golpoআড়ালে তুমি

আড়ালে তুমি পর্ব – ৩

#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব – ৩

শরীরে ঠান্ডা পানি পড়তেই শিউরে উঠল ইনায়া। টেবিল থেকে মাথা উঁচু করে মুখ থেকে পানি মুছলো হাত দিয়ে। এই ভোরে এমন কাজ কে করলো তা এখনো ইনায়ার মাথায় আসছে না । ক্ষিপ্ত হয়ে তাকায় পানি পড়ার উৎসের দিকে। হাত ভাঁজ করে ঘার কাত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে নীল। সকাল সকাল এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে ইনায়ার চোখ কপালে। এক লাফে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। কাল রাতে টেবিলে বসে আনানের থেকে শেখা ম্যাথ গুলো করতে করতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে।

নীল কে দেখে কাঁপা গলায় ইনায়া বলল,

-ভা..ভা..

এতটুকু বলতেই টাবিলের উপর ভারী হাতের বাড়িতে চমকে যায় ইনায়া। জোরে চেচিয়ে নীল বলে,

-চুপ! একদম চুপ। পড়া বাদ দিয়ে ঘুমাচ্ছিলি কেন?

ইনায়া পড়নের জামাটা দুহাতে চেপে ধরে বলে,

-আজ তো পড়া নেই,আর পড়া যা ছিল প্রায় শেষ।

ইনায়ার কথা শুনে টেবিল থেকে খাতাটা নিয়ে ম্যাথ করা সমস্ত পৃষ্ঠা এক টানে ছিঁড়ে ফেলে নীল। তারপর পুনরায় হাত ভাঁজ করে ঘাড় কাত করে প্রশ্ন করে,

-তারপর?

ইনায়ার এতো কষ্ট করে করা বাড়ির কাজ গুলো এক নিমিষেই নষ্ট করে দিল নীল। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে ইনায়ার। নীল তার হাতে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,

-চোখ মুছে পড়তে বস।

অসম্ভব রকম রাগ নিয়ে পড়তে বসে সে টেবিলে পুনরায়। ভেজা টেবিলে বই খাতা নামাতেই সেগুলো হালকা হালকা ভিজতে শুরু করে। ইনায়াকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে নীল ছোট করে বলে,

-ভিজে যাচ্ছে।

নীলের কথা যেন ইনায়ার কানেই যায় না। তার ঘরে আর কেউ নেই এমন একটা ভাব নিয়ে কাজ করছে সে। এদিকে ইনায়া যে জেদ করে এমন করছে তা বুঝতে পেরে নীল ও পাত্তা না দিয়ে বলে,

-কারো বই খাতা ভিজলে কিছুই যায় আসে না আমার।

এরপর নিজের ফোন বের করে কানে এয়ারপডস লাগাতে লাগাতে বলে,

-দশ মিনিট সময় দিলাম,এর মধ্যেই টেবিল মুছে নিজের জামাকাপড় পাল্টিয়ে নিবি।

কথা টা বলেই কলে কাউকে হ্যালো হ্যালো বলতে বলতে নীল চলে যায়।

.

.

রাগে জেদে ইনায়ার একদমই নিজের পোশাক পরিবর্তন করতে ইচ্ছে করছে না। টেবিল পরিষ্কার করলেও সে স্থির হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে ওমন ভেজা অবস্থায়। দরজার সামনে থেকে নীল আরো একবার আওয়াজ দিল,

-দশ মিনিট,ঠিক দশ মিনিট!

.

.

.

.

সকাল ছয়টা থেকে এখন সকাল দশটা,এই চার ঘণ্টা একটানা টেবিলে বসে আছে ইনায়া। এখান থেকে একটুও নড়ার সুযোগ নেই তার,কারন সামনে বসে আছে স্বয়ং দেওয়ান নীল। এ বাড়িতে সকলে আটটার মধ্যেই নাস্তা করে নেয়। তবে আজ না খেয়েই তাকে এভাবে বসে থাকতে হচ্ছে। টেবিলে বসে বেশ অনেক্ষণ মোচরামোচরি করে অবশেষে নীলকে বলেই ফেলল,

-আমার ক্ষুধা লেগেছে…

একটানা ফোন চালানো তে মগ্ন নীলের কানে কিছুই ঢুকলো না। আরো দুএকবার ডেকেও কোনো সাড়া না পেতে ইনায়া চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়। বাইরের দিকে যেতে গেলেই নীল পেছন থেকে ডেকে বলে,

-উঠার আগে আমার অনুমতি নিয়েছিলি?

ইনায়ার পা চলা সাথে সাথে থেমে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,

-আপনাকে ডেকেছিলাম.. কিন্তু আপনি মনে হয় ভাবির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলেন..

-বাড়তি কথা বলবি না! আর আমার দিকে নজর রাখার চেষ্টা করবি না ভুলেও। ঐ যোগ্যতা নেই তোর!

লজ্জায় অপমানে ইনায়ার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসছে। কোনো রকমে কান্না সংবরণ করে নিজেই মনে মনে বলল,

-ওনার হবু বউ এতো যোগ্য?

