golpoআড়ালে তুমি

আড়ালে তুমি পর্ব -( ১২+১৩)

#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -( ১২+১৩)

ইনায়ার সামনে দশ বারো টা শপিং ব্যাগ রাখা।

নীল দুই হাত ভাঁজ করে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

-যা যা পছন্দ করেছিলি,সব আছে। দেখে নে।

ইনায়া জবাব দেয় না কোনো।

নীল পুনরায় বলে,

-আমি দেখতে বলেছি!

ইনায়া সহসা জবাব দেয়,

-দেখব না আমি!

-okay fine! তুই চাচ্ছিস যে এগুলোর অবস্থা যেন ঐ চুড়ি গুলোর মতো হয়?

ইনায়া চমকে নীলের দিকে তাকায়। কী বি*দ্ধস্ত অবস্থা করে ফেলেছিল চুড়িগুলোর।

মনে মনে আওড়ালো,

-একটা চুড়ি ভেঙে গেলে আমি কান্না করি,এতো কষ্ট হয়। আর নীল ভাই কী করে ওতো গুলো চুড়ি মুচড়ে ভাঙলো?

ইনায়ার চুপ থাকা দেখে নীল আরেকটা ধমক দিয়ে বলল,

-তাহলে এগুলো শেষ করে ফেলি,নিবি না তাই তো?

নীলের এমন জোড়াজোড়ি তে ইনায়ার দম বন্ধ লাগছে।

নিজেকে সামলে নীলকে বলে,

-সেদিন একটা ভুল করেছিলাম, কিন্তু তার শাস্তি এতো দিবেন? মাফ করে দেন না নীল ভাই! আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। এতো জোড় খাটাচ্ছেন কেন? আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে গিয়ে এমন করেন,সে আমার জায়গায় থাকলে পারতেন এমন করতে?

একনাগাড়ে কথা গুলো বলল ইনায়া।

নীলের বাকা হেসে জবাব দেয়,

-নীল কী পারে তাই নিয়ে তোর ধারনা নেই । আর সে ধারনা এতো দ্রুত তোকে দিতে চাচ্ছি না। ব্যাগ গুলো খোল,আর দেখ সব আছে নাকি।

ইনায়া ব্যাগগুলো খুলতেই তার পছন্দ করা সব জিনিস পেয়ে যায়।

নীল প্রশ্ন করে,

-সব আছে?

ইনায়া মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে।

নীল পুনরায় বলল,

-আর কিছু লাগবে?

ইনায়া ছোট করে জবাব দেয়,

-না।

নীল মুচকি হাসে। ইনায়ার থেকে দূরত্ব কমিয়ে বলে,

-রেগে আছি বলে কষ্ট পাচ্ছিস?

ইনায়ার চোখ ছলছল করে ওঠে।

ঠোঁট উল্টিয়ে জবাব দেয়,

-হু..

-তাই বলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবি এটা কেমন কথা? শুকিয়ে গিয়েছিস,বিয়ে তে এ অবস্থায় গেলে সবাই এসে আমাকে কথা শোনাবে।

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,

-কেন? আপনাকে কথা শোনাবে কেন?

-তোকে যত্ন করি না তাই বলবে।

-আপনাকে কোনো বলবে?

-এতো প্রশ্ন করিস কেন ইনু? যেটুকু বলবো সেটুকুই শুনবি। আর আমাকে কথা শোনাবে না কেন? তুই আমাদের বাড়ির মেয়ে না?

ইনায়া জবাবে বলে,

-হ্যাঁ!

-মাফ করে দিলাম তাই,আর রেগে নেই। খাওয়া দাওয়া করিস এখন ঠিক মতো।

ইনায়া হেসে দেয়। সে হাসিতে কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠেছে।

ইনায়ার উৎফুল্লতা দেখে নীল পিছিয়ে যায়।

গম্ভীর হয়ে বলে,

-তাই বলে পড়ালেখা বন্ধ করিস না! তোর কলেজ আর কোচিং থেকে যেন কোনো অভিযোগ না আসে।আর যেভাবে পড়ছিস কয়েকদিন, এভাবেই পড়তে থাক।

-কীভাবে?

-পড়া শেষ হচ্ছে ঠিক মতো,মার্কও ভালো আসছে। ধরে রাখ এটা।

-আপনাকে কে বলল?

