পর্ব – ৫
খাবার টেবিলে বসে ক্রমাগত পা নাড়িয়ে চলেছে ইনায়া। চোখ বন্ধ করে ঠোঁট বিড় বিড় করে একটানা পড়া গুলো মনে করছে। খাবার দিতেই কারো সাথে কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করে দেয়। নীল ইনায়াকে আড় চোখে একবার দেখে নিজেও খাওয়াতে মনোযোগ দেয়। ইনায়ার মুখে কোনো কথা নেই,আবার কাজেও এমন তাড়াহুড়ো দেখে অনু জিজ্ঞেস করে,
-আজ তোমার কী হলো ইনুপু? গম্ভীর হয়ে গিয়েছো বড় ভাইয়ার মতো।
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে অনুর দিকে তাকায়। রেগে বলে,
-তোর এস.এস.সি পরীক্ষা না কিছুদিন পরে? পড়ার কথা চিন্তা কর আমাকে নিয়ে না ভেবে।
ইনায়ার মুখে এমন কথা শুনে অনু ভভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
আনানেরও গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম। পানি খেতে খেতে ইনায়াকে বলে,
-পরীক্ষার আগের রাত ছাড়া তো তুই এমন সিরিয়াস থাকিস না ইনু। আজ হঠাৎ হলো কী!
-তেমন কিছুই না। শুধু নিজের যোগ্যতা টা একটু দেখাতে হবে।
এরপর নীলের দিকে তাকিয়ে বির বির করে দাঁত চেপে বলল,
-কিছু মানুষকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা শুধু তারাই পারেনা,আমিও পারি কিছুটা।
নীলের কান পর্যন্ত কথাটা পৌঁছেছে কিনা বোঝা যায় না ।তবে কথাটা বলা মাত্রই নীল ইনায়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। এরপর টেবিল থেকে উঠে হাত মুছতে মুছতে ইনায়াকে বলে,
-রেডি?
নীলের প্রশ্নের কোন জবাব দেয় না ইনায়া। বরং আনানের দিকে তাকিয়ে তাকে বলে ,
-আনান ভাইয়া ,আজ তুমি কি আমায় নিয়ে যেতে পারবে?
ইনায়ার মুখে এমন কথা শুনে আনানের মনে হচ্ছে শুন্যে উড়ছে সে। ভাইয়ের দিকে তাকায় সাথে সাথে অনুমতির অপেক্ষায়।নীলও তখনই আনান কে বলে ,
-ঠিক আছে তাহলে তুই নিয়ে যা।
ইনায়া নীল ব্যতীত আজ প্রথম বার অন্য কারো সাথে যাচ্ছে। আনান গাড়ির চাবি নিয়ে আসে দ্রুত গিয়ে। এদিকে নীলও বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে পরেছে। গাড়ির কাছে আসতেই ইনায়ার বেশ অসস্তি হতে শুরু করে। হালকা স্বরে বলে,
-গাড়িতে যেতে ভালো লাগে না।
সেসবে পাত্তা না দিয়ে আনান বলে,
-উঠে পর। এখান থেকে এখানে। কোনো সমস্যা হবে না।
নীলের দিকে তাকিয়ে এক কথায় জেদ করেই ইনায়া গাড়ি তে উঠে পরে। ড্রাইভিং সিটে আনান। পাশে ইনায়া। আনানের কাছে সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এদিকে ইনায়া মাথা ধরে বসে রয়েছে। মোশন সিকনেস এর কারণে সে গাড়ি তে উঠতে পারে না। তবে আজ নীলের উপর রাগ করার কারণে এক কথায় জোড় করেই উঠে পরেছে। পুরো পথ মাথা ঝুঁকিয়ে বসে ছিল ইনায়া। কোচিংয়ের সামনে আসতেই আনান ওকে নামিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নেমে দরজা লাগানোর সময় আনান ইনায়াকে ডেকে বলে,
-শেষ কখন?
