আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস
পানি নিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ প্রতিবাদের দিন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই মে আজকের দিনে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে লাখ লাখ স্বতস্ফুর্ত দেশপ্রেমিক জনতা অভূতপূর্ব লংমার্চের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী অবিশ্বাস্যভাবে ৯৬ বছরের বৃদ্ধ বয়সে সেই লংমার্চের তেজোদীপ্ত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২১শে এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মাত্র ১৮ কিলোমিটার উজানে ভারত পদ্মা নদীতে একতরফা ফারাক্কা বাঁধ চালু করলে কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয। নদ-নদীর পানি কমে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে পলি জমে ভরাট হতে শুরু করে এবং মরুকরণের ভয়াবহ প্রক্রিয়া শুরু হয়।এর প্রতিবাদে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী ভারতের ফারাক্কা বাঁধ পর্যন্ত লংমার্চের ডাক দেন।
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই মে লংমার্চের ঘোষণা সারা দেশের দেশপ্রেমিক মানুেষসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলে। সারা দেশ থেকে ভাসানীর অনুসারীসহ সাধারণ মানুষ বাস-ট্রেনে রাজশাহী পৌছে নির্ধারিত মাদ্রাসা ময়দানে জমায়েত হয়। পরে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে লাখ লাখ প্রতিবাদীর জনতার অংশগ্রহণে ভারতের সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ শুরু হয়। বিশাল লংমার্চের তেজোদীপ্ত শ্লোগান ছিল ‘ফারাক্কা বাঁধ মরণ ফাঁদ, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’।যদিও মাওলানা ভাসানী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা পর্যন্ত যেতে পারেননি সীমান্তে বিডিআর থামিয়ে দেয়ার কারণে। সীমান্তের ওপাশেও ছিল ভারতীয় বাহিনীর সশস্ত্র অবস্থান। পরে ভারতীয় সীমান্তের কাছে কানসাট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে ঐতিহাসিক বক্তব্য দেন মজলুম জননেতা। মাওলানা ভাসানী তাঁর বক্তব্যে ভারত নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা অপসারণের দাবী জানান এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি জানান।
ওই লংমার্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে দেয়। বিশ্ব মিডিয়াগুলোতে ফলাও করে খবর প্রচার হওয়ায় ভাসানী হয়ে ওঠেন আফ্রো-এশিয়ার গণ মানুষের নেতা। দীর্ঘ ৪৬ বছর পরও ঐতিহাসিক সেই লংমার্চের আবেদন বর্তমান বাস্তবতায় এখনো সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর মত একজন সত্যিকারের ত্যাগী, জনদরদী ও নিঃস্বার্থ জনেনেতা আজ দেশবাসীর কাছে বড়ই প্রয়োজন।