পর্ব – ৪
নীলের মুখে হঠাৎ এমন অদ্ভুত কথা শুনে ইনায়া থমকে যায় । প্লেটের ভাতগুলো আঙ্গুল দিয়ে নাড়া থামিয়ে নীলের দিকে তাকায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে। ইনায়ার চাহনি উপেক্ষা করে নীল বলে,
-রিল্যাক্স ! তোর মত কারো হাতে অবশ্যই নীল খাবেনা!
নীলের মুখে এমন কথা শুনে ইনায়ার চোখে পানি চলে আসে। পুনরায় ভাত নাড়তে নাড়তে সে ভাবতে থাকে,
-আমি তো আগ বাড়িয়ে কিছু বলিনি ! উনিই আগে বলে আবার উনিই এভাবে অপমান করে। কেন?
ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে ইনায়ার দিকে তাকায় নীল। ভারী গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-প্লেট রেখে হাত ধুয়ে আয়। তোর খাওয়ার জন্য তো আমি এখানে বসে থাকবো না। কাজ তোর নাই থাকতে পারে , এইজন্য হয়তো মানুষের রুমে গিয়ে বসে থাকিস। তাই বলে আমি তো আর এমন না।
নীলের খোঁটা দেওয়া এমন কথায় কোন জবাব দেয় না ইনায়া। চুপচাপ উঠে গিয়ে প্লেট রেখে হাত ধুয়ে চলে আসে সে।
.
.
.
.
টেবিল ছেড়ে ইনায়াকে একেবারে রাত দশটায় উঠতে দেয় নীল। এর মধ্যে ইনায়া নিজেও আর উঠতে চাইনি। সকলে খাবার টেবিলে একসঙ্গে হাসিখুশি ভাবে উপস্থিত হলেও ইনায়া বেশ মনমরা হয়ে ছিল। টেবিলে ইনায়া এবং আনান একে অপরের মুখোমুখি বসে রয়েছে । আনান একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে,
– কি হয়েছে তোর ইনু? মন খারাপ কেন?
ইনায়া কোনো জবাব দেয় না। আরো একবার প্রশ্ন করতেই নীল ধমকে বলে ,
-খেতে বসেছিস,চুপচাপ খাবি। এতো কথা বলার কি হয়েছে ? এত খোঁজ নিতে হবে না তোর। আর যদি খুব ইচ্ছা করে আরো অনেক মানুষ রয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর।
আকবর দেওয়ান নীলের দিকে তাকাতেই নীল চুপ হয়ে যায়। এরপর তিনি নীলকে আদেশের স্বরে বলে,
-ওরা তোমার ছোট। তাই সুন্দর করে বুঝিয়ে কথা বলবে
আনানও চুপচাপ নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ দেয় তখনই। তবে মিনিট পাঁচেক এর মধ্যেই সে ইনায়ার পায়ে আস্তে করে টোকা দেয় ।কিন্তু ইনায়া তাতে কোন সাড়া দেয় না,পা টা হালকা করে সরিয়ে নেয়। এটা দেখে আনান আরো একবার পায়ের টোকা দিতে গেলে ইনায়া বিরক্তি সূচক আওয়াজ করে। নিজের পা চেয়ারের পায়ার সাথে বাধিয়ে রাখে। ইনায়ার হাবভাব দেখে নীল কিছু টা সন্দেহ করে ইনায়ার চেয়ারের নিচেই ফ্লোরে পা দেয়। তখনই আনান আরো একবার পায়ে টোকা দিতে গেলেই নীল যা সন্দেহ করেছিল তাই সঠিক তা বুঝতে পারে। অমন শক্তিশালী বড় পা দিয়ে আনানের পায়ের উপরে চাপা দেয়। ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে আনান চিল্লিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রুবিনা ইয়াসমিনও ছেলের এমন কান্ড দেখে ভয় পেয়ে যান। উঠে এসে আনানকে ধরে বলে,
-কী হয়েছে আব্বু? ভয় পেয়েছিস?
আনান রাগে কটমট করে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দাঁত দাঁত চেপে বলে,
-রা*ক্ষস্!
এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলতেই যাবে কী হয়েছে, তখনই নীল আনানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-মনে হয় ওর পায়ে তেলাপোকা উঠেছিল। তাই হয়তো ভয় পেয়েছে।
এরপর আনানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-তাই না আনান?
আনানের বুঝতে বাকি থাকে না কাজটা কার। তাই মাথা নাড়িয়ে টেবিলে পুনরায় চুপচাপ বসে পরে।
.
.
সকলে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেও আনান উঠতে পারে না ।তার পায়ে অসম্ভব ব্যথা করছে। ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। তাকে এরকম চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ইনায়া বলে,
-তুমি উঠবে না?