এমন সময় নীলের বাবা আকবর দেওয়ান ঘরে প্রবেশ করে। তাকে দেখেই নীল দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বলে,

-কিছু বলবেন আব্বু?

গম্ভীর গলায় আকবর দেওয়ান জবাব দেন,

-তোমার আজ রাতে আসার কথা ছিলো না? তাহলে এতো ভরে এসেছো কেন?

-একটা আর্জেন্ট কাজ ছিল আব্বু।

-এসে দেখা করলে না কেন?

-আম্মু বলল আপনার শরীর খারাপ, ঘুমাচ্ছেন। তাই ডাকিনি আর।

আকবর সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

-রেজাল্ট এতো ভালো তোমার,তবুও ভার্সিটির লেকচারার হিসেবে জয়েন হচ্ছো না কেন? তোমার মতো এতো যোগ্য কাউকে কেউই পাবে না! আর কতদিন অপেক্ষা করাবে নীল?

বাবাকে আশ্বস্ত করে নীল জবাব দেয়,

-আর বেশিদিন না। যোগ্য মানুষদেরকে ই পাবেন আর কিছু মাস পরেই।

চোখের পানি শুকিয়ে আসতেই নীলের বলা “মানুষদের” শব্দ টি বারবার বাজতে থাকে ইনায়ার কানে। মনের মধ্যে নানান চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। মনে প্রশ্ন জাগে,

-তবে কি ওনার বউ ও আমাদের ভার্সিটির লেকচারার হিসেবে যুক্ত হবে?

আকবর দেওয়ান ছেলের জবাবে আশার আলো দেখতে পায়। নীলের কাধে হাত রেখে বলে,

-শুনলাম সকাল থেকে তুমি আর ইনায়া কিছুই খাওনি। খেয়ে আসো এখন গিয়ে। পড়াশোনা পরে হবে আবার।

বড়বাবার মুখে এমন কথা শুনে ইনায়ার চোখ চিকচিক করে ওঠে। এবার ঐ অসভ্য লোকটা কীভাবে আটকাবে তা ভেবে হাসতে থাকে সে। কিন্তু ইনায়ার ভাবনায় এখন বালতি জল ঢেলে নীল উত্তর দেয়,

-আমি খাবার এনেছিলাম,ওটাই খেয়ে নিয়েছি আমরা। এখন ও পড়ুক, কোচিং থেকে কল করে কমপ্লেইন জানিয়েছে। আবার কাল আনানকেও জ্বালিয়েছে কিছু পারে না বলে।

নীলের এমন কথা শুনে ইনায়ার মাথায় হাত। বানিয়ে বানিয়ে এতো সুন্দর মিথ্যে বলে কীভাবে! আকবর দেওয়ানও হতাশ হয়ে ইনায়াকে দেখে চলে যান।

.

.

.

.

ঠিক দুপুর দুইটায় ইনায়া খাওয়ার অনুমতি পায়। তবে নিজের রুমেই টেবিলে বসে খেতে হবে। আজ টেবিল ছেড়ে কোনোভাবেই উঠা যাবে না বলে নীলের কড়া নির্দেশ। সে মূহুর্তে আনানও তার খাবার নিয়ে ইনায়ার ঘরে আসে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-তোমাদের ছাড়া খেতে পারছি না।

নীল ফোনের মধ্যে মনোযোগ দিয়েছে দেখে আনান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-কিছু মানুষ সামনে থাকলে এমনি এমনিই খাওয়া হয়ে যায়।

হঠাৎ নীলের ফোন পরে যেতে গেলেই তা ধরতে গিয়ে খাবারের প্লেট ও পরে যায়। আনান এগিয়ে এসে তুলতে গেলে নীল তাকে থামিয়ে বলে,

-তুলতে হবে না,রেখে দে।

-আবার এনে দিচ্ছি।

-বলেছি? আগ বাড়িয়ে কাজ ভালো লাগে না। আর নিচে কাউকে বলিস না। এখন যা এখান থেকে।

ভাইয়ের এমন মেজাজ দেখে আনানের আর কিছু বলার সাহস হয় না। ইনায়াকে একটু দেখে সে চলে যায়। নীল সারাদিন না খেয়ে আছে,এখন খেতে গিয়েও তা নষ্ট হয়ে গেল। বিষয়টা ভেবে বেশ খারাপ লাগে ইনায়ার। নীলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-খাবেন না?

ইনায়ার দিকে না তাকিয়ে নীল ফ্লোর পরিষ্কার করতে করতে জবাব দেয়,

-কেন খাইয়ে দিবি?

পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন

(চলবে……)

#Running

#episode:3

Written by Samia Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻sobai beshi beshi share kore diyen…Ar page ta like kore diyen 🥺🫶🏻

আমাদের সিরাজগঞ্জ এর সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
Back to top button

Please Disable "ADBLOCKER"

আপনাদের জন্য কত কষ্ট করছি আর আপনারা "ADBLOCKER" ব্যবহার করছেন ? আমাদের ইনকাম নেই বললেই চলে, দয়া করে "ADBLOCKER" টা বন্ধ করে সাহায্য করবেন । Please Disable "ADBLOCKER", Its Help us to Add More Content Like This, Thanks.