-এক ঘণ্টা পর।
-আমি আসব আবার।
-না কোনো দরকার নেই,আমি একাই চলে যাব।
-তুই একা যেতে হয়তো পারবি, কিন্তু তারপর থেকে তোর বা আমার আর কোথাও যাওয়ার অবস্থা থাকবে না।
এদিকে ইনায়ার অসম্ভব খারাপ লাগে যে গাড়ি তে উঠলে তার আর বোঝাতে পারে না আনানকে। পেছন থেকে কেউ ইনায়ার চোখ শক্ত করে হাত দিয়ে ধরে রইলো। পেছন ঘুরতে ঘুরতে ইনায়া বিরক্ত হয়ে বলে,
-উফফ্ সামিরা ছাড়!
সামিরা চোখ ছেড়ে বলে,
-কিরে এতো বিরক্ত কেন?
-বিরক্ত হব না? তোর কল দেওয়ার কথা ছিল?
-অ্যাহ্! কাল রাত থেকে কতবার কল করেছি। ফোন বন্ধ করে মহারানী বসে ছিলেন। এখন আবার আমার দোষ দিচ্ছেন।
ইনায়া কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ভয়ে ভয়ে বললো,
-আমার ফোন! ওহ্ শিট্ !
এদিকে আনান গাড়ির হর্ন বাজিয়ে ইনায়াকে ডেকে বলে,
-তাহলে আমি আসছি।
আনান চলে যায়। সামিরা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইনায়ার গলা জরিয়ে বলল,
-এটা কে রে?
ইনায়া সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় সামিরার দিকে। ভ্রু উঁচু করে বলে,
-কেন কেন?
-আরেহ্ এমনিই। কে বল না..
-কাজিন
-ঐ যে আনায়ার ভাইয়া??
-হু,আমারও
-রোজ তো তোর নীল ভাই আসে। আজ এ এলো যে?
-আমার এই একটাই ভাই। এতোদিন যাকে দেখেছিস সে আমার কোনো ভাই না।
ইনায়া মুখ ফুলিয়ে কথাটা বলে। ইনায়া আর নীলের যে দাঁ কুমড়ার সম্পর্ক তা সামিরার অজানা না । তাই নীলের প্রসঙ্গ বদলে বলল,
-তোর এই ভাইয়ের নাম কী যেন??
-আনান…আনান দেওয়ান।
সামিরা বিড়বিড় করে নামটা আওরালো। ইনায়া এবার সামিরা কে ঘুরিয়ে বলে,
-এই! কাহিনী কিরে???? তোর কি আমার ভাইকে পছন্দ হয়েছে?
সামিরা চোখ বড়বড় করে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইনায়া আবার বলতে শুরু করে,
-পছন্দ না হওয়া কিন্তু অস্বাভাবিক বন্ধু। দেওয়ান বাড়ির ছেলে বলে কথা, না হয়ে উপায় আছে?
সামিরা এবার লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকায়। ইনায়া ওর হাত ধরে টেনে বেঞ্চে নিয়ে বসে। কানে কানে বলে দাঁড়া তোকে ভাবি বানানোর প্লান করছি।
.
.
.
.
ইনায়াদের পড়া শেষ হতে ইনায়া সামিরার হাত ধরে বলে,
-শোন একটা প্লান আছে।
সামিরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
-কী প্লান?
-আমাকে এখনও আনান ভাইয়া নিতে আসবে,আর তুই আমাদের বাসায় যাবি আজ। গাড়িতে এখন গিয়ে চুপচাপ সামনে বসবি।
সামিরা প্রথমে না না বললেও ইনায়ার জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে যায়। আগে গিয়ে উঠে বসে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে। ইনায়াও পেছন পেছন গিয়ে পেছনের সিটে বসে পড়ে। সামিরা বেশ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে,অন্যদিকে ইনায়া মুখে হাত দিয়ে একটানা হেঁসেই চলেছে। তখনই ইনায়ার ডান কাঁধে কারো হাত পরে। চমকে ইনায়া ডান দিকে তাকাতেই অনুকে দেখতে পায়।এরপর চোখ যায় ড্রাইভিং সিটে। সামিরাও কিছু একটা ভেবে আনানের দিকে তাকায়। ড্রাইভিং সিটে নীল ! সানগ্লাস পরে পেছনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইনায়া আর সামিরা আরেক দফায় চমকে ওঠে। সাথে সাথে একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে ওঠে,
-পাত্র বদল!
