golpoআড়ালে তুমি

আড়ালে তুমি পর্ব -২০

#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -২০

নীলের ফোনে নোটিফিকেশন আসে,সামিরার অ্যাকাউন্ট থেকে। চট করে ফোন হাতে নিয়েই লগইন করে। সামনেই ইনায়ার মেসেজ। মেসেজটা পড়তেই নীলের মাথায় আগুন ধরে যাওয়ার মতো অবস্থা।

কোনো রকমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে লিখলো,

“আবার কী হলো?”

“আমি নীল ভাইকে ভুলতে চাই। কোনো ভালোবাসা নেই আমার ওনার প্রতি।তুই ছেলে দেখ।”

নীলের ইচ্ছে করছে ফোনটা ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলতে। ফোনটা বিছানায় ফেলে চুলে হাত রেখে বড় বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। উজ্জ্বল শ্যামলা মুখটার মধ্যে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘেমে সাদা পাতলা টি-শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেগে আছে। দু হাত দিয়ে মুখ মুছে দরজা দেয় নীল। এসি অন করে তাপমাত্রা আস্তে আস্তে কমাতে থাকে। ক্রমাগত ঠান্ডা বেড়ে চললেও নীল থামে না। রিমোট একটানা শক্ত করে চেপে রাখে কিছুক্ষণ।

তারপর রিসান কে কল করে বলে,

-আইডি ফেরত দিয়ে দে। আর দরকার নেই।

রিসানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয়।

এরপর সামিরার আইডি থেকে ইনায়ার মেসেজ ডিলিট করে দেয়।

.

.

.

ইনায়ার আজ থেকে পরীক্ষা শুরু। গত ছয়দিন ধরে নীলের কোনো খোঁজ নেই। ইনায়ার তাতে কিছু আসে যায় না। বরং নীল সামনে আসলে আরো দূর্বল লাগতো তার। ঘুম থেকে উঠে বাংলা ১ম পত্র এক নজরে দেখে নিল। নোটগুলো রিভিশন দিয়ে খেতে চলে আসে ইনায়া।

আকবর দেওয়ান ইনায়াকে দেখতেই বললেন,

-পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন তোমার আম্মু?

-আলহামদুলিল্লাহ বড়বাবা।

কামরুল দেওয়ান মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দেন। বললেন,

-ভালোমতো পরীক্ষা দাও মা। মন দিয়ে সব লিখবে।

ইনায়া মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দেয়।

ইনায়ার সামনে আনান বসেছে,ইনায়াকে ছোট্ট করে বলল,

-All the best Inu!

কথা টা বলেই আসে পাশে বাবা কাকা দের দিকে তাকালো। তারা যদি মনের কথা বুঝে ফেলেন সে ভয়ে।

ইনায়া আনানের জবাবে মুচকি হাসি দেয়।

শিমু জাহান আর আয়েশা আক্তার খাবার এনে পরিবেশন করেন । তবে সেদিকে ইনায়ার খেয়াল নেই। এক ধ্যানে সিড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। এতোদিন নীলের সম্মুখীন যেন না হতে হয়ে তাই ইনায়া একা আড়ালে এসে খেয়ে যেতো। তবে আজ পরীক্ষার দিন নীলকে দেখতে চেয়েছিল ইনায়া। কিন্তু নীলের দেখা নাই।

অনেকক্ষণ নীলের জন্য অপেক্ষা করে ইনায়া মাথা নিচু করে শিমু জাহান কে বলল,

-বড় মা!

-হু বল,কিছু লাগবে?

-নীল ভাই কই?

শিমু জাহান ইনায়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকেন। বড়মার থেকে জবাব না পেয়ে ইনায়া মাথা উঁচু করে সেদিকে তাকায়। শিমু জাহানের তাকানো দেখে ইনায়ার মনের মধ্যে ভয় হচ্ছে।

পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ভাবল,

-বড়মা কি কিছু টের পায়?

পরক্ষণেই দ্রুত গ্লাস রেখে বলল,

-কলেজে কে নিয়ে যাবে? তাই জিজ্ঞেস করলাম…

শিমু জাহান একই ভাবে ইনায়াকে দেখছে। তার সাথে বাড়ির সকলেও।

ইনায়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,

-কী হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

আনায়া কপালে হাত রেখে ইনায়াকে ডাকে। ভ্রু কুচকে বলে,

-তুমি কোন জগতে ছিলে ইনুপু?