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাওয়ার সময় নীল ইনায়ার প্রশ্ন শুনে আবার তাদের কাছে ফিরে আসে। এরপর ইনায়াকে বলে,
-” তুমি উঠবে না?” এটা আবার কেমন কথা ?? ও তোর বড় ভাই । সব সময় ভাইয়া ভাইয়া বলে সম্বোধন করবি ।বড়দের সম্মান করতে শিখিস নি । পড়াশোনা তো পারিস না ,এটা অন্তত করে নে। ইনায়া আর এক দফায় চমকে যায় । যেই নীল সব সময় তাকে বলে ভাই ভাই করবি না সেই নীলই ভাইকে নিয়ে এত বড় বাণী শুনিয়ে গেল।
ইনায়া নিজের ভুল শুধরে আনানকে পুনরায় বলে ,
-ভাইয়া তুমি উঠবে না?
ইনায়ার সাথে তাল লাগিয়ে অনুও বলে,
– হ্যাঁ ভাইয়া ,কী হলো? উঠছো না কেন ? সবাই তো চলে যাচ্ছি।
আনান বিরক্ত হয়ে দুজনকে একসাথে বলে ওঠে ,
-তোরা তোদের কাজ কর । আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।
অনু আবার প্রশ্ন করতে গেলে আনান তাকে থামিয়ে বলে ,
-রুমে যেতে বলেছি আনায়া!
ইনায়া আর অনু একসাথে উপরে উঠে চলে যায়। এদিকে নীল ফ্রিজ থেকে আইসপ্যাক এনে আনানের হাতে দিয়ে বলে,
-লাগিয়ে নে।
পকেটে হাত গুজে শিষ বাজাতে বাজাতে সেও উপরে চলে যায়।
.
.
আনানের থেকে ধমক খেয়ে অনুর বেশ মন খারাপ। ইনায়া বুঝতে পেরে অনুকে নিজের রুমে নিয়ে আসে । কিন্তু অনু একভাবেই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। ইনায়া অনুর থুতনি উঁচু করে বলে,
-কাল ঘুরতে নিয়ে যাব। আর ফুচকাও খাওয়াবো। আর মন খারাপ করে বসে থাকিস না।
ইনায়ার প্রস্তাবে অনু সত্যিই আর মন খারাপ করে থাকতে পারে না। ইনায়ার গলা জরিয়ে বলে,
-তুমি অনেক ভালো ইনুপু!
-থাক থাক্ ! আমাকে আর ভালো বলতে হবে না। তোর ভালো ভাই আছে না? তাকে গিয়ে বল। তোর আদরের নীল ভাই।
অনু ইনায়ার কথা শুনে মুচকি হেসে বলে,
-আচ্ছা ইনুপু! তুমি বড় ভাইয়ার উপর এতো রেগে থাকো কেন?
ইনায়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-আচ্ছা ওনার সমস্যা কী বলতো? নিজেকে অনেক বড় কিছু ভাবে। পড়াশোনায় একটু ভালো বলে বাকিদের গাঁধা গরু মনে করে।
অনু গালে হাত দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে ইনায়ার কথা শুনে।ইনায়া এক নাগাড়ে বলেই চলেছে,
-উনি ভাবে যে উনি একাই পড়াশোনা করেছে। মানুষ বলতে দুনিয়াতে একজনই। আর এইযে আমরা সবাই না? আমরা হলাম ছাগল, ভেড়া,মহিষ! এমনকি তুইও।
অনু এবার মুখ থেকে হাত নামিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,
-কী বলো ইনুপু! ভাইয়া আমাকেও বলেছে এইসব?
-আমাকে বললে তোকে কেন বলবে না? নাকি তুইও ওনার মতো ভাবিস নিজেকে।
নীল ওদের দুবোনের কথার মাঝেই রুমে প্রবেশ করে। ইনায়ার সামনে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে,
-ইনায়া তোর ফোন টা দে।
নীলের এমন কথায় বেশ থতমত খেয়ে যায় ইনায়া। কাঁপা গলায় বলে,
-কে..কেন?
-প্রশ্ন করতে বলেছি? ফোনটা দে।
ইনায়া হাত বাড়িয়ে ফোনটা দিয়ে দেয়। নীল ফোন নিয়ে বলে,
-আমি খোঁজ পেয়েছি তুই নাকি থেকে থেকে ফোন চেক করিস। কারো জন্যে অপেক্ষা করে থাকিস নাকি সবসময়।
ইনায়া রাগী দৃষ্টি তে অনুর দিকে তাকায়। এদিকে অনু কান ধরে বসে রয়েছে। ইনায়া রেগে বলে,
-কালকের প্লান ক্যানসেল। যা নিজের রুমে যা।
অনু দৌড়ে রুমে যেতে গেলে নীল তাকে থামিয়ে বলে,
-কাল ফুচকা খেতে নিয়ে যাব,এখন যা ঘুমিয়ে পড়।
অনু আবার খুশি হয়ে রুম থেকে চলে যায়।
অনু যেতেই নীল ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-তুইও ঘুমিয়ে পড় গাঁধা গরু ছাগল ভেড়া মহিষ
ইনায়া চোখ বড় বড় করে নীলের চলে যাওয়া দেখছে। এই লোকটা তারমানে আড়িপেতে সব শুনছিল!!!
পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন
(চলবে……)
#episode:4
Written by Samia Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন