যমুনার তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন শতাধিক ঘরবাড়ি
বর্ষার শুরুতেই উজানের ঢলে যমুনা নদীতে অব্যাহত ভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অরক্ষিত নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এলাকাবাসীর দাবী ইতোমধ্যেই কয়েকদিনের ভাঙনে যমুনার ঘোলা জলে তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বিস্তির্ণ ফসলের মাঠ। অপরদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গড়িমসি এবং অব্যবস্থাপনার কারনে যমুনার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এলাকাতেও দেখা দিয়েছে ভাঙন। কলকল শব্দে অবিরত বয়ে যাওয়া যমুনা এখন তীরবর্তী জনবসতির জন্য বিরাট আতঙ্কের নাম। মাঝেই মাঝেই নদীর স্বভাব-সুলভ হুংকারে কেঁপে উঠছে জনগণ। কিছুক্ষণ পর পরই ধপাস করে বিকট আওয়াজ তুলে হৃদয় কাপিয়ে দিয়ে যমুনার ঘূর্ণিতে তলিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের বসতভিটা।
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের আরকান্দি, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর, পাচিল ও পাকুরতলা গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যেই অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে নদী তীরবর্তী এলাকার শত শত পরিবার ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে।
অপরদিকে সাংবাদিকদের দেখেই ভাঙন কবলিত এলাকার বসতবাড়ি হারানো বাবু মিয়া, ইয়াছিন কবিরসহ এলাকার শতাধিক লোকজন ক্ষোভের সাথে জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নানা টালবাহানা করে সময়মত কাজ শুরু না করায় আমাদের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সেইসাথে তীব্র স্রোতে টেনে নিয়ে গেছে আমাদের ফসলী জমি। একদিকে বাস্তুভিটা চলে গেছে নদীতে অপরদিকে ফসলের জমিও মিশে গেছে যমুনায় ; এখন সব হারিয়ে আমরা দিশাহারা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় প্রকল্পের অন্যতম ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মহসীন আলমের সাথে। তিনি এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মূলত শ্রমিক সংকটের কারনে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। এছাড়া উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যা নেমে আসায় ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে ভাঙন রোধে আমরা দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করছি।
পাউবো সূত্র জানায়, শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানাধীন ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার যমুনার ডান তীর ভাঙনরোধে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সাড়ে ৬শ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে কাজও শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্লোব তৈরি করে জিও ব্যাগগুলো পিচিং করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ যমুনার পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নদী ভাঙন শুরু হওয়ায় স্লোব ভেঙে পড়তে থাকে। সেই সঙ্গে জিও ব্যাগগুলোও নদীগর্ভে চলে যায়। ধীরে ধীরে স্লোবের অদূরে বাড়িঘরে ও ফসলি জমিগুলোতে ভাঙন শুরু হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ এলাকায় ভাঙন চলে আসছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এখানে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পাস হয়। কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজের তেমন গতি ছিল না। এখন প্রকল্প এলাকাতে ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েকদিনে অর্ধশত বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। শত শত মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ভাঙনের বিষয়টি পাউবোকে জানানো হয়েছে। আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের তালিকা প্রস্তুত করে সহায়তা দেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা ভাঙন রোধে সেখানে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের অধিকাংশ জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। মাত্র ৭শত মিটারের মত জায়গায় কাজ তূলনামূলক কম হওয়ায় সেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে আবদকালিন সময়ের জন্য আমরা দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি।