কাছে এসে বলে,
-ইনুপু তুমি নিবা না?
ইনায়া মাথা নাড়ালো। অনু ইনায়ার হাত ধরে বলল,
-তোমার হাতে এই নীল চুড়ি এত্তো সুন্দর লাগছে যে মনে হচ্ছে তোমার জন্যে বানানো।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বলল,
-দাঁড়াও ভাইয়াকে বলছি কিনে দিতে।
ইনায়া মানা করার আগেই অনু ছুটে যায় নীলের কাছে। ইনায়া একটানা বলেই চলেছে,
-অনু না,না
নীল ফোনে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে। অনু দৌঁড়ে এসে বলে,
-ভাইয়া! এখানে সানগ্লাসেস পরে থাকলে লোকে পাগল বলবে।
-তুই বুঝবি না।
নীলের চোখ যে লাল হয়ে আছে তার চশমা ভেদ করে দৃশ্য মান হচ্ছে না।
নীলের কথায় পাত্তা না দিয়ে অনু বলে,
-আচ্ছা বুঝতে হবে না। ইনুপুর ঐ চুড়ি পছন্দ হয়েছে।
বলেই ইনায়ার হাতের দিকে ইশারা করে। নীল সেদিকে তাকতেই ইনায়া হাত লুকিয়ে ইশারায় না না বলে। ভীষন লজ্জা পেয়ে সামিরার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে সে।
নীল অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
-নিজের জন্য কিনতে এসেছিস নিজের টা ভাব। আমি আমার বোনের জন্য দিতে পারি,আর কারো জন্য না। তোর আর কিছু লাগবে?
নীলের কথা শুনে ইনায়া আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। সামিরাও চলে যায় তার সাথে। নীল অনুর হাতে চুড়ি টা দিয়ে বলে ,
-তুই গাড়িতে গিয়ে বোস। আমার একটা বক্স নিতে হবে,অফিসের কাজে, কিছুক্ষণ সময় লাগবে।
অনু চলে যায়।
.
.
.
ইনায়ার চোখ লাল। টপটপ করে পানি পড়ছে। সামিরা আস্তে আস্তে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে অনুকে বলে,
-ভাইয়ার আসতে কতক্ষন লাগবে?
-কিছুক্ষণ লাগবে তো বলল। অফিসের জন্য কী একটা বক্স আনতে গেল।
অনুর কথা শুনে ইনায়া নাক টেনে টেনে বলল,
-আমি জানতাম,জানতাম এমনই হবে। ওনার কাজে এখানে উনি এসেছে। আমার খারাপ লাগছিল বলে যে এসেছে এমন না। বুঝেছিস সামিরা? উনি আমার ভাই না। আমাকে বোন বলে স্বীকার করে না। আমি ই ভুল ভাবতাম! বুঝলি এখন?
সামিরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
.
.
নীল কথা মতো একটা বক্স নিয়েই ফিরে এসেছে। তবে সাদা শার্টে ছোপ ছোপ র*ক্তের দাগ। ইনায়া চোখ মুছে আতঙ্কিত হয়ে নীলের শার্টে হাত রেখে বলে,
-কী হয়েছে আপনার?
নীল জবাব দেয় না। ইনায়া আবার বলে,
-র*ক্ত কীসের?
নীল হাত সরিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-কিছু না।
ইনায়াও আর কথা বাড়ায় না। মনে মনে বলে,
-আমি তো ওনার বোন না! যে বোনকে এতো ভালোবাসে সে কোনো চিন্তা করছে না,আমি কেন করব!
পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
Running
episode:6
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