-এ সামান্য খবর জানা ব্যাপার না। আর পড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি,আনানকে জ্বা*লানো যেন না দেখি। ও বিরক্ত হয়।

নীলের কথা শুনে ইনায়ার মন খারাপ হয়ে যায়। একই সাথে অনেক রাগ হয় আনানের উপর। ইনায়ার মুখভঙ্গি লক্ষ্য করে কিছুক্ষণ ধরে নীল। রুম ছেড়ে হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায়।

তবে যাওয়ার আগে দরজার সামনে থেকে জোড় দিয়ে বলে,

-আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে কারো তুলনা করতে যাবি না,এমনকি তোর নিজেরও না। সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যার তার মুখে তার কথা মানায় না।

ইনায়ার বেশ গায়ে লাগলো নীলের কথা। মনে মনে ভাবতে থাকে সে,

-ঐ মেয়ের নিয়ে এতো অহংকার! নীল ভাই,আমিও দেখিয়ে দেব,ইনায়া ধরা ছোঁয়ার ভেতরে না!

ইনায়া বই নিয়ে বসে যায়। রেজাল্ট তো তাকে ভালো করতেই হবে।

.

.

.

.

আজ শর্মীর মেহেদি অনুষ্ঠান।

আজকে সকলের জন্যে থিম কালার রেখেছে সবুজ। কাঁচা মেহেদি পাতার রং। মেহেদি আর হলুদের অনুষ্ঠান দুই বাড়ি থেকে একসাথেই করার আয়োজন করা হয়েছে। ছাদের দুই প্রান্তে দুইটা স্টেজ করা। একটাতে বসেছে আরান,আরেকটাতে শর্মী। শর্মীর এক পাশে ইনায়া,আরেকপাশে সামিরা বসেছে । মেহেদি দেওয়ার জন্য পার্লার থেকে একজন মেয়ে এসেছে,সে শর্মীর সামনে বসেছে।

গান বাজছে,

Mehandi-vehandi naa mujh ko lagaana

Muje saajan ke ghar nahin jaanaa..

আরানের কয়েকজন বন্ধু এসেছে। নীল,আনান,আনায়া সহ দেওয়ান বাড়ির বউরা এসেছে। শর্মীর সব কাজিনরা ও উপস্থিত। গানের সাথে সাথে কিছুক্ষণ পর পর আরানও গেয়ে উঠছে আর শর্মীর দিকে তাকিয়ে ফ্লাইং কি*স করছে। এদিকে এসব নিয়ে সামিরা আর ইনায়া একটানা মজা করেই চলেছে। শর্মী লজ্জায় লালে লাল।

কিছুক্ষণ পর আনান উঠে আসে ইনায়ার কাছে।

হাত ধরে বলে,

-আমি মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছি। তোর খালি হাত একদমই ভালো লাগছে না।

ইনায়া রেগে হাত সরিয়ে নেয়ে। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে,

-বিরক্ত করো নাতো ভাইয়া।

সামিরা ইনায়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

-কীরে তোর আবার কী হলো? তোর ভাই এতো যত্ন করে মেহেদি দিয়ে দিতে চাইলো,আর তুই মানা করে দিলি!

-পরে তোকে বলবো,ও আমাকে নিয়ে নীল ভাইয়ের কাছে যা বলেছে।

নীল আর আরানও ছুটে চলে এসেছে এই স্টেজের কাছে। নীল আনানের কাধে হাত রেখে বলল,

-কী হয়েছে?

-ভাইয়া, ইনু বলছে আমি নাকি ওকে বিরক্ত করছি। মেহেদি পড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম শুধু।

-বিরক্ত হয়েছে তাই বলেছে,অন্য কাউকে পড়িয়ে দে।

আনান অবাক হয়ে বলে,

-আর কাকে?