আনান আনায়াকে ধমক দিয়ে বলে,

-আহ্ অনু! ওর পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আর বড় ভাইয়া নিজে থেকেই ওকে জানাতে মানা করেছিলো।

ইনায়া এবার অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

-আরে কী হয়েছে বলবে?

-বড় ভাইয়া এখন সিডনিতে ইনু।

ইনায়ার গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম কথা শুনেই। কোনো রকমে পানি দিয়ে গিলে বলে,

-কেন?

-বিজনেস পার্পাস…

ইনায়া মাথা নিচু করে খেতে থাকে। মনটা এখন খারাপ হয়ে গেল।এদিকে কামরুল দেওয়ান তাড়া দিচ্ছেন,মেয়েকে নিয়ে বের হবেন।

.

.

.

পরীক্ষা শেষ করে ইনায়া,শর্মী আর সামিরা একসাথে হয়। ইনায়া মুখ ভার করে থাকায় শর্মী আর সামিরা দুজনেই তার কাছে এসে একসঙ্গে বলল,

-কী হয়েছে?

ইনায়া জবাব দেয় না। শর্মী পুনরায় বলে,

-আপনার নীল ভাইকে ভুলতে পারেননি?

ইনায়া চকিত দৃষ্টিতে শর্মীর দিকে তাকায়। শর্মীকে এক নজর দেখেই তাকায় সামিরার দিকে। সামিরা এক ফালি হেসে বলে,

-ও আরান ভাইয়াকে কিছুই বলেনি।

শর্মীও ইনায়াকে আশ্বস্ত করে বলে,

-আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আমি গ্রহণ করি না। তাই নো চিন্তা ডু ফুর্তি।

ইনায়া কাউকে কোনো জবাব দেয় না। সামিরা ইনায়ার মন খারাপ বুঝে কাঁধে হাত রেখে বলল,

-মন খারাপ করা ইনুর সাথে যায় না। তুই না ছেলে খুঁজতে বলেছিলি? একজন কে পেয়েছি। He can eat your 100 Neel Vai.

ইনায়া মন খারাপ করেই বলে,

-আমার কাউকেই ভালো লাগে না।

-একে লাগবে দোস্ত। শর্মীকে জিজ্ঞেস কর।

শর্মীও সাথে সাথে তাল দিয়ে বলে,

-হ্যাঁ হ্যাঁ! ভালো লাগবে। নীল ভাইয়ের কী কী জিনিস তোর ভালো লাগে আগে তাই বল।

-উমমম্ বললে শেষ হবে না

সামিরা ইনায়া কে টেনে এনে কলেজের মাঠে বসায়। বলে,

-তুই শুরু কর। আমরা শুনছি।

ইনায়া কিছুটা ইতস্তত বোধ করে বলে,

-ওনার ভয়েস….ঐ কণ্ঠস্বর শুনলে আমি গভীরতা পরিমাপ করতে পারি। আতঙ্ক,ভয়,রাগ,ভালোবাসা,যত্ন সব মিশে থাকে।

সামিরা ও শর্মী একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। একসাথে বলে,

-আর কিছু ভালো লাগে না?

-নীল ভাইয়ের চোখ। ঐ চোখে এতো মায়া। আবার আমাকে ভয় পাওয়াতে ঐ চোখ দুটোই যথেষ্ট। যখন রেগে যায়,তখন লাল হলেও সুন্দর লাগে।

-আর?

-উমমম্ ,নীল ভাইয়ের ঘ্রাণ। এতো সতেজ , প্রাণবন্ত ঘ্রাণ আসে। ড্রাগের মতো দোস্ত। বারবার মনে হয় ঐ ঘ্রাণ নেই। ওনার কাছাকাছি গেলে সে ঘ্রাণ আমায় আকর্ষণ করে। এই ধর ,রং এর ঘ্রাণ ,কেরোসিন তেল,বাইকের তেলের,ভেজা মাটির, কাঠগোলাপের, নতুন বইয়ের পাতার এগুলোর যেমন আলাদা আলাদা আকর্ষণ করার ঘ্রাণ আছে,নীল ভাই এর ও ওমন আলাদা একটা ঘ্রাণ আছে।

-ভাই তুই তো এখন আমাদের জোড় করছিস প্রেমে পড়ানোর জন্যে।

-কেন আমি কী করলাম?