নীল চোখের থেকে সানগ্লাস নামিয়ে অনুর দিকে তাকায়। ভাইয়ের শান্ত চাহনি বুঝতে অনু আর ইনায়ার বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। অনু ইনায়াকে ঠেলে বের করে দিল। সামিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আপু তুমি পেছনে আসো,আমার কাছে। বাসায় তো যাও না,এখন একটু ছোট বোন ভেবে তো পাশে বসো!
অনুর এমন আহ্লাদী কথায় সামিরা খুশি খুশি পেছনে চলে আসে।
নীল বেশ পোক্ত হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। ঘাড় হালকা বাঁ দিকে কাত করা,চোখে সানগ্লাস। আড় চোখে ইনায়াকে দেখছে নাকি তা ঠিক বোধগম্য নয়।
এদিকে ইনায়ার গলা শুকিয়ে কাঠ। শুকনো ঢোক গিলে বলল,
-আনান ভাইয়া আসলো না কেন?
নীল সাথে সাথে ব্রেক করে। ইনায়া সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। হিসেব মতো তার কপালে আঘাত লাগার কথা ছিল, কিন্তু চোখ খুলতেই দেখে তার কপালের নীচে নীলের হাত। ইনায়া সোজা হয়ে উঠতে নীল আবার চালাতে শুরু করে। আগের মতো কড়া ব্রেক আর না করলেও নীল খুব ঘন ঘন ব্রেক করতে থাকে। এদিকে ইনায়ার অবস্থা খারাপ। নীলের এভাবে গাড়ি চালানোর ফলে ইনায়া আর বসে থাকতে পারছে না।
ভীষণ মাথা ঘুরছে তার,কোনো রকমে কপালে হাত দিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-কোথায় যাচ্ছি আমরা? বাসায় তো এতো ঘুরে যাওয়ার কথা না।
অনু উত্তেজিত হয়ে উত্তর দিল,
-মনে নেই আজ ফুচকা খাওয়ার কথা ছিল? তাই সেখানে যাচ্ছি।
ইনায়া মাথা চেপে বসে থাকে। সামিরা এ অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে বলে,
-বেশি খারাপ লাগছে ইনু? গাড়ি থেকে নামবি?
ইনায়া মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে। তবে সামিরা নীল কে গাড়ি থামাতে বলার আগেই নীল ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-কীসের খারাপ লাগছে? তোর তো এখন কোনো অসুবিধাই হয় না। সকালেও আসলি নিজের ইচ্ছায়। গাড়িতে উঠতে এখন যে তোর ভালো লাগে তাই তোর বন্ধু কে বলিস নি ?
সামিরা সন্দিহান হয়ে যায়। ইনায়া ভালো করেই বুঝতে পারে নীল ইচ্ছে করেই করছে এসব। ক্লান্ত চোখে তাকায় নীলের দিকে। সানগ্লাস ভেদ করে নীল ইনায়ার ক্লান্ত চোখের দিকে আড় চোখে তাকায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি থামিয়ে দেয় সে। ইনায়া এখনো চোখ বন্ধ করে বসে আছে। সামিরা নেমে গিয়ে ওকে নামিয়ে নেয়। অনু আর নীল ও নেমে পড়ে। নীল ইনায়ার সামনে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে এক পা ভাজ করে দাঁড়িয়ে থাকে। দুই হাত প্যান্টের পকেটে। কিছুক্ষণ ইনায়ার তাকিয়ে থেকে নিজের ফোন বের করতে করতে বলে,
-বাইক অর কার?
ইনায়া ঠোঁট নাড়িয়ে আস্তে করে বলে বাইক। নীল কানে হাত দিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
-জোড়ে বল!
-বাইকক..
পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
#episode:5
Written by Samia Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন গল্পের নাম পরিবর্তন করেছি কারন আগের নামে অনেক গুলো গল্প ছিল। তাই আমার অনেক পাঠক পাঠিকারা এই গল্পটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না