অমনি ইনায়া সামিরার হাত টেনে বলে,

-এই যে ওর হাতে।

নীলও আনানের হাতে মেহেদি দিয়ে বসিয়ে দেয় সামিরার মুখোমুখি। দুজনেই চুপচাপ, আকস্মিক ঘটনায় লজ্জা পেয়ে আর কথা বাড়ায় না। আনান সামিরার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিতে থাকে। নীলও আরেকটা মেহেদির টিউব নিয়ে ইনায়ার হাত টেনে ধরে।

ফিসফিস করে বলে,

-নড়বি না একদম,চুপ করে বসে থাক।

নীল হাতের মাঝে লিখে দেয়,

Blue Butterfly

পাশ দিয়ে করে হালকা কাঁচা হাতের করা ডিজাইন।

আরান নীলের মেহেদি দেওয়া দেখে কানে কানে এসে বলল,

-বউকে মেহেদির ছোঁয়া লাগাতেই হয়?

নীল আরানকে একটু ঝুঁকতে বলে , তারপর ওর কানে কানে বলল,

-সবার বউ আর আমার বউ এক না!

তৎক্ষণাৎ নীলের কথা শুনে আরান মেহেদি আর্টিস্ট এর কাছে গিয়ে বলে,

-আপু,নামের জায়গা টা ফাঁকা রাখবেন। আমি লিখে দিব ওখানে।

শর্মী আরেক দফায় লজ্জা পেয়ে সকলের দিকে তাকায়। আরানও বাঁকা হাসি দিয়ে নীলকে দেখে। এরপর ফিরে যায় নিজের জায়গায়। বাকি বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে। সকলে একটু একটু করে আরানের হাতে মেহেদির ছোঁয়া লাগায়। লিখে দেয় শর্মীর নাম পুরো হাত জুড়ে।

.

কাল হলুদের জন্য আজ নাচের প্রাকটিস হচ্ছে। একদল একদল করে প্রাকটিস করছে। নীলের বন্ধুরা,আরানের কাজিন আর শর্মীর কাজিনরা সকলেই প্রাকটিস করছে এখন। অনুরও খুব ইচ্ছে হয়,তবে সঙ্গীর অভাবে সে নাচ করতে লজ্জাবোধ করছে। তখনই মাথায় আসে ইনায়ার কথা।

দৌঁড়ে ইনায়ার কাছে গিয়ে বলে,

-ইনুপু এদিকে আসো একটু…

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,

-কেন? কী হয়েছে?

-আমি নাচ করব।

-তো কর!

-তুমিও থাকবে..

-অসম্ভব!

মাঝে নীল অনুকে থামিয়ে বলে,

-ও যাবে না অনু,অন্য কাউকে বল।

-ইনুপু যাবে!

আনায়া অনেক অনেকক্ষণ ধরে অনুরোধ করার পর ইনায়া রাজি হয়। বিশেষ করে নীল যেতে মানা করেছে বলে ইনায়া রাজি হয়েছে। নীলের থেকে হাত সরিয়ে যেতে গেলেই নীল হ্যাঁচকা টান দিয়ে বসিয়ে দেয়। শক্ত করে হাত চেপে বলে,

-খবরদার ! এই ভুল ভুলেও না!

ইনায়া ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে। কান্না করার উপক্রম তার।

ঠোঁট চেপে বলল,

-আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করব। আপনার ভালোবাসার মানুষকে যা বলার ব…

আর কথা বাড়াতে পারে না ইনায়া। নীল আরো শক্ত করে হাত চেপে রেখেছে।

আনায়া ভাইয়ের এতো রেগে যাওয়া দেখে ইনায়াকে আর কিছু বলে না। ছুটে সামিরার কাছে যায়,

-আপু,আমার সাথে নাচ করবে প্লিজ…

-আমি তো পারি না অনু।

আনায়া ঠোঁট উল্টিয়ে আনানকে বলে,

-ভাইয়া প্লিজ,আপুকে একটু বলো…

-ইনুকে বলেছিস?

-ইনুপুর কথা আর বলো না,বড় ভাইয়া রেগে আছে। তুমি সামিরা আপুকে বলো একটু।

আনান সামিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

-করো অনুর সাথে নাচ,যদি সমস্যা না থাকে..

সামিরা মনে মনে ভীষন খুশি । অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

-ওকে ডান।

এদিকে ইনায়া নীলের হাত ছাড়াবার চেষ্টা করছে। তার মনে হচ্ছে হাতের হাড়গুলো একটার সাথে আরেকটা মিশে যাচ্ছে। দাঁত চেপে বলল,

-নীল ভাই, লাগছে,প্লিজ

-তুই কোন সাহসে নাচতে রাজি হলি? আবার মুখে মুখে কথা বললি!