-কিছু না বোন। বল তারপর?

-উমমমমম্ ওনার বডি ফিটনেস,ফ্যাশনসেন্স,আর…..

-আর কী?

– jawline and Adam’s apple

-ওকে ক্ষমা।

-আরেকটা আছে…

-কী?

– Beard…..ওনার চাপ দাড়ি,নায়কদেরও এতো সুন্দর হয়না। আর চুলগুলো? ওমন চুল পাওয়া সবার স্বপ্ন,বুঝলি?

-থাম মা! শেষ তো?

-না,শেষ হবে না। নীল ভাই এর হাত যে দেখবে সে পাগল হয়ে যাবে। হাতের রগ এমন ভাবে ফুলে থাকে যেন মনে হয়ে আমায় ডাকছে। বলছে,

“একটু ছুঁয়ে দেখ ইনু,একটু ছোঁ…”

সামিরা হঠাৎ ই শর্মীকে টেনে বলে,

-এই চল তো। ও এখন উপন্যাসের চরিত্রের বর্ণনা করছে। তুই না বিবাহিত? কান বন্ধ করে হাঁটা দে।

শর্মী উঠে দাঁড়ালো। তারপর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

-এগুলো শুধুমাত্র আকর্ষণ,কতদিন ধরে এমন মনে হয়?

-এক মাসের থেকে কয়েকদিন কম…

-বেশিদিন হয়নি। ভুলে যা। সামিরা একজনকে খুঁজে রেখেছে। আজই কথা বলবি। চোখের সামনে তোকে পা*গল হতে দেখতে পারবো না!

শর্মী আর সামিরা চলে যায়। ইনায়াও রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্য। মনমরা, উদাসীন লাগছে তাকে। বাড়িতে এসে ফ্রেস না হয়েই আগে ফোন নিয়ে বসে পরে। ফেসবুকে গিয়ে নীলের আইডি সার্চ করে বারবার রিফ্রেশ করে দেখে। কোনো আপডেট নেই। লাস্ট কখন অনলাইনে ছিল তাও দেখা যাচ্ছে না। অনেক ভেবেচিন্তে কিছু পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইনায়া। 

সযত্নে ক্যাপশন লেখে,

“তোমারে দেখিবার মনে চায়

দেখা দেও আমায়,

তোমারে দেখিবার মনে চায়।

দেখা দিয়া শান্ত করো,নইলে আমার প্রাণ যায়

……

সামনে দাঁড়াও একবার, দেখি নয়ন ভরিয়া

ভালোবাসি তবে কেন, যাওনা শান্ত করিয়া

তোমারে দেখিয়া একবার, জল ঢেলে দেই বেদনায়”

পোস্ট করে ফোন পাশে রেখে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরে ইনায়া। চাদরের উপর আঙ্গুল ঘোরাতে ঘোরাতে ভাবে,

-নীল ভাই দেখলে অবশ্যই রিয়্যাক্ট দিবে।

ভাবতে ভাবতেই ফোনে নোটিফিকেশন আসে ইনায়ার। ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকতেই দেখে আনানের রিয়্যাক্ট। দেখেই মনটা খারাপ হয়ে যায় ইনায়া।

বিড়বিড় করে বলল,

-নীল ভাই আমায় ভুলবেন কীভাবে? ওনার মনে তো আমি কোনোদিন ছিলামই না! মনে থাকলে না হয় ভুলতে পারতো!

পেইজ: সবার আগে গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন

(চলবে……)

#Running

#episode:20

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻আপনাদের দেওয়া রিভিউ দেখলাম আমি। আসলে নিজের লেখার প্রশংসা শুনতে অনেক ভালো লাগে। অনেক ধন্যবাদ💖

আমাদের সিরাজগঞ্জ এর সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
Back to top button

Please Disable "ADBLOCKER"

আপনাদের জন্য কত কষ্ট করছি আর আপনারা "ADBLOCKER" ব্যবহার করছেন ? আমাদের ইনকাম নেই বললেই চলে, দয়া করে "ADBLOCKER" টা বন্ধ করে সাহায্য করবেন । Please Disable "ADBLOCKER", Its Help us to Add More Content Like This, Thanks.