-অনুকে কিছু বললেন না কেন?

-তোর উপর আমার যে অধিকার,ওর উপর সে অধিকার নেই।

-হ্যাঁ ,কারন ও আপনার বোন। আর আমি কেউ না,কেউই না। এসব বুঝি আমি!

-তুই বুঝলে নাচতে রাজি হতি না?

-আর হব না, ছাড়েন,লাগছে!

নীল ইনায়ার হাত ছেড়ে দেয়। লাল হয়ে আছে হাতটা। ইনায়ার চোখ দিয়ে কয়েক ফোট পানি পড়ল হাতের উপর।

(চলবে……..)

#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব – ১৩

ইনায়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর বিয়েতে যাবে না।নীলের মুখোমুখি হতে একদমই ইচ্ছে করছে না তার।তাই সামিরাকে কল দেই সে।

শক্ত গলায় বলল,

-হলুদে আমি যাচ্ছি না।

-সকাল সকাল কী পা*গলামি শুরু করলি ! কোনো স্বপ্ন দেখেছিস?

-আমি মজা করছি না,সিরিয়াস।

-কি আশ্চর্য! যাবি না কেন?

-এমনি , ভালো লাগছে না তাই। একটু পরেই তো হলুদ লাগিয়ে গোসল করাবে।তোরা যেন আমার জন্য অপেক্ষা না করিস তাই জানিয়ে রাখলাম। রাখছি এখন।

বলেই ইনায়া কল কেটে দেয়।

পড়ার টেবিলে বায়োলজি ১ম পত্র বই নিয়ে বসে রইল ইনায়া।দেওয়ান বাড়ির সব বউরা শর্মীর হলুদে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এরই মাঝে অনু দৌঁড়ে আসে ইনায়ার ঘরে।

তাড়াহুড়ো করে বলে,

-ইনুপু তুমি এখন রেডি হওনি?

ইনায়া কোন জবাব দেয় না।ইনায়া অভিমান করেছে বুঝতে পেরে অনু ইনায়ার কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।

আহ্লাদ করে বলল,

-ইনুপু তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?

ইনায়া অনুর হাত সরিয়ে দেয়।

অনু আবার বলে,

-আমার কি দোষ? বড় ভাইয়া যে অমন রেগে যাবে তা জানলে আমি তোমায় কিচ্ছু বলতাম না। তুমি প্লিজ রাগ করে থেকো না ইনুপু্।

অনু ছলছল করে ইনায়ার দিকে তাকায়।

ইনায়া অনুর হাত ধরে বলে,

-রেগে নেই,তোরা যা। আমি পরে আসব। পরীক্ষার পড়া বাকি আছে।

অনু চলে যায়। কথা বাড়ায় না আর।ইনায়া আবার বই নিয়ে বসে পরে।

.

.

.

.

শর্মী আর আরানকে পাশাপাশি বসিয়ে সাবাই হলুদ মাখাচ্ছে। তবে সামিরা লক্ষ্য করে ইনায়া সত্যিই আসেনি।

অনুকে দেখে তৎক্ষণাৎ ডেকে বলল,

-ইনু আসেনি কেন অনু?

-আপুতো বলেছে যে আপুর ভালো লাগছে না।

-আমাকেও বলেছিল কল করে,আমি তো ভেবেছিলাম মজা করছে!

-সামিরা আপু জানো? আমার মনে হয় কি….

-কী মনে হয়?

-মনে হয় আপু রাগ করেছে…

-কেন?

-বড় ভাইয়া কাল আপুকে অনেক রাগ করেছে,হাতে ব্যাথা পেয়েছিল আপু।

-কী বলছো! কেন?

-ঐ যে,যখন আমি নাচতে বলেছিলাম আপুকে,আর আপু রাজি হয়েছিল তখন।

সামিরার তিরতির করে রাগ বেড়ে যায়। এদিকে নীল আর আনান এসেছে সরাসরি অফিস আর ভার্সিটি থেকে। নীলের চোখ চারিদিকে ইনায়াকে খুঁজছে। সেই সাথে আনানও দেখছে,ইনায়া কোথায়। তবে দুজনেই ব্যর্থ হয় ইনায়াকে দেখতে। নীল অনুকে ডাক দেয়। সামিরা পেছন ঘুরে নীলকে দেখতে সেও অনুর সাথে সাথে যায়।

নীল অনুকে এগিয়ে আসতে দেখে কয়েক হাত দূর থেকে প্রশ্ন করে,

-তোর ইনুপু কোথায়?

-আসেনি..

-কেন?

অনুর উত্তরের অপেক্ষা করল না সামিরা।

নিজেই বলল,

-ভাইয়া কাল আপনি ইনায়ার সাথে যা করেছেন,ঠিক করেননি।

আরান উঠে এসে নীলকে বলে,

-কী করেছিস মামা? শর্মী তো আমার সাথে ঝামেলা করছে। তুই আসলেই বেশি বাড়াবাড়ি করিস শা*লা! আমার বিয়ের আগেই আমার বউ এর সাথে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিচ্ছিস!

নীল জবাব দেয় না। তার মাথায় এখন ঘুরছে ইনায়া বাড়িতে একা কী করছে। আরান আবার বলে,

-যা নীল, দাঁড়িয়ে থাকিস না। আর মামা শোন! ও না এলে তুইও আসিস না। শর্মী আমায় বলেছে আমি নাকি বাইরের পলিটিক্স বাড়িতেও খাটাচ্ছি। বউ আমার এখন রাতেই পার্টি খেয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

-আর একবার বউ বউ করলে আমি দিনেই তোর পার্টি খেয়ে দেব। সর্ শা*লা!

নীল হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায়।

.

.

.

বাসায় এসে নীল দেখে ইনায়া বই নিয়ে বসে আছে।সামনে থেকে বই সরিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল,

-হলুদে যাসনি কেন?

-ভালো লাগছিল না । বইটা দেন।

-না,দেবো না।তুই চল এখন আমার সাথে।

-না,আমি যাবো না। বললাম তো ভালো লাগছে না!

-কেন?

-জানি না… বই দেন।

-ভালো লাগছে না কেন?

-আপনার মুখ দেখতে ইচ্ছে করছিল না,হয়েছে? শুনেছেন? শান্তি এখন? বইটা দেন এবার!

-তোকে এক্ষুনি আমার সাথে যেতে হবে ইনু। ১০ মিনিট টাইম দিলাম রেডি হয়ে নে।

-বললাম না যাব না? আপনি যা ইচ্ছা করবেন,আর আমি কিছু করলে এমন করবেন,কেন নীল ভাই?

কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে,

-আপনি যে কাউকে ভালোবাসেন ,তার সাথে কী করেন না করেন তা নিয়ে আমি জিজ্ঞেস করি? কিছু বললেই বলেন সে তুলনার বাইরে। আর আমাকে সস্তা লাগে?

-পা*গলামি করিস না ইনু!

-আপনি যখন যা বলবেন আমি তাই শুনতে বাধ্য নই নীল ভাই।

-আমার বন্ধু আর তোর দুই বান্ধবী শুধু জোড় করছে বলে! নাহলে থা*প্পড় মেরে এখানে অ*জ্ঞান করে রেখে যেতাম । মুখে মুখে অনেক কথা বলছিস। দশ মিনিট সময় তোর হাতে। আমি বাইরে যাচ্ছি। দেরি যেন না হয়!

নীল দরজার বাইরে গিয়ে স্টপওয়াচ অন করে টাইম দেখতে শুরু করে।আর ২ মিনিট পরপর ইনায়াকে বলতে থাকে,

-ফাস্ট ইনু!

ইনায়ার প্রচুর রাগ হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে যেন কী হয়েছে। নীলকে দেখলেই অস্থির লাগে। নীলের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে হিংসা হয়,রাগ হয়,জেদ হয় নীলের উপর। আগে যেমন ভয় লাগতো নীলকে দেখে,সে ভয় এখন জেদে পরিণত হয়েছে। কোনো রকমে ইনায়া রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়।

ইনায়াকে দেখে নীল এমন এক হাসি দেয় যেন সে রাজ্য জয় করল মাত্রই। বের হয়ে যায় তাকে নিয়ে।

.

.

.

হলুদ সন্ধ্যা উপলক্ষে সবাইকে নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া হয়। ছেলেদের নীল পাঞ্জাবী আর মেয়েদের নীল শাড়ি,সিল্ক মসলিন কাপড়ের। শর্মী পড়েছে হলুদ লেহেঙ্গা আর আরান পড়েছে হলুদ পাঞ্জাবী সাথে লাল কোটি।সামিরা ,অনু শাড়ি পরে ছাদে চলে এসেছে। ইনায়াকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে তার মেজোমা রুবিনা ইয়াসমিন।

সামিরা এসেই মাইক নিয়ে অ্যানাউন্সমেন্ট করে,

-অ্যাটেনশন গাইজ!

আরান,নীল ,রিদ,আনান,শর্মী ,অনু সহ সকলে সেদিকে তাকায়। সামিরা বলে,

-আজকে একজন বিশেষ অতিথি আমাদের মাঝে আসছে। যাকে ঘিরে এতো কাহিনী। তিনি আর কেউ নন,আমাদের প্রিয় কুদ্দুস মামা!

আরান শিষ বাজিয়ে বলে,

-আরেহ্ পাংখু আবুল মামা!!!

সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠানে সবাই একে একে আসতে শুরু করে।কুদ্দুস মামাও চলে আসে ফুচকা নিয়ে। এরই মাঝে শাড়িতে ইনায়া উপস্থিত হয়। এক হাতে শাড়ির আঁচল আরেক হাতে মাথার চুল ঠিক করছে। নীলের সেদিকে চোখ পড়তেই বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে পরে।

নীলের এ অবস্থা দেখে তার আরেক বন্ধু রিসান নীলকে ধরে বলে,

-কীরে মামা! খারাপ লাগছে?

-জান শরীরে না থাকলে তো খারাপই লাগবে!

-জান আবার কই?

-তোর ভাবির হাতে।

রিসান সামনে তাকাতেই ইনায়াকে দেখতে পায়। বোকার মতো তাকিয়ে বলে,

-হাতে তো শাড়ির আঁচল!

-তুই বুঝবি না পা*গলা! এই! তাকাস না কিন্তু,অন্যদিকে তাকা।

রিসান নীলকে ছেড়ে দেয়। রেগে বলে,

-মুড়ি খা শা*লা!

ইনায়া,সামিরা,অনু সবাই কুদ্দুস মামার কাছে আসে ফুচকা খাওয়ার জন্য।সামিরা কুদ্দুস মামাকে বলে,

-মামা,আমাদেরকে আপনার বেস্ট ফুচকা খাওয়ান।

স্টেজে বসে শর্মী ইশারা দিয়ে বলে,

-আমার জন্যেও দে!!

ইনায়া হেসে কুদ্দুস মামার দিকে তাকিয়ে বলল,

-মামা,আপনার না হওয়া বউ ফুচকা খেতে চাচ্ছে,তার জন্য আলাদা করে বানিয়ে দিন।

কুদ্দুস মামা সবাইকে ফুচকা বানিয়ে দেয়।

নীল একটু দূরে থেকে ইনায়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছে। অনু নীলের দিকে তাকিয়ে ইনায়ার দিকে তাকালো। ইনায়াকে ফিসফিস করে বলল,

-ইনুপু! তোমার পেট খারাপ হতে পারে!

-কেন?

-দেখ বড় ভাইয়া কীভাবে তাকিয়ে আছে তোমার দিকে।

ইনায়া তাকায় নীলের দিকে। নীলের চোখে চোখ পড়তেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার। কেমন যেন না পাওয়ার ছোঁয়া লেগে আছে।

মনে মনে বলল,

-নীল ভাইয়ের ভালোবাসার মানুষের দিকেও কী উনি এভাবে তাকিয়ে থাকে?

পেইজ: গল্প পাওয়ার জন্য রোমান্টিক প্রেমের গল্প পেইজটি নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো করে রাখবেন

(চলবে……)

#Running

#episode:13

Written by #Samia Sara

Story name: #আড়ালে তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

আমাদের সিরাজগঞ্জ এর সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
Back to top button

Please Disable "ADBLOCKER"

আপনাদের জন্য কত কষ্ট করছি আর আপনারা "ADBLOCKER" ব্যবহার করছেন ? আমাদের ইনকাম নেই বললেই চলে, দয়া করে "ADBLOCKER" টা বন্ধ করে সাহায্য করবেন । Please Disable "ADBLOCKER", Its Help us to Add More Content Like This, Thanks.